ব্রেক আপটা সত্যিই লাইফে একটা ব্রেক এনে দিয়েছে। এখনও একটা গোটা দিন কাটেনি আর মেঘ-এর জন্যে আমার অবস্থা শোচনীয়। বারবার মনে হচ্ছে অনুকে ফোন করে বলেই দিই যে ওকে ছাড়া আর থাকা যাচ্ছে না। কিন্তু সেলফ
রেসপেক্টটা বজায় রাখতে হবে, রাখতেই হবে। ব্যাপারটা বন্ধুদের বলে যে কোনো লাভ হবে না তা আমি ভালো করেই জানি। বন্ধু গার্লফ্রেন্ড পটালে সবাই যতটা না খুশি হয়, বন্ধুর ব্রেক আপ হলে খুশিটা হয় তার থেকে দ্বিগুন।
সেন্টিমেন্টে একটু মলম লাগিয়েই তখন সিগারেট, কোল্ড ড্রিঙ্কস এসব অনায়াসে আদায় করে নেওয়া যায়। মেন্টাল সাপোর্টের নাম করে ফরেভার সিঙ্গেল কোনো বন্ধুও এত এত জ্ঞান দিয়ে আসে যেন মনে হয়, এককালে পারোর শোকে তাকেও দেবদাস হতে হয়েছিল। আর ওদেরই বা কি দোষ? বন্ধুর ব্রেক আপে আমিও খুশি হয়েছি, মন খুলে জ্ঞান দিয়েছি।
ভাবলাম বন্ধুদের থেকে অসার জ্ঞান শোনার চাইতে বাড়ি বসে সিরিয়াল দেখা অনেক ভালো। চললাম টিভির ঘরে। মা জি বাংলায় কি একটা সিরিয়াল দেখছিল। নাম জানি না। আমি সচরাচর সিরিয়াল চলাকালীন টিভির ঘরে আসি না। ঘরে ঢুকতে দেখেই মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-কীরে, কিছু বলবি?
-ইয়ে মানে, ভাবলাম যে তোমার সাথে বসে একটু টিভি দেখি।
মা ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো, সোফা ছেড়ে উঠে আমার কাছে এসে বেশ উত্তেজিত হয়েই কপালে হাত রাখলো…
-শরীর-টরীর ঠিক আছে তো? জ্বরও তো নেই, কি হয়েছে টুপাই?
– আরে কিচ্ছু হয় নি, ইচ্ছে হল সিরিয়াল দেখার। তাই মানে চলে এলাম।
-সত্যি করে বল, উল্টোপাল্টা নেশা-ভাঙ করিস নি তো? আজ ফিরুক তোর বাবা…মোবাইলটাই হয়েছে যতরাজ্যের কাল!
আমার সিরিয়াল দেখার সাথে নেশা-ভাঙের সম্পর্ক এবং তার সাথে বাবার ফেরার সম্পর্কটা বুঝতে পারলেও, এদের সাথে মোবাইলের সম্পর্কটা আমার মাথার উপর দিয়ে বাউন্সার গেলো। সত্যিকথা বলতে ক্রাশের ইনটেনশন আর মায়েদের লজিক বাঙালি ছেলেরা চিরকাল বুঝতে অক্ষম। কিন্তু এখন সময় মাথা গরম করবার নয়, এখন যে কোনো কিছু একটা করে সময় কাটাতে হবে, অনুকে ভুলতে হবে। আর ওই মেঘকেও।
অগত্যা একটু মুচকি হেসেই বললাম,
– এরকমভাবে বলছো কেন? আমারও কি ইচ্ছে হয় না সিরিয়াল দেখতে?
মা আমার দিকে কিছুক্ষণ এমনভাবে তাকালো যেন আমি নামকরা ধারাবাহিকের কোনো কুখ্যাত খলনায়ক। ঠিক তারপরই হাসি হাসি মুখ করে আবার সোফায় গিয়ে বসলো। আমি বুঝলাম সিগন্যাল গ্রিন। গিয়ে বসলাম মায়ের পাশে।
এখন আর সিরিয়ালে ‘ধুম তানা নানা নানা…’ আওয়াজটা হয় না ঠিকই, কিন্তু ঘরের ছেলে নকল দাড়ি লাগিয়ে আসলে, আজও তাকে চেনার ক্ষমতা কারও থাকে না। মেঘের জন্যে আজ এসবও হজম করতে হবে ভাবতে পারছি না। কি ভালোই না হতো যদি আমাদের মাঝে আজ মেঘ না থাকতো। আসলে সম্পর্কের শুরু থেকেই অনু মেঘকে নিয়ে খুব সেন্সিটিভ ছিলো। ওকে নিয়ে একটু খিল্লি করলেই বুঝতে পারতাম অনুর খারাপ লেগেছে। প্রথমদিকে কিছু বলতো না। তারপর একদিন “ইয়ে দিল হ্যায় মুশকিল”-এর সব ডায়ালগ মুখস্থ করে এলো। আর এরপর থেকে যতবার আমি ওকে নিয়ে খিল্লি করতে যেতাম, ততবার ওর মধ্যে অনুস্কা শর্মার ভূত ঢুকতো- ‘পেয়ার মে জুনুন হ্যায়, দোস্তি মে সুকুন…’।
যে সিরিয়ালটা চলছে সেটা দেখা, আর হিব্রু ভাষায় খবর শোনা আমার কাছে একই। ভাবলাম বিরতি এলে খেলার চ্যানেলগুলো উল্টে পালটে দেখবো।
দীর্ঘ তিনমিনিট (মনে মনে গুনছিলাম) অপেক্ষার পর যেই বিরতি এল, মা সাথে সাথে রিমোট ঘুরিয়ে চলে গেল স্টার জলসায়। অতএব ধারাবাহিক আর মায়ের এ হেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাঝে আমি বসে রইলাম মনমোহন সিং হয়ে। তারপর…