– কী বিকাশবাবু কাল ফেরার ট্রেনে দেখলাম না যে আপনাকে?
– হ্যাঁ, কাল অফিসে একটা সেমিনার ছিলো তাই ৭:৫৫র ট্রেনে ফেরা হয়নি। কাল ১০:৫০ এর শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরেছি।
আমার কথা শুনে সবাই সবার দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলো। অচিন্ত বললো, “আপনি কী আগের ৯:৩৫ এর ট্রেনটাও ধরতে পারেনি?”
স্টেশনে যখন পৌঁছালাম ঘড়িতে তখন প্রায় ১০:১০। স্টেশন প্রায় জন শুন্য। স্টেশনের লোকাল খাবারের দোকানগুলো ঝাঁপ ফেলছিলো। ট্রেনে যখন উঠলাম পুরো বগিতে আমি একা,বেশ চিন্তা হচ্ছিলো তবে ট্রেন ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই এদিক সেদিক দেখতেই চোখে পড়লো বগির শেষ প্রান্তে একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক বসে আছেন, পড়নে সাদা পাঞ্জাবি আর ধুতি, কাঁধে শান্তিনিকেতনী একটি ঝোলা ব্যাগ, জানালার দিকে মুখ করে বসে আছেন। এনাকে ট্রেনে ওঠার সময় নজরে পড়েনি তবে একজন কে সাথে দেখতে পেয়ে একটু স্বস্তি পেয়ে ছিলাম। হেসে জিজ্ঞাসা করলাম
– কোথায় নামবেন দাদা?
– ট্রেনটি যেখানে শেষ থামবে।
– ও তাহলে তো হাবড়া। বেশ একসাথেই যাওয়া যাবে, আমিও হাবড়া তেই নামবো। আপনি রোজ এই ট্রেনে ফেরেন?
– হুম
উত্তর শুনে মনে হলো না ভদ্রলোক কথা বাড়াতে ইচ্ছুক। জানালার দিক থেকে একবারের জন্য মুখ ফেরালেন না তিনি।
ট্রেন হাবড়া আসতেই জিজ্ঞাসা করলাম –
“দাদা নামবেন না?”
“হুম”
আমি এগিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ালাম। রাত তখন অনেক, বাড়ি যাওয়ার তাড়া ছিলো আমার। তবে ট্রেন থেকে নেমে দেখলাম জনহীন স্টেশনে ভদ্রলোক কে কোথাও দেখতে পেলাম না, একেবারে অদৃশ্য। প্রথমটা একটু অবাক লাগলেও পরে ভাবলাম বাড়ি যাওয়ার তাড়াতে দ্রুত পায়ে স্টেশন থেকে বেড়িয়ে গেছেন। আমিও বাড়ির পথে হাঁটা দিলাম। তবে কাল ফাঁকা বগিতে ওই ভদ্রলোক অচেনা হলেও আমার একমাত্র সঙ্গী ছিলেন।
অচিন্ত বললো -“আপনি কী ঘটনাটা জানেন না বিকাশ বাবু?”
“কী ঘটনা অচিন্ত?”
“আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে কলকাতার কলেজের প্রোফেসর ফেরার সময় এই ট্রেন দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়ে ছিলেন। তারপর থেকেই শোনা যায় এই শেষ ট্রেনে ফেরার সময় একই রকম ভাবে অনেকেই তাঁকে প্রত্যক্ষ করেছে আর কাল আপনি তাঁকে দেখেছেন।”
অচিন্তর কথা শুনে আঁতকে উঠলাম আমি। কাল রাতে আমার অচেনা সঙ্গী তবে কে ছিলেন?
সমাপ্ত