প্রিয় দেববাবু,
তোমার সাথে প্রথম দেখার দিনটি খুব মনে পড়ছে আজ দেববাবু। চুনিবাবুর সাথে এসেছিলে তুমি এই পতিতালয়ের অন্ধকারে পাপিষ্ঠার কাছে তার জীবনে আলোর রেখা হয়ে। তোমাকে সেই প্রথম দেখার ক্ষণটি আমি জীবনেও ভুলতে পারব না দেববাবু। তোমাকে দেখেই আমি বুঝেছিলাম তুমি আর পাঁচটা সাধারণ পুরুষের মত নও। তোমার সেই রুক্ষ রূপের তীব্র তেজে ঝলসে গিয়েছিল আমার চোখ। কিন্তু,তুমি আমাকে দেখে তীব্র ঘৃণায় চোখ ফিরিয়ে নিলে দেববাবু,আমি পতিতা বলে।
তোমার চোখের সেই তীব্র ঘৃণার দীপ্তি দেখেই কি আমার তোমার উপর কিরকম একটা মায়া,কিরকম যেন টান জন্মে গেল।জানিনা এটাকেই ভালোবাসা বলে কিনা।ভালোবাসার ব্যবসা করতে করতে আমি হয়তো সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমাকে,দেববাবু।
জানো দেববাবু,প্রথম জীবনে প্রেমের জন্যই একদিন ঘর ছেড়েছিলাম আমি। তারপর ভালোবাসার মানুষের সাথে একদিন লাগলো তুমুল ঝগড়া। তা’ও সামান্য একটা গহনা নিয়ে। সে কিছুতেই দিলে না, আমিও গেলাম রেগে। ভাবলাম,দূর ছাই চুলোয় যাক ভালোবাসা। যে সামান্য গহনা দিতে পারে না সে আবার ভালোবাসে নাকি?
তারপর, ভালোবাসার গ্রন্থি গেল আলগা হয়ে।মোহ-র বাঁধন গেল খুলে। ভাবলাম ভালোবাসা-টাসা সব মিথ্যে। ওসব শুধু থিয়েটারে আর নাটকেই হয়।তখন কি আর জানতাম সত্যিকারের ভালোবাসা কি জিনিস! এখন মনে হয় সামান্য মাথাব্যথাটুকু সারিয়ে তোলার জন্য এই তুচ্ছ প্রাণটা হাসতে হাসতে দিয়ে দিতে পারি দেববাবু।এই পোড়া ভালোবাসার দিব্যি।
সেদিন তোমাকে খুব কাছ থেকে দেখলাম দেববাবু, যেদিন তুমি মদ খেয়ে প্রলাপ বকতে বকতে ঘুমিয়ে পড়লে আমি নিঃশব্দে তোমার কাছে গিয়ে আঁচল দিয়ে মুছে দিলাম তোমার মুখে শিশিরের মত জমে থাকা স্বেদবিন্দু। প্রদীপের মৃদু আলোয় একভাবে তাকিয়ে থাকলাম তোমার সেই ঘুমন্ত মায়াবী মুখের দিকে। কতক্ষণ ঠিক মনে নেই। হঠাৎ মনে হল, তুমি তো আমার নও। তুমি পার্বতীর।দেহটাই শুধু পড়ে আছে আমার কাছে।
যাকে ভালোবাসি না,তার মুখে ভালোবাসার কথা শুনতে হয়তো ভালো লাগবে না তোমার। মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে তোমার প্রলাপ শুনে আমার মনে হয়েছে তোমার জীবন নষ্ট হওয়ার দোষ পার্বতীর নয়।দোষ তোমার নিজের। আসলে তোমরা পুরুষেরা মেয়েদের কোনোদিন বুঝতেই চাও না। শুধু শুধু অপরাধের ভার তাদের কাঁধে চাপিয়ে দাও। আর তারা বিনা প্রতিবাদে নিঃশব্দে তা সারাজীবন বয়ে নিয়ে চলে।
যাক সেসব কথা, তোমার শরীর এখন কেমন আছে বলো? আমি তো তোমার সেবাদাসী হয়ে তোমারই সাথে যেতে চেয়েছিলাম। তুমিই নিলে না সাথে। তোমার শরীরের কথা ভেবে আমার মনটা সবসময় উদ্বেগে আকুল হয়ে থাকে। অশুভ চিন্তা হয়। ভগবানের কাছে সবসময় প্রার্থনা করি তোমার শরীরের জন্য। শরীরের যত্ন নিও। অন্তত তোমার পার্বতীর কথা ভেবে।
পুনশ্চঃ,তোমার পাঠানো দু’হাজার টাকা আমি পেয়েছি।
ইতি,তোমার বৌ