এক পশলা বৃষ্টি

কাল থেকেই অঝোর ধারায় মাঝে মাঝে এক পশলা করে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে, গতকাল রাত্রের খবরেই দেখা গেছে কলকাতার প্রায় বহু জায়গা জলমগ্ন, জেলার বহু অঞ্চলে বন্যা হয়েছে। বৃষ্টি যেন থামছেই না।সানন্দার আজ দশ বছরের বিবাহবার্ষিকী, কিন্তু সকাল থেকে বৃষ্টি আর বৃষ্টি তাই সানন্দার মনটা তেমন ভালো নেই। সাগ্নিকের আজ নর্থ বেঙ্গল থেকে ফেরার কথা তারপর সন্ধ্যেবেলা একটা ছোট্ট আয়োজন, বাড়ির কাছের কিছু আত্মীয়-স্বজন নিয়েই এবারের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলবে ভেবেছে।

তবে যে হারে সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে করে সন্ধ্যেবেলা কোন ছোট অনুষ্ঠান করা যাবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না কারণ মানুষ আসতে পারবে না রাস্তাঘাটে এমনিই জল জমা তার মধ্যে যা বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সে জন্য সানন্দা শুধু ভাবছি সাগ্নিক ভালোয় ভালোয় বাড়ি এলেই বাঁচি। এই ভাবতে ভাবতেই বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেল, হঠাৎ সানন্দা দেখল সাগ্নিক ফোন করেছে ফোনের ওপার থেকে খুব আস্তে আস্তে ওর গলা শোনা যাচ্ছে; বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে আমি কি করে ফিরব বুঝতে পারছি না আমি ট্রেনে আছি তুমি চিন্তা করোনা হয়তো একটু দেরি হতে পারে।

 

চিত্র : সংগৃহীত

ফোনটা এসেছিল বিকেল চারটে নাগাদ তারপর প্রায় তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। বাইরে এত বৃষ্টি হচ্ছে দেখে সানন্দা সমস্ত নিমন্ত্রিত আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে করে বারণ করে দিয়েছে বলেছে আজকের অনুষ্ঠান অন্য কোনদিন হবে আগে থেকে ও জানিয়ে দেবে। প্রথম এক ঘন্টায় সানন্দার তেমন চিন্তা হয়নি, তবে শেষের দুই ঘন্টা সানন্দা কোন কাজে মন দিয়ে করতে পারছিল না, যদিও তেমন কোনো কাজ ছিল না তবুও নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছিল যাতে ভুলভাল চিন্তা মাথায় না আসে। ওইদিকে সাগ্নিক কে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না, কি করবে সনন্দা বুঝতেই পারছেনা হঠাৎ জোরে বিদ্যুৎ চমকালো, সাথে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরছে কারেন্টও চলে গেল।

নিজেকে আরো একা মনে হতে লাগল সানন্দার, কি করবে এখন ভাবতে ভাবতে সানন্দার দুচোখের পাতা এক হলো। ঘুম যখন ভাঙলো তখন রাত্রির দুটো চমকে উঠে বসে সানন্দা। একি রাত্রি দুটো বাজে! এখনো সাগ্নিক বাড়ি ফেরেনি আবার ফোনে চেষ্টা করল সানন্দা ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না, ফোন ক্রমাগত সুইচড অফ বলছে এবার কি করবে? কোথায় যাবে? বাইরে বৃষ্টি, ঘরে সানন্দার চোখের জল অঝোর ধারায় ঝরে চলেছে সাগ্নিক এর কোনো বিপদ হয়েছে সেটা সনন্দা আঁচ করতে পেরেছে কিন্তু কোথায় যাবে বুঝতে পারছেনা।

সাগ্নিকের বাবা-মা কেউ নেই, সানন্দার মা-বাবাও অনেকটা দূরে থাকে আর তাদের অনেক বয়স হয়েছে তাই তাদেরও বলা যাবে না তাহলে তারাও চিন্তা করবে। সেই ভেবে সানন্দা সাগ্নিকের প্রিয় বন্ধু নিলয়কে ফোন করে, নিলয়ও অনেকবার চেষ্টা করে সাগ্নিকের ফোনে কিন্তু সেই সুইচঅফ। সাগ্নিকের বাড়ি থেকে নিলয় বেশ কিছুটা দূরে থাকে তাই কী করবে সে বুঝতে পারেনা, শুধু সানন্দাকে আশ্বাস দেয় আজ রাতটা যাক, বৃষ্টি থামুক কাল সকাল থেকে আমি অবশ্যই খোঁজ করব।

সারারাত কান্নাকাটি করে ক্লান্ত সানন্দা ভাবতে থাকে রাত তিনটার পর থেকে বৃষ্টি কমে গেছে, এখন সকাল সাতটা এরমধ্যে কী সাগ্নিক বাড়ি আসতে পারত না? কোথায় গেল সাগ্নিক? তাহলে কী সত্যিই কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে সাগ্নিকের? নাকি এত বৃষ্টি ও জল জমার কারণে সাগ্নিক কোথাও আটকে গেছে? এগুলো ভাবতে ভাবতেই নিলয়ের ফোন! আমি পুলিশ স্টেশনে গিয়ে একটা ডায়েরী করাচ্ছি, মিসিং ডায়েরি। তুমি এ বেলাটা দেখো সাগ্নিক যদি বাড়ি না ফেরে তাহলে বিকেলবেলা থেকে আমাদের হসপিটাল, মর্গ এমন আরও বেশ কয়েকটা জায়গায় খোঁজ চালাতে হবে। নিলয়ের কথাগুলো শুনে ভয়ে, ক্লান্তিতে ফোনটা রেখে দেয় সানন্দা। বাইরে আবার বৃষ্টি শুরু হল এই দুর্যোগে সাগ্নিককে কী করে খুঁজবে সানন্দা?

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *