“অন্য বসন্ত” নিয়ে কিছু কথা…

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের লেখা ‘অন্য বসন্ত’ উপন্যাসটিকে যে ছবি আকারে দেখা যাবে তা হয়তো অনেকেই ভাবেনি। যদিও বড় পর্দায় মুক্তি পায়নি ছবিটি তবে টিভিতে অনেক মানুষই দেখেছে। অসাধারণ কিছু গান রয়েছে এই ছবিতে। তুলনাহীন এই ছবির পরিচালক অদিতি রায়।

গল্পে আমরা দেখি উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কেরিয়ার সচেতন, সুপাত্র শৌনকের সঙ্গে তন্নিষ্ঠার বিয়ে যখন ঠিকঠাক, তখনই তন্মিষ্ঠার জীবনে আসে অভিমন্যু। শৌনকের একবারে উল্টো চরিত্র অভিমন্যুর জীবনে কোনো অ্যাম্বিশন নেই, আছে কিছু স্বপ্ন। পেশায় সে পারফিউম বিক্রেতা, নিজেই বানায়। পেশাটা ওর শখও বটে।
অপরদিকে তন্নিষ্ঠার বাবা, শুভেন্দুকে মাত্র তিপ্পান্ন বছর বয়সে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে কোম্পানি। শুভেন্দুর বরাবরই নাটক নিয়ে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু বর্তমানে নাটকের মধ্যেও বাণিজ্য মানসিকতার ছায়া পড়েছে। তাই শুভেন্দুর নাটকে ফিরতেও ইচ্ছে করছে না। শুভেন্দু যেন এক অন্ধকার নদীতে জীবন কাটাচ্ছে যার দুই পাড়েই রয়েছে আলো। স্রোত শুভেন্দুকে কোনদিকে টেনে নিয়ে যাবে তারই একটি ছবি এঁকেছেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য।

অদিতি রায় তাঁর ‘অন্য বসন্ত’ ছবির জন্য বেশ কিছু প্রতিভাবান অভিনেতা, অভিনেত্রী বেছে নেন। ‘তন্নিষ্ঠা’ চরিত্রটির জন্য অমৃতা চ্যাটার্জীকে নেন এবং কৌশিক রায়কে নেন ‘অভিমন্যু’র চরিত্রে। তন্নিষ্ঠার বাবার চরিত্রটি দেন কমলেশ্বর মুখার্জীকে। ছবিতে এদের কাউকে একবারের জন্যও মনে হয়নি অভিনয় করেছেন, এতটাই চোখ জুড়ানো ছিল প্রত্যেকের অভিনয়।

সিনেমার শুরুতে এক বন্ধুর বিয়েতে আলাপ অভিমন্যু আর তন্নিষ্ঠার। বাসর জাগার সময় একটা বন্ধুত্ব শুরু হয় ওদের। বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়া তন্নিষ্ঠার একটা ভালো লাগার জায়গা তৈরি হয় অ্যাম্বিশনহীন ছেলে অভিমন্যুর প্রতি। অভিমন্যু কেমেস্ট্রিতে এম.এসসি। পারফিউম বানায় সাথে সাইন্স ক্লাবের মেম্বার। ওর জীবনে আকাশ ছোঁয়ার কোনো স্বপ্ন নেই। অভিমন্যু খুব অল্পেই খুশি থাকতে জানে।
ছবিতে তন্নিষ্ঠার বাবা শুভেন্দু এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সে বরাবরই শিল্পীগোষ্ঠীর একজন। চাকরি থেকে ববরখাস্ত হয়ে সে নাটক করার কথা ভাবলেও তা হয় না । বিয়ের ব্যাপারে মেয়ে তন্নিকে ছবির শেষ লগ্নে শুভেন্দু বলে, “ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু কোরো না।”
ছবির একেবারে শেষে আমরা দেখি, হাতে হাত রেখে অভিমন্যু আর তন্নিষ্ঠা হেঁটে যাচ্ছে অন্ধকারের বুক বেয়ে। হয়তো আলোর সন্ধানে…

অদিতি রায় এর ‘অন্য বসন্ত’ ছবিটি আমার অন্যতম প্রিয় ছবি হয়ে থাকবে। একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ আছে ছবিটিতে। যা অন্যরকমের এক বসন্তের গন্ধ। যারা বলে বাংলায় ভালো ছবি হয়না, তাদের এই ছবিটি একবারের জন্যও দেখা উচিৎ। সুচিত্রা ভট্টাচার্য যে উপন্যাসটি এঁকেছিলেন তাকেই যেন সুন্দর করে বাঁধিয়ে প্রদর্শনীতে তুলেছেন অদিতি রায়।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *