বিয়ে ও ওবাড়ি
সেকালে শুনেছিলাম, আসছে শীতে আমার বিয়ে। তবে সেই শ্রাবণেই বাবা-জেঠারা পুরো গ্রাম ভর্তি লোক নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছিল। ভিতর বাড়িতে সব এয়ো মেয়েরা সেইদিনই খুব সিঁদুর খেলেছিল। তখন বারো বছরের আমি ভীষণ অবাক হলাম… কারণ এর আগেও দিদিদের, পিসিদের বিয়ে দেখেছি কিন্তু মেয়েমানুষের বিয়ের এত আগে থেকে কখনও এত উৎসব হয়নি। পরদিন জানলাম সেদিন নাকি ভারত স্বাধীনতা পেয়েছিল।
আমার বাবা বেশ প্রতিপত্তিশীল ছিলেন। আমার বিয়েতে আমার চোখ ছাড়া বাদবাকি সব সোনা ও হীরেতে মোড়া ছিল। গয়না পড়তে আমারও বেশ ভালো লাগে। এই আশির ওপর বয়সে এসেও আমি আমার গয়নাগাটি সব ঘেঁটে ঘেঁটে গুনি— যদিও বৌমারা আর নাতবৌমাদের মধ্যে বিস্তর ভাগ করে দিয়েছি, তবুও কিছু অবশিষ্ট আছে। চোখে এখন কম দেখি তাই গয়না কম হলেও অসুবিধা হয়না…
এদের বাড়ি আজ ষাট বছর হল সংসার করছি। উনি বেঁচে থাকার শেষ মুহূর্তেও আমায় এক গা গয়নায় নিজের সামনে বসিয়ে রেখেছিলেন। এদের বাড়িতে মেয়েমানুষ একপ্রকার গয়না পড়ানোর জন্যেই বিয়ে করে আনা হয়।
তখন আমার পান্না সবে মুখেভাত তুলেছে। হরেকীর্তন দত্ত ওনার মাসতুতো দাদার কাকার ছেলে হতো, একদিন সকালে আমি স্নান করে গয়না পড়তে বসেছি, উনি হরেকীর্তন বাবুকে ঘরে নিয়ে এলেন। আমি এক ঝটকায় মাথায়, গায়ে আঁচল টেনে ফেলি। হরেকীর্তন বাবু ভুল করে বিছানার এমন জায়গাতে বসেছিলেন, যে আয়নায় আমায় দেখতে পাচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরেই আমার স্বামী বুঝতে পেরেছিলেন যে ওনারা ভুল সময় ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন, তাই বেশ তাড়াহুড়ো করেই বৈঠকখানায় চলে গেলেন। হরেকীর্তন দত্ত যাওয়ার সময় ওনার নাম উল্লেখ করেই বললেন যে, “তোমার স্ত্রী ভীষণ অসাধারণ রূপের অধিকারী”। আমার ভালো লেগেছিল; চোদ্দ বছর বয়সী এক সন্তানের মাকে কেউ সাজসজ্জা ছাড়াই সুন্দরী বলেছে বলে নয়… জীবনে সেটি প্রথম ও শেষবার কেউ আমায় সুন্দর বলেছে, তাও আবার পুরুষমানুষ। আমার বর শোয়ার সময়ও তা ভুল করে কখনো বলেনি, সে ঘটনার পরবর্তীকালেও নয়।
তারপর চুনী হল, হীরা হল, বাড়িতে বৌমারা এল, নাতিরা হল, উনি মারা গেলেন। বড়ো নাতির বিয়ে হল, তাদের মেয়ে সন্তান হল…— এর মধ্যে একবারও হরেকীর্তন বাবুর উল্লেখ হয়নি কোথাও। শুধু একবার শুনেছিলাম আমার হীরার বৌয়ের সম্পর্কে মাসতুতো কাকা হয় হরেকীর্তণ দত্ত।
হীরার ছেলে আমার সবথেকে ছোটো নাতি, উচ্চমাধ্যমিক দিচ্ছে এইবার। এখন আমি তেমন হাঁটা-চলা করতে পারিনা আর চোখেও কম দেখি; তবে হীরার ঘরটা আমার ঘরের পাশে বলে আমি মাঝেমাঝেই গিয়ে খোঁজ নিই নাতির। হীরার বৌটা আগুনে পুড়ে মরেছে। তবে হীরা ওর শ্বশুরবাড়ির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।
রীটু আমার হীরার ছেলে, সোমবার পরীক্ষা দিয়ে এসেই মামাবাড়ি ছুট দেয় কারণ ওর হরেকীর্তন দাদুর শেষকৃত্যের কাজ চলছে। শুনলাম চুল্লিতে পুড়িয়েছে। আমি একবার চুল্লি দেখেছিলাম জীবনে, মায়ের বেলায়।
আমি হরেকীর্তন বাবুকে গতরাতে স্বপ্নে দেখি— একুশ বছরের হরেকীর্তন বাবু চুল্লির ওপর দাঁড়িয়ে চুরাশি বছরের বুড়ি আমায় বলছে, “বৌঠান, আপনি ভীষণ অসাধারণ রূপের অধিকারী”।
…আজ সকাল সকাল আমার কাছে যতটুকু আর গয়না অবশিষ্ট, আমি সবটা রীটুকে দিয়ে এলাম। ওরও আমার মতো সোনা খুব ভালো লাগে। ওই তো আমায় হরেকীর্তন বাবুর শেষ খবর দিল… আমায় আমার জীবনের প্রথম ও একটিমাত্র প্রেমটা সমাপ্ত করতে সাহায্য করেছে।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.