সারাদিন ঝোড়ো হাওয়া আর অবিরাম বৃষ্টিপাত, আকাশ যে আজ কোনো বাঁধ মানছে না।
গতকাল আমার ছোটবেলার বন্ধু কমলেশ- এর গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর শুনে কলকাতা থেকে দুদিন অফিসের ছুটি নিয়ে করিমপুর এলাম। কিন্তু আজকের আবহাওয়া অনুকূল নয়, কোনো যানবাহন নেই, আজ ঘরেই থাকতে হবে মনে হচ্ছে।
সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ায় লোডশেডিং হয়ে গেল। অন্ধকারে একটা বাতি জ্বালিয়ে, চা-এ চুমুক দিতে দিতে এই রকম একটি বৃষ্টি মুখর দিনে কমলেশ,প্রকাশ, মনীশ সবার সাথে চা-এর আড্ডা জমে ওঠার স্মৃতি মনের ক্যানভাসে আঁকিবুকি কাটছিল। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেলাম, দরজা খুলতেই চমকে উঠলাম- কমলেশ তুই?
-কেনো নীলেশ আমি আসতে পারি না?
-নিশ্চয়ই, কিন্তু আমি যে শুনলাম তুই হাসপাতালে। আয় আয় ভিতরে এসে বস।
অন্ধকারে কমলেশকে দেখা যাচ্ছিল না তবে ওর গলার স্বর শুনে নিশ্চিন্ত হলাম। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে দমকা হাওয়ায় বাতিটা নিভে গেল।অন্ধকারে কমলেশ আর আমার আড্ডা জমে উঠল। অজান্তেই সময়টা পার হয়ে গেল। কমলেশ বলল- অনেক রাত হল,এবার উঠি।
পরের দিন ভোরবেলা ফোন বেজে উঠল। ফোন ধরতেই ভাঙা গলায় কমলেশ নেই খবরটা দিলো ওর ভাই। খবরটা শুনে আঁতকে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পৌছে দেখলাম কমলেশের নিথর দেহটা বেডে পড়ে আছে। ওর ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- কাল সন্ধ্যে সাতটায় দাদা মারা গেছে। আমি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম বেডে নিথর কমলেশের দেহটার দিকে।