বাঙালির ‘খেলা’ আর ‘রাজনীতি’র জগতে উৎসাহ ও আগ্ৰহটা বরাবর খুব বেশি।
আসলে বাঙালি খেলা, বিশেষত ফুটবলের ব্যাপারে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে বসে। ফুটবল আবেগ আমাদের রক্তে মিশে আছে।
ফুটবল আর রাজনীতি ছাড়া বাঙালিকে কেউ বাঙালি বলে চিনবেনা, এরকম একটা ট্যাগলাইনের জন্য গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে বাঙালি জাতি খুব কাছের।
মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গল হোক অথবা ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড থেকে বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদ এবং লিভারপুল-ই হোক, বাঙালিকে প্রতিটি জায়গায় খুঁজে পাওয়া যাবেই।
এটাই পরিচয় আমাদের…
এখন রাশিয়া বিশ্বকাপ চলছে। যথারীতি, বাঙালির ফুটবল উন্মাদনা তুঙ্গে, সাথে সাথে ম্যাচ আপডেট বা ম্যাচের বিশ্লেষণে তর্ক চলতে থাকে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিসের বস-এর রুম ও রাত্রের ডিনার টেবিল পর্যন্ত। স্কুলের ক্লাসরুম বা স্টাফ রুমও বাদ যায়না, চারিদিকে শুধু ফুটবল আর ফুটবল এবং ‘বিশ্বকাপ’।
তবুও কিছু প্রিয় এবং হট ফেভারিট টিমের তালিকায় নাম লিখিয়েছে অনেকে।
যেমন— ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন, জার্মানি, পোর্তুগাল, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম।
এদের টক্কর দেখার মজাটাই আলাদা। আসলে এইসব দলের সাথে অনেকের আবেগ জড়িয়ে আছে, কারণ তাদের প্রিয় দল এবং প্রিয় প্লেয়ার জার্সি গায়ে দিয়ে যুদ্ধে নামবে।
হ্যাঁ, এটা একরকম যুদ্ধই, সেরার সাথে সেরার, ডিফেন্সের সাথে ডিফেন্সের, স্কিলের সাথে স্কিলের এবং নার্ভের সাথে নার্ভের! প্রতিটি দল এখানে তাদের ২০০ শতাংশ উজাড় করে দেয় নিজেদের সেরাটা মেলে ধরার জন্য। কেনই বা দেবেনা, ৪ বছর অপেক্ষার পর আসে স্বপ্নের দেশে নিজেদেরকে মেলে ধরবার সুযোগ।
সুতরাং, আবেগের সাথে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও বিন্যাস বেশ নিপুণ ভাবে জড়িয়ে থাকে এই খেলায়।
এতোটাই উন্মাদনা বাঙালিকে গ্ৰাস করে অনেকেই বিশ্বকাপের আগে নিজের প্রিয় দলের রঙে বাড়ি রাঙিয়ে দেন।
নীল-সাদা থেকে শুরু করে হলুদ-নীল ও সবুজ-লালে চারিদিকে মেতে ওঠে।
কে থাকেনা দলগুলিতে! মেসি, রোনাল্ডো, মুলার, নেইমার, র্যামোস, সালাহ, ওজিল থেকে শুরু করে সুয়ারেজ, ইনিয়েস্তা এবং আরো বিশ্বের তাবড় তাবড় প্লেয়ার।
এইসব প্লেয়ার এখনকার বাদশা, পুরাতন প্লেয়ারদের সাথে আবেগ জড়িয়ে থাকে বলেই অনেকে তাদের পছন্দ মতো দলকে সমর্থন করেন।
ব্রাজিল— যেখানে পেলে, রবার্তো কার্লোস এবং রোনাল্ডিনহো থেকে কাকা একসময় রাজত্ব করেছেন।
সেই দলের বাদশা এখন নেইমার, ডি সিলভা আরো অনেকে।
আর্জেন্টিনা— অতি পছন্দের দল অনেকের। ব্যাক্তিগত ভাবে আমারও পছন্দের তালিকায় আছে। যে দলে একসময় ডিয়েগো মারাদোনা, অস্কার রুজেরী, রবার্তো সেনসিনী, সার্জিয়ো বাতিস্তার মত প্লেয়ার রাজত্ব করেছে, এখন সেই দলে লিওনেল মেসি, ডি মারিয়া, মার্কোস রোজো, গ্যাব্রিয়েল, লুকাসের মতো প্লেয়াররা মাঠ দাপিয়ে বেড়াবে।
স্পেন— স্পেনের ফুটবল জগৎ একসময় আলফ্রেডো ডেস্টিফানো, রাউল-এর মতো অভিজ্ঞ ফুটবল খেলোয়াড়দের দ্বারা গৌরবময় ছিল। এখন লুইস সুয়ারেজ, জাভি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ডেভিড ভিলার মতো উজ্জ্বল খেলোয়াড় দেশের নাম উজ্জ্বল করছেন।
জার্মানি— ফুটবলের প্রতি এই দলের দৃঢ় মনোভাবের প্রেমে পড়েছেন সবাই। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, গার্ড মুলার, কার্ল হেইনজ রুমেনিগের মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে টনি ক্রুইস, মেসুত ওজিল, ম্যানুয়াল ন্যুয়ার জার্মানির ঐতিহ্য বহনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।
পর্তুগাল— ইউসেবিও, লুইস ফিগো, ফার্নান্দো পেইরোটিওর মতো ফুটবল খেলোয়াড়রা পর্তুগালের ফুটবল সংস্কৃতিকে বহন করার কাণ্ডারী হলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো, পেপের মতো ফুটবলাররা। বর্তমানে এই দলের প্রধান এবং বহুচর্চিত আকর্ষণ রোনাল্ডো ওরফে CR7-এর গৌরব বিশেষ দ্রষ্টব্য।
রাশিয়া— যে দলে লেভ ইয়াসিন, ভ্যালেন্টাইন ইভামভ, আনড্রেই আরসাভিন নিজেদের বিশেষ প্রতিভা দ্বারা ফুটবল জগতকে মাতিয়ে রেখেছিলেন, এখন সেই দলের গৌরবকে বিশ্বদরবারে উজ্জ্বলতর করে তুলেছেন আইগর আকিনফিভ, পাভেল মোগি লেভেটস্, সার্গেই ইগ্নাসেভিচ
নামক ফুটবল তারকারা, এবং অনেকের প্রিয় হয়ে উঠেছে এই দল।
ইংল্যান্ড— ইংল্যান্ডের ফুটবল প্রতিভা বললেই প্রথমে যেই নামটি উঠে আসে, তা হলো ডেভিড বেকহ্যাম। ফুটবল জগতে ইংল্যান্ড অন্যতম জনপ্রিয় দলে পরিণত হয়েছে ববি চার্লটন, ববি মোরের মতো উৎকৃষ্ট খেলোয়াড়দের ফুটবলের প্রতি করা অঙ্গীকারে। বর্তমানে হ্যারি কেন, রাহিম স্টারলিং, ডেল আলী প্রভৃতি প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা তাদের পরিশ্রমের দ্বারা ফুটবল জগতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন।
বেলজিয়াম— বহু ফুটবল প্রেমিকের মনে জায়গা করে নিয়েছে বেলজিয়ান ফুটবল তারকারাও। যেখানে পল ভ্যান হিমস্ট, জ্যান সিউলেমানস, জেফ জুরিয়ান্স একসময় ছিলেন বেলজিয়াম ফুটবলের মধ্যমণি, সেখানে ভিনসেন্ট কম্পানি, এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু নিজেদের দক্ষতার দ্বারা বহু ফুটবল প্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলছেন।
এতসব তারকা ফুটবল প্লেয়ার পুরো বিশ্ব কাঁপালেও, বাঙালি কিন্তু চুনি গোস্বামী, সুব্রত ভট্টাচার্য্য, সুভাষ ভৌমিক, শিবাজী ব্যানার্জী, সমর ব্যানার্জী এদের কখনো ভুলবে না।
তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে বাংলার ফুটবল ইতিহাসে লেখা থাকবে।