আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একটা সময় থাকে যে সময়টা আমাদের পুরোপুরিভাবে পাল্টে ফেলেছে। যে সময়ের গভীরতায় আমরা তলিয়ে যায়নি, ঠুনকো হাতের মুঠো শক্ত করে আবার বেরিয়ে এসেছি সময়ের সেই অন্ধকূপ থেকে! সেই সময় হয়তো আমাদের হতে হয়েছে অনেক অবহেলার শিকার, হয়তো তাচ্ছিল্যের স্পর্শ বারবার ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে আমাদের অন্তর আত্মাকে; তবু আমরা পরাজয় স্বীকার করিনি! সেই সময় তুমি যার কাছে ব্যক্ত করেছিলে মনের গহনে লুকানো সব কষ্টগুলো; হয়তো সেই সবথেকে বেশি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তোমার সাথে, তবু সেই সময়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকো কারণ সেই সময়ই তোমাকে চিনিয়েছে আপন পরের তফাত। মুখোশ আর মানুষের বিভেদটুকু চিনিয়ে দিয়েছে তোমাকে!
সেই সময় তোমার কঙ্কাল শরীরে মরমর করে বাড়তে থাকা ডিপ্রেশনের কালবৈশাখীকে থামিয়েছে, তোমার ভেতরের সব আবেগগুলোকে লণ্ডভণ্ড হবার থেকে রক্ষা করেছে! বিনা কারণের মনখারাপগুলো থেকে মুক্তি দিয়েছে তোমাকে। সেই সময় তুমি হয়তো ছিলে অসহায় কিন্তু সেই অসহায়তার আগুনে পুড়তে পুড়তেই সেই তুমি’ই আজ খাঁটি সোনা হতে পেরেছ! সেই সময় ঘরের যে কোণে, যে বালিশে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলে আজ সেই জায়গাটা দখল করেছে তোমার ঘর সাজানোর প্রিয় ডেকরগুলো, প্রিয় উপন্যাসের আধখোলা পাতাগুলো। সেই সময় তুমি বারবার হোঁচট খেয়েছ আর রক্তাক্ত হয়েছে তোমার ভেতরটা, তবু তুমি কোয়াড্রীপ্লেজিয়ায় আক্রান্ত জীবনে এনেছ সঞ্জীবনীর ছোঁয়া, সেই সময়ের হাত ধরেই! তাই কৃতজ্ঞ থাকো সেই সময়ের ওপর।।
এটাও পড়তে পারেন- হেরে যাওয়া মানুষের মৃত্যুর পরে জিতে যাওয়ার গল্প- ” জার্সি ” !
অতীতের সেই সময় একটু একটু করে ঝাপসা হয়ে গিয়েছে আজ যখন তুমি বাস্তবের শক্ত জমিতে বিনা দ্বিধায় দাঁড়িয়ে আছো তখন আকাশের ঘন কালো মেঘের ভেলায় হারিয়ে যেও, ওপরের দিকে তাকিয়ে পাখিদের ঘরে ফেরা উপভোগ করো একবার। তারপর মেঘভাঙা বৃষ্টি এলে কথা দাও দু’হাত বাড়িয়ে ভিজবে তুমি আর ঝাপসা চোখে সেই সময়টার কথা মনে করবে। ব্যাকগ্রাউন্ট ব্লার করে শুধু সেই সময়টিকে ফোকাস করে ISO একটুখানি বাড়িয়ে জীবনটাকে করে তুলবে ফোটোজেনিক! তারপর বৃষ্টিস্নাত রোদ উঠলে তাকেও করবে আলিঙ্গন, আলতো করে অবাধ্য চুলে এঁকে দেবে শুকনো পাতার ওম আর চাইলে হাতদুটো দিয়ে চোখ ঢেকে মন ভরে কেঁদে নেবে সবার অলক্ষ্যে! সেই কান্নার প্রতিটা ফোঁটা তোমার সাফল্য কামনা করে মিশে যাবে বুকের প্রতিটা পাঁজরে। রূঢ় বাস্তবের মুখোশধারী মানুষের প্রস্তরখন্ড তোমার রঙিন ক্যালাইডোস্কোপকে আর টুকরো টুকরো করার সাহসটুকুও পাবেনা! এরপর অন্ধকার আর আলোর দূরত্ব অনেকটাই মিটে যাবে আর ধরে রাখা সময় ফুড়িয়ে যাবে ক্রমশঃ! তাই সময়গুলোকে বাঁচিয়ে রাখো, প্রতিদিন রোদ দিও তাতে। সেই সময় যতদিন বাঁচবে, ততদিন তুমিও বাঁচবে প্রাণভরে!