ছমছমে রাত

তারিখ টা ছিল ১৮ জানুয়ারি । ভীষণ কুয়াশা আর ঠান্ডা । আমরা ছয় বন্ধু মিলে শীতের আমেজ নিতে ঘুরতে গিয়েছিলাম ভুটান এ । সকাল আটটা নাগাদ আমরা নিজেদের ভাড়ার গাড়ি করে বেরিয়ে পরি । পৌছাই সেখানে এগারোটার সময় । পোছে সকালে টিফিন সেরে হোটেল খুঁজতে শুরু করে দি ।
আমরা খুুব তারাতারি একটা হোটেল পেয়েও যাই । তারপর ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাওয়া সেরে আবার সবাই রুমে ফিরে রেস্ট নিিয়ে বিকালে ঘুরতে বেরিয়ে পরি ছজন মিলেই । সেই দিন টা ও রাতটা ভালোই কেেটেছিল সবার । ঘটনা তো ঘটেছিল পরের দিন ।

হোটেল এর কিছু অসুবিধের জন্য সেই হোটেল ছেড়ে আমার নতুন হোটেলে উঠি । তারপর সারাদিন ঘোরাঘুরি করে বিকেলে ঘরে ফিরেই ফ্রেস হয়ে আবার আবার বাজারের উদ্দেশে বেরিয়ে পরি আমি, রণজয়, রিসিতা, আর অমরেশ । খুশি সারাদিন ঘুরে ক্লান্ত হয়ে পড়ে তাই আর বের হয়নি ও । ওর জন্য বিকিও থেকে গেলো ঘরেই । আমরা ফিরলাম রাত নয়টা নাগাদ ।

আমরা ফিরেই রাতের খাওয়ারের জন্য অর্ডার দিতে যাই আর তখনই দেখি সেই হোটেলে থাকা সমস্ত কর্মচারী দের এক অদ্ভুত ব্যবহার । আমরা এই অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ জানতে চেলে তারা আরো বেশি অদ্ভুত হয়ে ওঠে । আমরা এই বিষয়ে যখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি তখন খুশি জানায় আমরা যখন বাজারে গিয়েছি তখন ও আর বিকি ঘরে থাকা অবস্থায় একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পারে বিকি সাথে সাথে দরজা খুললে দেখে একটা বাচ্চা ছুটে পালায় , অনেকবার ডাকলেও আর বাচ্চাটি ফিরে দেখে না ।পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম গোটা হোটেলেকোথাও কোনো বাচ্চা ছিলোই না ।

এই শুনে আমি সত্যি খুব ঘাবড় যাই আর হাউমাউ করে কেঁদে ফেলি । ভেতর থেকে ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ি আমি । সকলে মিলে অনেক বুঝিয়ে আমাকে সামলে নেয় ।
আমরা সবাই রুমে চলে আসি । একটু পর খাওয়ার চলে আসে । যিনি খাওয়ার এনেছে তাকে এইসব বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে সে এরিয়ে যায়, শুধু এইটুকু বলে ৯:৩০ এর মধ্যে খাওয়ার শেষ করে আমরা যেন শুয়ে পরি । আর ভেতরে যেন কোনো আওয়াজ না করি আর বাইরে থেকে যতই কেউ ডাকুক বা সাহায্য চাক আমরা যেনো কোনো রকম সারা না দেই ।

এই শুনে এবার সকলেই একটু ঘাবড়ে যাই । লোকটাকে হাজার জোরাজুরি করলেও কিছু বলে নি । তরিঘরি করে চলে যায় । আমরা আর কেউ ঠিক ঠাক মত খেতে পারলাম না । ঠিক করলাম আজ রাতে আমরা সবাই এক ঘরেই থাকব ।

সবাই মিলে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎ দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয়েই যাচ্ছে , যেন কেউ ডাকছে  । সেই কর্মচারীর কথা মত আমরা চুপ করে থাকি । কিছুক্ষণ পরে থেমে যায় দরজা । আমরা হাওয়া ভেবে আবার গল্প করতে শুরু করি । কিন্তু আবার সেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুরু হয় আমরা চুপ করে অনেকক্ষণ বসে থাকলে আওয়াজ টা আবার থেমে যায় । আমরা এবার সত্যি অনেক ভয় পাই । এবার দরজার সামনে যেনো অনেকেই হাঁটছে আর সাথে একটা বাচ্চার কান্না শুনতে পারছি । আবার দরজায় সেই ঠকঠক । এবার আমরা আর চুপ করে বসে থাকলাম না , সকলেই দেখার জন্য উত্সুক ছিলাম ।

সাহস করে দরজা টা এবার খুলেই ফেললাম । প্রথম বিকি দরজা খুলেছে । তার পেছনে ছিল রণজয় ও অমরেশ আর পেছনে আমি, রিসিতা ও খুশি । হঠাৎ সামনে দিয়ে একটা স্ট্রেচার চলে যায় , যার আগে পিছে কেউ ছিল না । খুশি জ্ঞান হারালো আমার ও প্রায় একি অবস্থা । বিকি সেই মুহূর্তে যখন দরজা বন্ধ করতে যাবে সামনে দিয়ে তিন জন মানুষ চলে যায়, যার মধ্যে একটি বাচ্চা ছিলো । ওরা কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু বলতে পারে নি , আমরা দরজায় খিল দিয়ে দিয়েছি ততক্ষণে ।

খুশির তখনো জ্ঞান ফেরে নি, আমিও কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না । ওরা সবাই মিলে খুশির জ্ঞান ফেরালেও ওর ভেতরের ভয় কিছু তেই যাচ্ছিল না । আমিও গুম হয়ে বসে আছি ।

তখনো রাত পেরোতে আর ঘন্টা তিন এক ছিলো । কোনো রকমে রাত পেরোতেই আমরা ভোর বেলাতেই বেরিয়ে পরি । তারপর একটু সকাল হলে হোটেল এর আসে পাশের লোকের থেকে এই হোটেল সম্পর্কে জানতে চেলে তারা জানায় বছর দশ আগে এখানে একটি পরিবার আসে, মা বাবা ও তাদের সন্তান । হঠাৎ করেই বাচ্চাটি অসুস্থ হয়ে পরে, ভীষণ পেট ব্যথায় ছটফট করতে করতে মারা কারণ ওর বাবা একটু কাজে বাইরে যায় আর তাই ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যেতে দেরি হয় ।

বাচ্চার মৃত্যু মা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে । বাবা যখন ফেরে তখন সব শেষ । ঘুরতে এসে স্ত্রী ও সন্তান এর মৃত্যু কাম্য ছিলো না , তাই সহ্য করতে না পেরে বাবাও আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । সেই দশ বছর থেকে ওরা এই হোটেল এই থেকে গিয়েছে । তবে কারো ক্ষতি তাঁর আজ অবধি কারো করে নি ।

সব শুনে আমাদের সবার খুব কষ্ট হল তাই আমরা আবার একবার ওই হোটেল এর সামনে যাই । আর উপরের দিকে তাকাতেই দেখি অস্বাভাবিক সুন্দর একটি বাচ্চা আমাদের বিদায় দিচ্ছে আর সাথে আবার আসার অনুরোধ করছে । হয়তো আগের দিন রাতে ভয় না পেলে ওদের থেকেই সবটুকু শুনতে পারতাম ।

Facebook Comments Box
Sudipta Roy Sarkar

Foodie, love to travel. Work with dedication. Believe in hard work.

Recent Posts

Kolkata to Witness B Praak’s Mesmerizing Performance at ‘Kolkata Odyssey’ on October 20th

The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…

5 months ago

Celebrating Friendship and Togetherness with Pujo Pujo Gondho

In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…

5 months ago

Frustration Turned To Calmness, Thanks To These Websites

The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…

5 months ago

SVF Music Unveils April Edition of “Banglar Gaan Indies”

Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…

10 months ago

Mimi Chakraborty and Nabila to Star Alongside Shakib Khan in ‘Toofan’

Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…

11 months ago

Why Does a Rich Chicago Law Firm Keep Suing Indian Tribes?

This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…

1 year ago