উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সদর শহর বারাসাত। সাত টি বার বা জনপদ নিয়ে গড়ে উঠেছিলো বলে এই মফস্বলের নাম হয়েছে বারাসাত। এই সাত টি জনপদের মধ্যে বেশ কয়েকটির নাম আমরা জানতে পারি যেমন ” শ্রীধরপুর, হৃদয় পুর, বনমালী পুর, প্রাসাদ পুর ও নিশ্চিন্দি পুর”। জেলার সদর হিসেবে সমস্ত প্রশাসনিক কাজের কেন্দ্রস্থল যেমন বারাসাত তেমনি বারাসাত শহর নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তি জনশ্রুতি ও প্রচলিত আছে । ইতিহাসের পাতা খুললে বারাসতের অনেক অজানা কথা জানা যায়। বিখ্যাত মানিকচাঁদ জগৎ শেঠের পরিবারের বারো জন সদস্য এখানে বাস করতেন বলে শোনা যায় । তাদের মধ্যেই একজন রামচন্দ্র শেঠ বারাসাতের কেন্দ্র স্থলে একটি পুকুর নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে সেটি ” শেঠ পুকুর ” নামে পরিচিত। শহীদ তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ আমরা ইতিহাস বইতেই পাই এছাড়াও বারাসতের কিছু অদূরেই চন্দ্রকেতু গর যেখানে আছে “খনা মিহিরের ঢিবি” যা এখনও বিদ্যমান। ইতিহাসের সঙ্গে বারাসতের যোগ সুদূর প্রসারী যা অল্প কথায় ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। কিন্তু শুধু ইতিহাস নয় উৎসবের সঙ্গেও বারাসাত শহরের নাম জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে মা কালী আরাধনায় বারাসাত নগরীর জনপ্রিয়তা জগৎ খ্যাত বলা যেতেই পারে। দশভুজার পুজা শেষ হওয়ার পর থেকেই শহরবাসী কালীপুজার প্রহর গুনতে শুরু করে। চন্দননগরের মায়াবী আলোর ঝলকানিতে ঝলমলে হয়ে ওঠে গোটা শহর। কলকাতার মতো থিমের লড়াই চলে পুজো কমিটি গুলোর মধ্যে। তবে এই কালী পুজোর সাথেও জড়িয়ে আছে কিছু ইতিহাস বা জনশ্রুতি। এক কালের প্রখ্যাত রঘু ডাকাত নাকি বারাসাতে কালী পূজা করেছিলেন। বারাসতের থেকে প্রায় দেড় দুই কিলোমিটার দূরে নদীভাগের কাছে রয়েছে তার কালী মন্দির। তবে বর্তমানে সেটিকে মন্দির না বলে পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি বলাই শ্রেয়।.
এটাও পড়ুন : নবাবীয়ানা মুর্শিদাবাদের, ঐতিহ্যবাহী ছানাবড়ার মিষ্টি উপাখ্যান
মন্দিরে রয়েছে এক বিশালাকার বটগাছ । তার থেকে নেমে আসা ঝুরি সমগ্র মন্দিরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। আনুমানিক পাঁচশ বছর হবে মন্দিরের বয়স।সেই সময় ঘন জঙ্গলে ঘেরা এই স্থানেই রঘু ডাকাত ডেরা বেঁধেছিলো বলে শোনা যায়। তবে সেই মন্দিরের এখন ভগ্নপ্রায় দশা। তবে এখন স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগেই এখন পুজার দিন এখানে মা কালী পুুজিত হন। কালি মায়ের মূর্তি আজ আর নেই তাই বট গাছ কেই ভক্তি ভরে কালী রুপে পুঁজো করেন স্থানীয়রা। নিত্যপুজো সেখানে হয়না। শুধুমাত্র কালীপুজোর দিনই বটগাছ কে মাতৃরূপে পুজো করা হয়। শোনা যায় সেই কালে রঘু ডাকাত ও তার দলবল অষ্টধাতুর মায়ের মূর্তিতে পুজো করতো। সদলবলে ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ভক্তি ভরে মা কালীর আরাধনায় মেতে উঠতো রঘু ডাকাত। কিন্তু পরে সেই রঘু ডাকাতই ক্রোধে দিশাহীন হয়ে তলোয়ারের কোপে মায়ের মূর্তি ভেঙে দেয়। এই ক্রোধের পিছনের কারণ অনুমান করা যায় হয়তো কোনস্থানে ডাকাতি করতে গিয়ে তিনি ধরা পরে যান আর সেই রাগই বর্ষণ করেন মায়ের উপর। পরে ভাঙা মূর্তি তেই পুজো হতো বলে জানা যায় । কিন্তু সেই ভাঙা মূর্তি টিও চুরি হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে কালের গর্ভে তলিয়ে যায় রঘুর কালী । ইতিহাস আঁকড়ে বেঁচে থাকে শুধু প্রাচীনবটগাছ। বতর্মানে সেই প্রাচীন বটই পূজিত হয় কালী রূপে। স্থানীয় বাসিন্দারা বা কেউ কৌতূহল বসত সেখানে ঘুরতে গেলে বটের সামনেই জ্বালিয়ে আসে প্রদীপ বা মোমবাতি। মন্দির হিসেবে বহুল পরিচিত বা মন্দিরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক দোকানপাট এমন কোনো ছবিই এখন ওখানে গেলে আর দেখতে পাওয়া যাবে না। পোড়োবাড়ির ধ্বংসস্তূপে মন্দিরের মাহাত্ম্য আছে কিনা জানা নেই কিন্তু কান পাতলেই সেখানে শোনা যাবে ইতিহাসের ফিসফিসানি।কালিপুজোর দিন ভালোই ভক্তসমাগম হয় সেখানে । একবার স্বচক্ষে দর্শন করে আসতে চাইলে যেতেই পারেন বারাসাতের রঘু ডাকাতের ডেরায়।