মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ আধুনিক জটিল জীবনবোধের প্রতিফলন। এই উপন্যাসের আরম্ভ মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন দিয়ে। নায়কের সঙ্গে গ্রাম্যজীবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে এবং নানা রহস্যকে উন্মোচন করি। যার মূল উপকরণ বলা যেতেই পারে কিছুটা মৃত্যু এবং ব্যাধিও বটেই। শশী ডাক্তার গাওদিয়া গ্ৰামের সমস্তটা জুড়ে রয়েছে। উপন্যাসে আস্তে আস্তে উন্মোচন হয় শশীর সঙ্গে তার পিতার সম্পর্ক আগাগোড়াই বিরোধ সংঘাতের। শশীর আরেকটি রূপ প্রকাশিত হয় কুসুমের সঙ্গে তার সম্পর্কের মধ্য দিয়ে। শশীর সঙ্গ কামনায় বারবার কুসুম হাজির হয়েছে শশীর জানলায়। কিন্তু প্রেমের প্রতিদান না পেয়ে যখন তার মন শমিত হয়েছে শশী তার হাতে ধরে বলেছে আমার সঙ্গে চলে যাবে বউ কুসুম রাজি হয়নি। একদিন হয়তো যেত কিন্তু আজ নয়। কেন এর উত্তরে তাকে স্পষ্ট বলতে দেখা যায়।- “কুসুম স্বীকার করিয়া বলিল, তা যেতাম ছোটবাবু। স্পষ্ট করে ডাকা দূরে থাক ইশারা করে ডাকলেও ছুটে যেতাম। চিরদিন কি এরকম যাওয়া যায়? মানুষ কি লোহার গড়া, চিরকাল একরকম থাকবে। বদলাবে না? বলতে বসেছি যখন কড়া করেই বলি, আজ হাত ধরে টানলেও আমি যাব না।” এরকম টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে তাদের গল্প।
তার পাশাপাশি স্থান পেয়েছে বিন্দু-নন্দলাল, যামিনি-সেনদিদি, যাদব-পাগলদিদি, কুমুদ-মতি এবং জয়া-বনবিহারী উপাখ্যানও। গাঁয়ের মতির সঙ্গে শহুরে কুমুদের সংসারের গল্প। কুমুদকে বিয়ে করার পর তার জীবনের এক নতুন অধ্যায় খুলে যায়। তাদের হাত ধরেই জয়া-বনবিহারী চরিত্রের আনয়ন। মতি-কুমুদের পুরোনো দাম্পত্যের বিপরীতে জয়া-বনবিহারীর প্রেমহীন জীবনের রিক্ততা এঁকেছেন লেখক।
শুরুতে যেমন হারুঘোষের মৃত্যু দেখা যায়, ঠিক তেমনি মধ্যবর্তী জায়গায় যাদব ও পাগলদিদির মৃত্যু উপন্যাসকে নতুন মোড়ক দিয়েছে।সবশেষে, বলতে হয়- উপন্যাসে ‘পুতুলের’উপমা অনেকবার ব্যবহৃত হয়েছে। মানুষের জীবন কীভাবে পুতুল হয়ে যায় তা দেখা যায়। অনেক জটিলতা, দ্বন্দ্ব-প্রতিদ্বন্দ্ব নিয়ে উপন্যাস শেষ হয় এবং থেকে যায় এক অন্যরকম ভালোলাগা ও মনখারাপের রেশ। উপন্যাসপ্রেমিকদের জন্য যথাযথ এই উপন্যাস একবার পড়লে বারংবার পড়ার ইচ্ছে জাগবেই। এর রেশ অনেকদিনের…।