ক্যান্ডি
কাস্ট- রনিত রয়, রিচা চড্ডা, রিদ্ধি কুমার, মনু ঋষি চড্ডা, নকুল রোশন সহদেব, গোপাল দত্ত
ডিরেক্টর- আশীষ আর. শুক্লা
রেটিং: ৩.৫/৫
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির জনপ্রিয়তার পেছনে দর্শকদের কন্টেন্ট নির্ভর ফিল্ম বা ওয়েব সিরিজের প্রতি আকর্ষণ মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে। সাসপেন্স থ্রিলার বা মার্ডার মিস্ট্রি অবশ্যই সেই আগ্রহ তালিকায় বেশ উপরের দিকে থাকবে তা আর আলাদা করে বলার অবকাশ রাখেনা। সেই চাহিদা মাথায় রেখেই বিগত কয়েক বছরে অসুর, দ্য রায়কর কেস এর মতো ওয়েব সিরিজ তৈরি হয়েছে যা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। ‘ক্যান্ডি’ সেই তালিকায় নবতম সংযোজন।
কাহিনীর সূত্রপাত রুদ্রকুণ্ড নামক ছবির মত সুন্দর এক পাহাড়ি শহরের নামকরা স্কুলের ছাত্র হত্যাকে কেন্দ্র করে। কেউ তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে ঘন জঙ্গলে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর কথায় তাকে ‘মাসান’ মেরেছে। কে এই মাসান? কোনো ভয়ঙ্কর এক অন্ধকারের জীব, আধিভৌতিক কিছু, মানুষ নাকী অন্য কিছু? শুধু ছাত্র মৃত্যুই নয়, এই স্কুল ড্রাগ চক্রের সাথে ছাত্রদের সরাসরি যুক্ত থাকার কারণেও বিখ্যাত। মনে পড়ে ছোটবেলায় দোকানে সাজানো হরেক রকম লাল, নীল, সবুজ ক্যান্ডির প্রতি আমাদের অমোঘ আকর্ষণের কথা? আরবিএস এর ছাত্ররাও সেই লাল, সবুজ ক্যান্ডির আকর্ষণ এড়াতে পারেনা কারণ তাতে মেশানো রয়েছে এমন এক ড্রাগ যা মানুষকে বিচরণ করায় অন্য এক মায়াময় জগতে। একদিকে ড্রাগ চক্র অন্য দিকে গভীর জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা কোনো এক পৌরাণিক সত্তা মাসান, এদের হাত থেকে নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের কিভাবে রক্ষা করবেন শিক্ষক জয়ন্ত পারেখ এবং ডিএসপি রত্না, সেই ইঁদুর বেড়াল খেলাই ক্যান্ডির মূল উপজীব্য।
গতবছরের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হওয়া অসুর ভারতীয় বিনোদন জগতকে নিঃসন্দেহে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। ক্যান্ডির কন্টেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের ভিত্তিতে অসুরের সাথে বেশ কিছু অংশে মিল খুঁজে পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আট পর্বে সমাপ্ত ওয়েব সিরিজটির প্রথম কয়েকটি এপিসোড একটু ফ্ল্যাট মনে হতে পারে। তবে কাহিনী যতো এগিয়েছে শেষের পর্বগুলিতে পেঁয়াজের খোসার মতো একের পর এক রহস্য যখন জট ছাড়িয়েছে তখন পর্দা থেকে চোখ সরবেনা, এটুকু গ্যারান্টি দিতে পারি। ‘মাসান’ এর প্রকৃত পরিচয় জানার কৌতুহল আপনাকে টিভির পর্দায় আটকে রাখবে।
অভিনেতা অভিনেত্রীরা প্রত্যেকেই নিজের ভূমিকায় যথাযথ। রনিত রয় কে অনেকদিন পর পেয়ে ভালো লাগে। রিচা চড্ডা নিঃসন্দেহে একজন বলিষ্ঠ অভিনেত্রী, তবে পুলিশের পোশাকে কিছু দৃশ্যে ওনার কাছে এক্সপেক্টেশন আরও বেশি ছিল। পার্শ্ব অভিনেতারা যথাযথ। আলাদা করে বলার দাবি রাখেন ভায়ু রানাওয়াতের চরিত্রে নকুল রোশন সহদেব। চরিত্রের প্রতিটি লেয়ার অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি, আপনি চাইলেও একজন ভিলেনকে ঘৃণা করতে পারবেন না। ভিলেন নাকি অ্যান্টি হিরো, সেই প্রশ্নও রেখে যায় ভায়ু।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং সিনেমাটোগ্রাফি মনোগ্রাহী। পৌরাণিক কাহিনীর সাথে বর্তমানের মিশেল এই কাহিনীকে অনেকের থেকে আলাদা করে দেয়। আমার ব্যক্তিগতভাবে যেটা সবথেকে ভালো লেগেছে তা হলো, সিজন ওয়ানের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এই সিজনেই দেওয়া হয়েছে, তার জন্যে সিজন টু এর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তবে সিজন টু আসবে বলেই মনে হয়, অন্তত সিজন ওয়ানের শেষে তেমনটাই বার্তা দেওয়া হয়।
তবে আর দেরি কিসের? ভূট অরিজিন্যালস এ গিয়ে এবার দেখে ফেলুন- ক্যান্ডি।