আমি আকাশ । আমি গত দুবছর ধরে ondine’s curse disorder এর শিকার । আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি আর এটা আমার জীবনের শেষ সাতদিন । আজ থেকে যা বলবো সব স্বপ্ন,আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখাবো আর আপনারা জেগে জেগে দেখবেন । আর হ্যাঁ, stay away from me কারণ আমার স্বপ্নগুলো আপনাদের ঘুমেও চলে আসতে পারে ।
( প্রথম দিন )
আচ্ছা ওপর থেকে সবাইকে এত ছোট লাগে কেন?মানে আমি এখন ঠিক আমার অফিসের দশতলা ছাদের রেলিংয়ের এর উপর উঠে,আবোল তাবোল ভাবছি,না দাঁড়ান দাঁড়ান,মানুষগুলো ওমন ভেসে বেড়াচ্ছে কেন?তাহলে কি সবার রাতারাতি পাখনা গজালো?মানে রাতের জোনাকি গুলোও কি আমাদের মতো স্বাধীন?না মানে,স্বাধীনতা মানে তো একমুঠো আলো,যেটা সব অন্ধকার মোছার জন্য জরুরি।না না,এসব কি ভাবছি?হয়তো বা দশতলার ছাদে দাঁড়িয়ে জীবনের সব মজা নিয়ে রাজা হওয়ার অপেক্ষা করছি । এক সেকেন্ড,এক সেকেন্ড আমায় পাগল ভাবছেন তো ? আসলে আমরা সারাজীবন সবার আগে থাকার জন্য কামড়া কামড়ি করে গেলাম কিন্তু কেউ ভাবলাম না বা বুঝলামই না যে,আমরা কখনো সবার আগে বা মধ্যিখানে থাকতে পারিনি বা পারবো না,কারণ একটা দিকের ধার থেকে যদি দৌড় শুরু করি তাহলে সেই আরেকটা ধারে গিয়েই আমাদের থামতে হবে ।
এখন আমি একটা হলুদ ট্যাক্সিতে,একলা আমি,একলা রাস্তা । এই যে ,ও হ্যালো এবার আপনাদের মনের ক্যামেরাটিকে দশতলা থেকে নামিয়ে এই ট্যাক্সির মধ্যে আনুন । এনেছেন?এবার আস্তে আস্তে আবার আমার স্বপ্নের ঘুপচিতে নিয়ে আসুন । আস্তে আস্তে আসবেন,কারণ তাড়াহুড়োয় অনেকে স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায় ।আচ্ছা হলুদ আলোগুলো বড়ো অদ্ভূত না?কেমন রাতের শহরে খাপ খেয়ে যায়,যেটা দেখে আমাদের মাথায় কাব্যি খেলে।কিন্তু আমার জীবনটা না আমার সাথে খাপ খেল না ।এখনো মনে পড়ে,অনেক ছোটবেলায় মা কে হারিয়েছি ,বড়ো বেলায় একজন ভালোবাসার সঙ্গিনী কে হারিয়েছি আর এখন তো নিজেকেই ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি । একটা মানুষ আর কত দিনই বা পারে লড়াই চালিয়ে যেতে?কত কি না ভাবে,একটা শীতের সকালে ছুটির দিনে একলা কুয়াশা মাখবো,শিশির মাখানো ভেজা পাতায় কিছুক্ষণ খালিপায়ে দাঁড়িয়ে থাকবো,সুন্দর মেয়েদের দিকে আড়চোখে তাকাবো মানে কত্ত কিছু ভাবি কিন্তু ঘুম ভাঙার পর সব স্বপ্ন ডানা মেলে উড়ে যায় । এই যে এতক্ষণ আমি মনেমনে বকবক করছি, তাও ট্যাক্সির জানলার বাইরে মুখ বার করে,হঠাৎ কি মনে হলো,নিজের জিবটা বার করে বাইরের হাওয়ার স্বাদ নেই খানিকটা কুকুরের মতই । হুমম্ , স্বাদটা কেমন গুমোট গুমোট টাইপ । এই শহরে কি সবারই মন খারাপ?
এবার এটা একটু ব্যাক্তিগত ব্যাপার, আপনারা চাইলে আসতে পারেন যদিওবা যাবেন না জানি কারণ বাঙালি তো ।যাই হোক আমি এখন আমার সেই পুরোনো সঙ্গিনীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে । ব্যালকনি থেকে সে আমায় দেখে এক চিলতে মিঠে হাঁসি হাঁসলো,আমি ইশারায় নীচে আসতে বললাম,প্রথমে না না করলেও শেষে আমার ন্যাকামি তাকে আসতে বাধ্য হলো । ধীরে ধীরে তার সে প্রবেশ করছে আমার চোখ বুজে থাকা শহরে,এসেই জোরে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো আর ফুঁপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলো । গোলাপি ঠোঁটদুটো তিরতির করে কাঁপছে,একি ও কাঁপছে কেন?না এখনি ওকে থামাতে হবে । আমি ওর ঠোঁট দুটোকে কাছে পেতে চাইলাম । আরে আরে কি করছি আমি?কি ভাবছি? ও তো কিছুদিন আগেই সুইসাইড …….
সব কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে,খুব কষ্ট হচ্ছে,মনে হচ্ছে কিছু যেন একটা ভুলে যাচ্ছি । চারিদিক কেমন সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে কেউ যেন আমার গলাটা জোরে টিপে ধরে রেখেছে । এরই মধ্যে কেউ জন্য সজোরে একটা চড় কষালো গালে। আর কোনো এক চেনা অদৃশ্য গলার আওয়াজ,খুব অস্পষ্ট আওয়াজ—
—‘বাবু,এই বাবু,একটু দম নেওয়ার চেষ্টা কর তুই এখনো দম নেওয়া ভুলিসনি,স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আয়,নাহলে এই স্বপ্নই তোকে—’
আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম—