তখন আমি কলেজে পড়ি। পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র। অশরীরীকে সিগারেটের ধোঁয়ায় চাপিয়ে ফুঃ! করে উড়িয়ে দেওয়া ধাতে না থাকলেও, স্বভাবে আত্মস্থ করতে হয়েছিল। মনে মনে বিশ্বাস করলেও বন্ধুদের সামনে মুখ খোলাটা, অনেকটা ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তানের কাছে ভারতের হেরে যাওয়ার মতো অপমান ও লজ্জার বিষয় ছিল। তবে টুকটাক জ্যোতিষী, ভূত-প্রেতিনী তত্ত্ব পাড়াতুতো বন্ধু ভাই দের বলতাম।তেমনই এক বন্ধু ছিল আমার সত্যম। আমার চেয়ে ২বছরের ছোটো। আর্টস নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল সেবছর। কিন্তু হয়নি।
এবার ঘটনায় যাই। অনেকক্ষণ গৌরচন্দ্রিকা হলো।
মাঝারি গড়ন, চুলে কবে শেষ চিরুনি দিয়েছিল আমি তো দূর সত্যম নিজেও বলতে পারবেনা। কাজেও মন ছিলোনা, বাড়ির চাপে দুটো টিউশনি করতো, অন্যদের চোখে একটু পাগল গোছের।
১৬ই জুন,২০১৬ সাল। সন্ধ্যে ৬:৩০এ তার সাথে দেখা হয়েছিল BSNL অফিসের কাছে। খোঁজ খবর আদানপ্রদান হলো, সিগারেটের কাউন্টার এগিয়ে দিতেই। ও প্রত্যাখান করে বললো,”মিশমি বারণ করেছে”।
আমি ইয়ার্কি মেরে হাসলাম বললাম, “উন্নতমানের গাঁজা খাচ্ছিস নাকি না প্রেমে ট্রেমে পড়লি?”
সত্যম চুপ।
সিগারেটটা জ্বালিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “এই মিশমি টা কে রে, আগে তো শুনিনি”।
এড়িয়ে যাওয়ার ছলে বললো, ” আমি বাড়িতে পড়ায় ওকে”।
আমি মুচকি হেসে, সিগারেটে কয়েক টান দিয়ে বললাম, “ওওওওও, ভালো, ভালো। খাসনা। সিগারেট স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।”
সত্যম বললো, “বাড়িতে আসিস, যেদিন আসবি রাত্রে থাকিস। ওর সাথে আলাপ করিয়ে দেবো”।
“নিশ্চয়” বলে বিদায় নিলাম।
ওই ঘটনার প্রায় ৮দিন পর আমার ফোনে ফোন করলো সত্যম।
–”কি রে, সত্যম বলছি। কেমন আছিস?আমাদের বাড়ি আসবি বলেছিলি, কবে আসবি?”
–”দাঁড়া, দাঁড়া। দম নে। কি ব্যাপার বলতো কোনো খবর আছে?”
–প্রেমে পড়েছি ভাই।
–কার সাথে? নিয়ে এই একদিন স্কোয়ার ফিল্ডে।
–না। সম্ভব নয়। ও পারবেনা। তুই বাড়িতে এলেই আলাপ করাতে পারবো। সময় বুঝে আসিস একদিন। আসার আগে ফোন করিস। আর হ্যাঁ, আসবি কি? মানে তোর আসার ইচ্ছে আছে?তাহলে ওকে বলবো তোর কথা”।
– অবশ্যই বলে ফোন রেখে দিলাম বটে কিন্তু খানিক আশ্চর্যও হলাম। মেয়েটা কে? এমন অদ্ভুত আচরণ কেন? স্কোয়ার ফিল্ডে না যাওয়ার কি আছে এমন!
সত্যমের ফোনের ৩দিন পরে আমি ওকে ফোন করে জানালাম যে, আজ তার বাড়ি যাবো, রাত্রে থাকবো এবং এও জানালাম যে তার নব প্রেমিকার সাথে পরিচয়ও করবো। খুব অস্থির লাগছিলো।
বেশ মনে আছে সেদিন ছিল ২৭শে জুন,২০১৬ সাল। রাত্রের খাবার বাড়িতে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম। সন্ধ্যে বেলা বৃষ্টি হয়েছে। মেঘ আবারও নতুন করে সাজছে। আমার বাড়ি সুতির মাঠ(পূর্ব) থেকে সত্যমের বাড়ি বারো বিঘা কবরস্থান পেরিয়ে, ড:চোঙদার এর গলি অব্দি রাস্তার দূরত্ব বেশি নয়। তবে সুতির মাঠের রাস্তা অলিগলি অন্ধকারে মোড়া। আর বৃষ্টি হলে তো কথায় নেই।
সত্যমের রহস্যময়ী প্রেমিকাকে দেখার প্রবল ইচ্ছেটাও মাঠে মারা যাবে। ঘড়িতে রাত্রি ৯:৪৫।আমি বেরোলাম। এক পশলা হয়েছে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল। একটা বন্ধ মুদিখানার ধাপিতে একটা কুকুরকে গা ঝাড়া দিতে দেখা গেল। পথে টর্চ হাতে কতগুলো কাজ ফেরৎ সাইকেলবাহী দেখতে পেলাম। হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম কি কি কথা বলবো সত্যমকে আর তার প্রেমিকা মিশমিকে। “হঠাৎ চিন্তা” ক্লাবের কাছাকাছি এসে একটা সিগারেট জ্বালালাম। চারমাথা রাস্তাটার কাছে একটা মন্দির আছে। তার ঠিক পিছনে বারো বিঘা কবরস্থান। জীবনে অত বড়ো কবরখানা আমি সুতির মাঠ যাওয়ার আগে দেখিনি। সে অনেকেই দেখেনি। ভেতরে ঢোকারও অভিজ্ঞতা আছে আমার। সে পরে বলা যাবে।
অন্ধকারাচ্ছন্ন কবরস্থানে গাঢ়ত্ব যেন একটু বেশি ওই জায়গায়। বুকের কাছে চিনচিন করে উঠলো, পালস রেট বেড়ে গেল। চোখ ফিরিয়ে সিগারেট টানা শুরু করলাম। এক্সিস ব্যাঙ্ক এর রাস্তা পেরিয়ে উল্টো দিকে গলিতে ঢুকলাম। মনে হলো কখন যাবো সত্যমের কাছে। ২মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম ওর বাড়ি। ওর ঘরে নিয়ে গেল।সত্যমের কাছে জানলাম ওর বাবা মা অফিসের কাজে বাইরে। তার মানে আজ আমি আর সত্যম। তার প্রেমিকা নিশ্চয় বাড়ি চলে যাবে।আবার থাকতেও পারে যদি তার প্রেমিক আশ্বাস দেয়। সত্যমকে জিজ্ঞেস করতে সে বললো,”আমি জানিনা রে, ওর যা মনে হয় ও তাই করবে। আমার কোনো কথা খাটেনা।”
–”মানে? তুই কি বলছিস! আগে কোনোদিন থেকেছে? তোর বাবা-মা কিছু বলেনা?”
– “দেখতে পাবে তারপর তো কিছু বলবে।দেখতেই পায়না ওকে। আসে, পড়ে, গল্প করে আমার সাথে, চলে যায়। কোনোদিন আমাকে ঘুম পাড়িয়ে চলে যায়।” বলে সত্যম সিগারেট দিলো।
মিথ্যে বলবোনা। এসব শুনে আমার ভয়ের চেয়ে বিপদের আশঙ্কা বেশি হচ্ছিলো। কিছু একটা গন্ডগোল আছে।
–”মিশমি বলেছে আজ সময়ের কিছুক্ষন আগেই
আসবে। কটা বাজলো? ঘরে ঘড়ি থাকতেও আমাকে জিজ্ঞেস করলো সত্যম।
–১০:১৬। আসুক আসুক। তুই তো তোর প্রেমিকাকে অপ্সরার পর্যায়ে নিয়ে গেছিস ভাই।এখন থেকেই বউভক্ত হয়ে গেছিস। দেখি সেই মানবীকে।
সিগারেটটা ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
হঠাৎ কেউ যেন সত্যমকে ডাকলো। ওহ! সে কি মিষ্টি গলা। “সত্যম দা! ও সত্যম দা! শুনছো, ঘরে আছো?
এত সুন্দর করে যে ডাকতে পারে তার প্রেমে পড়ে সত্যম কোনো ভুল করেনি, ভাবলাম আমি।
আমি অবাক হয়ে শুনছিলাম। কিছুক্ষণ পরে একটা নীল ডায়েরি হাতে, ঘরে প্রবেশ করলো বছর সতেরো-আঠারোর একটি মেয়ে। পরনে ময়ূরপঙ্খী রঙের একটা সালোয়ার কামিজ।আমার পছন্দের পোশাক, পছন্দের রং। কোথায় যেন দেখেছি! চুল গুলো বেশ বড়ো কিন্তু রুক্ষ, সামনের দিকে নেমে মুখশ্রী ঢেকে দিয়েছে।শরীর, স্বাস্থ্য আহামরি ভালো নয়, আবার খুব রোগা পাতলাও নয়।
আমি কৌতুহলবশত মুখ দেখার চেষ্টা করলাম।পারলামনা। আমার প্রচেষ্টা অনিচ্ছাকৃতভাবে কেশরাশি ঢাকা না পড়লে নিশ্চয় সফল হতো।কিন্তু খটকা লাগলো, ইচ্ছাকৃত এলোকেশী লুকায়েছে চন্দ্রবদন!
আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছিলাম। তার গা থেকে মাটির গন্ধ!মানে মাটি ভিজলে যে সোঁদা একটা গন্ধ হয় সেটা পাচ্ছিলাম।
অবাক হলাম আরও একবার। মিশমি আসার পর সত্যম বা মিশমি নিজেদের মধ্যে গল্পে এমন মশগুল হয়ে গেল, আমি যে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ঘরে আছি সেটা যেন তারা ভুলে গেছে।
তারা ফিসফিস করে কথা বলছিল। একবার শুনলাম সত্যম বলছে তোমার ড্রেসটা চেঞ্জ করা গেলোনা!
আমার ব্যাপারেও বলছিল হয়তো কারণ, আমি অনাহুত।
আমিও রাগ দেখিয়ে সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে দেশলাই মারতে যাবো ঠিক তখুনি “সিগারেট ধরানো হলে কিন্তু আমি চলে যাবো, আমার সহ্য হয়না একদম” তাড়াহুড়ো করে বললো মিশমি।মানবিকতাবোধ সিগারেটটাকে আস্ত অবস্থায় পাশের টেবিলে পৌঁছে দিলো। এটা ভেবে শান্তি হলো যে, আমি বলে একটা বস্তু ঘরে ছিলাম তা অস্বীকার করেনি।
কিন্তু অপমানটাও হারে হারে টের পাচ্ছিলাম।বাড়ি ফেরার উপায় থাকলে ফিরে আসতাম।আমি নারায়ণ সান্যালের “বিশ্বাসঘাতক”টা খুলে বসলাম।
ওরা হাসছে, পড়ছে, গল্প করছে। পড়তে পড়তেই আমার সত্যমের ওপর রাগও হচ্ছিল। ওকে তো বলেই এসেছি আমি, নিশ্চয় ওর প্রেমিকার মতও ছিল। তবুও…
ভাবলাম এইবার একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো।দরকার পড়লে পাশে ওদের ডাইনিং এ গিয়ে থাকবো। চরম রাগ, হীনমন্যতায় ভুগছিলাম।
হঠাৎ ওদের শব্দের প্রাবল্য বাড়লে শুনতে পেলাম পছন্দের রঙ নিয়ে কথা হচ্ছে। মিশমি নীলের দিকে আর সত্যম হলুদ। আমি মানসম্মানের মাথা খেয়ে বললাম,”নীলের তুলনা হয়না। নীল রঙ কিসের কিসের প্রতীক একবার গুগলে সার্চ করিস। আমার ভীষণ প্রিয়।
বলতেই মিশমি সটান আমার মুখের দিকে তাকালো। আমি দেখলাম, বেশিক্ষণ তাকাতে পারিনি। ভয়ে ভয়ে শিরদাঁড়া বরফের মতো কঠিন হয়ে গেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম নাক বেয়ে ঠোঁট, গলা ভিজিয়ে দিচ্ছে।
আমি চুপ করে গেলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ। “সত্যম” বলে ডাকতে গিয়ে দেখলাম গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছেনা।
হ্যাঁ, সত্যমের মিশমি আমার অনেকদিনের চেনা।কিন্তু এ কি করে সম্ভব! বিশ্বাসই হচ্ছেনা।রোশনারা খাতুন, আমার প্রাক্তন প্রেমিকা। এপ্রিল ৬,২০১৫তে আত্মহত্যা করেছিল। আমি নিজে ওর কবরে মাটি দিয়ে এসেছি।
কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছেনা। অস্থির লাগছে।রোশনারা অন্য জগতে গিয়ে বোধহয় অন্তর্যামী হয়েছে। সে আমার চোখে কৌতূহল দেখে বাম হাতটা আমার দিকে তুলে ধরলো। আবারও শিউরে উঠলাম। মৃত মানুষ কি করে জলজ্যান্ত বসে গল্প করছে, হাসছে। শিরাটা এত গভীরভাবে কেটেছিল যে, রক্ত তঞ্চন করানো সম্ভব হয়নি।বোকামি করেছিল সেদিন, তখন ও ক্লাস ইলেভেনে পড়তো। হঠাৎ আমাকে অন্য মেয়ের সাথে Y.M.A মাঠে দেখে ওই কাজ করেছিল।অন্যদের মতো ঝগড়া ঝাটি, কান্নাকাটি কিচ্ছু করেনি। আমাকে কোনো কথায় বলেনি।
পোস্টমর্টেমের পর ওর ছিন্ন ভিন্ন শরীরটা দেখে খুব কেঁদেছিলাম। ও নিজেও হয়তো আফসোস করে।
আমি কাঁপছিলাম। এ
ক অজানা ভয় আমাকে গ্রাস করেছে তখন। অজ্ঞানের মতো হয়ে যাবার জোগাড়।
–”কি রে! কি হলো। এরকম করছিস কেন” পিঠে হাত দিয়ে বললো সত্যম।
প্রেমিকা মরে গেলেও প্রেম মরেনা। একথাও বুঝলাম রোশনারা থুড়ি মিশমির আচরণে।
–”সত্যম দা, তুমি একটু চা করে নিয়ে এসো তোমার বন্ধুর জন্যে। আমার জন্যে করতে হবেনা।” এই ছুতো দিয়ে সত্যমকে বাইরে পাঠালো রোশনারা।
আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি সিঁটিয়ে গেছি ভয়ে। অট্টহাসি হেসে, আমার ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো,”ভয় পেয়োনা। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমি ভুল করে ফেলেছিলাম। ওই বারো বিঘা কবরে শুয়ে থাকতে ভয় পাই, কাঁদি। কেউ আসেনা গো। তুমি তো যেতে পারতে মাঝে মাঝে। অবশ্য,তোমার আর সময় কোথায়! কত মেয়ে আছে।
অনেক কষ্টে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করে বললাম, “একবার আমাকে জানাতে পারতে। ওটা তো এমনি কলেজের বান্ধবী ছিল। তখন তুমি ছাড়া আর কেউ ছিলোনা আমার জীবনে।বিশ্বাস করো।”
–পরে বুঝেছি গো। যাই হোক। তুমি শুয়ে পড়ো।সত্যম দা আর আমি ভালো আছি। এটাও পড়তে পারেন রাধা কলঙ্কিত তবু পরকীয়া শ্রেষ্ঠ তুমি কাউকে কিছু বোলোনা।
–”কিছু মনে কোরোনা রোজি(আমি ডাকতাম), সত্যম আর তোমার জগৎ আলাদা। ওকে ছেড়ে দাও। এই সম্পর্ক হয়না গো, প্লিস।” ভয়ে ভয়ে বলেছিলাম।
–”হা হা হা হা। সত্যম দা ৩মাস আগে মারা গেছে,২২ধাপি ঘাটে স্নান করতে গিয়ে গঙ্গার জলে ডুবে।
–কি!!!!!!!!!! আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিল।
সত্যম ততক্ষনে এসেছে। বলে,”বন্ধু গ্যাস জ্বালাতে পারিনা, আগুনে ভয় পাই। তাই ইলেকট্রিক কেটলিতে করলাম। খেয়ে নে।”
–ভূত আমার পুত, প্রেতিনী আমার ঝিঁ..
আর কিছু বলতে পারিনি।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো তারা দুজন। বুঝলাম সেদিন সন্ধ্যেয় সত্যমের সাথে দেখা হওয়া থেকে এই দুর্বিষহ রাত্রির ঘটনা সবটাই অশরীরির পরিকল্পনা আর আমি তাদের ফাঁদে পড়ে ছটফট করছি।
পরদিন বিকেল বেলা পাড়ার লোক, পুলিশ অজ্ঞান অবস্থায় ওই বাড়ি থেকে
উদ্ধার করেছিল। তাদের থেকেই জেনেছিলাম সত্যম মারা যাওয়ার পর ওই বাড়িতে আর কেউ থাকেনা।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.