বছর চল্লিশ আগের কথা। জৈষ্ঠ্য মাসের এক অলস দুপুর। প্রচন্ড গরমে পাখি গুলোও হাঁ করে গাছে বসে আছে। রাস্তায় লোকজনও বিশেষ নেই। জগন্নাথপুরের এক বটগাছের তলায় বসে আছে কাশীনাথ,গ্রামের লোক তাকে কাশী ক্ষেপা বলতেই অভ্যস্ত। একবারে পাগল নয়, তবে বোধ বুদ্ধি একটু কম, চলতি ভাষায় হুঁশমোটা বললে অত্যুক্তি হয়না। মাঝারি গড়ন,বয়স ২২-২৩ হবে। সারাদিন কিছু না কিছু ভাবতেই থাকে, আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে কি যেন বিড়বিড় করে। কাজ কম করে মানে হুঁশমোটা বলে লোকে কাজ দেয়না। জয়দেব মুখুজ্জেদের বাড়িতে ফাইফরমাশ খাটে। এবেলার কাজ সেরে একটু জিরোচ্ছিলো।
কিছুক্ষণ বাদে দেখতে পায় একটা লোক মাথায় করে একটা বড়ো পাত্রে তেল নিয়ে তার দিকে আসছে। লোকটি মধ্যবয়স্ক, ব্যবসায়ী। কাঁচাপাকা চুল, অবস্থাপন্ন বলেই মনে হয়। অনেকদূর থেকে ওই ভারী তেলের পাত্র নিয়ে আসতে আসতে খানিকটা ক্লান্তি বোধ করছিলেন তারওপর প্রখর রোদ। কাশীনাথকে বসে থাকতে দেখে ডাক দিলেন, “ও ভাই শুনছ,ও ভাই”। কাশীনাথকে কেউ ডাকেনা, তাই ও কান দেয়নি বিশেষ। জোর গলায় ডাকতে একবার তাকালো,বললো “আমি?”।জনৈক বললেন,” হ্যাঁ, ভাই।নীলগঞ্জ হাটে যাবো-তা তুমি কি এই তেলের পাত্রটা নিয়ে যেতে পারবে?২টাকা দেবো।”
২টাকা!!! কাশীকে কে এবার সামলায় কে! আনন্দে ধরেনা! বলে “খুব পারবো। দাও পাত্রটা আমাকে, আর তুমি পিছনে এসো।” ব্যবসায়ী অনেকখানি তেল এবং তার মূল্য সম্পর্কে বুঝিয়ে দিয়ে সাবধানে নিয়ে যেতে বলে কাশীর মাথায় তুলে দিলো তেলের পাত্রখানা। বললো “তুমি এগোও, আমি একটু জিরিয়ে আসছি তোমার পিছনে”। ‘আচ্ছা” বলে কাশী হাঁটা শুরু করলো। কাজিবাড়ি, কোঁকাপুর ছাড়িয়ে গেছে। হাঁটছে কাশী। হঠাৎ তার মাথায় এলো ২টাকাটা পেয়ে সে কি করবে। সে ভাবতে লাগলো। কটা ডিম কিনবো, সেই ডিম থেকে মুরগি হবে, সেগুলো বড়ো হবে তারা আবার ডিম পাড়বে, আবার মুরগি হবে, বেশ টাকা হবে। সেই টাকা দিয়ে ছাগল কিনবো, তার বাচ্ছা হবে, বাচ্ছা গুলো বড়ো হবে, অনেকগুলো ছাগল হবে। ওগুলো বেচে জমি কিনবো একটা, একজোড়া হালের বলদও কিনবো। এইসব ভাবছে আর হাঁটছে কাশী। সুভাষনগর পেরিয়েছে। নীলগঞ্জ আর কিছুক্ষণ। আবার ভাবছে জমি চাষ করবো, অনেক ফসল হবে, অনেক টাকা হবে। “একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করবো”- মুচকি হাসে আনমনা কাশী। অনেকগুলো বাচ্ছা হবে। হাসি যেন থামেনা স্বপ্নে বিভোর কাশী ক্ষেপার। আবার ভাবে, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবো। ততক্ষনে পাঞ্জাবিখোলা ঢুকবো ঢুকবো। নীলগঞ্জ সেলার হাট আর কিছু মুহূর্ত বাকি। কাশী ভাবে ছেলে মেয়েদের আমার মতো হিসেবি করবো,অপব্যয় নয়। তারা যদি টাকা চাই “বাবা আট আনা দাও”। মাথা নেড়ে বলবো “না না”। স্বপ্নে ভেসে যাওয়া কাশী বাস্তবের কাশীর মাথা নাড়িয়ে যায় বেশ কয়েকবার, আর তাতেই তেলের পাত্র রাস্তায় পড়ে যায়। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে সমস্ত তেল নিজেরাই নালা করে হাসতে হাসতে ভেসে যাচ্ছে আর যেন অসহায় কাশীকে বিদ্রুপ করছে।
হতভম্ব কাশী নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ততক্ষনে চড়, থাপ্পড়, গালাগালি জুটেছে। তার পিছনে আশা জনৈক তেল মালিকের থেকে। “হতভাগা,কে দেবে এই তেলের দাম? কত বড় ক্ষতি হলো জানিস আমার?”।
বানভাসিতে সব হারিয়ে ফেলা মানুষের ভঙ্গিতে কাশীক্ষেপা বললো,”তুমি এক পাত্র তেলের জন্য দুঃখ করছো? .আর আমি এই মাত্র একজোড়া হালের বলদ, দু ফসলা জমি, বউ, ছেলেমেয়েকে হারিয়ে ফেললাম গো বাবু”।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.