দিদুন,
দেখতে দেখতে দু’বছর কেটে গেল তোমাকে ছাড়া। তোমার সাথে ষোলো বছর থাকার পর এই একা থাকা দুটো বছর আমি বুঝতেই পারলাম না।
আমার তোমাকে বড্ড মনে পড়ে। যখন সারাদিন ভারী ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে থাকার জন্য আমার কাঁধটা ব্যথা করে তখন তোমার স্পর্শ বড্ড মনে পড়ে, যখন মায়ের রান্না খেতে ভালো লাগেনা তখন তোমার রান্নাগুলো মনে পড়ে, যখন সকালে তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে বেরিয়ে যাই তখন তোমার বকুনি, ভালোবেসে খাইয়ে দেওয়ার কথা খুব মনে পড়ে আর যখন আমার ঘুম আসেনা কিংবা স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে মাঝরাতে উঠে পড়ি তখন তোমার আঁচল আর উষ্ণতা সবচেয়ে বেশি পিছু টানে।
জানি, তুমি আমার চেয়ে এমন কিছু বেশি দূরে থাকো না, চাইলেই তোমার কাছে যেতে পারি আমি। তবুও কেন পারিনা বলো তো? যখন খুব কান্না পায় কেন তখন তোমার কাছে গিয়ে বলতে পারিনা, “তোমার মেয়ে খুব বাজে, আমাকে একটুও বোঝোনা”। যখন ব্যথায় কাতরে উঠি তখন কেন বলতে পারিনা, “মালিশ করে দাও না, খুব ব্যথা করছে যে”।
জানো দিদুন, তোমার মেয়ের রান্না আমার একদম ভালো লাগেনা। তাও ওটাই খেতে হয় আমাকে আর প্রতিদিন খাওয়ার সময় তোমার মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আমার অপছন্দের রান্না হলেই রেগে চিৎকার করে বলতাম, “খাবোনা, যাও।” তারপর তুমি অন্য খাবার বানিয়ে আমায় খাইতে দিতে। জানো, এখন খেতে ইচ্ছে না করলেও ওই খাবারটাই খেতে হয় আমাকে। কেউ জোর করে খাইয়ে দেয়না।
তুমি সব সময় বলতে, “আমি যখন থাকবো না, তখন বুঝবি।” আর উত্তরে আমি হেসে বলতাম, “যাও তো, আমি একাই সব করতে পারি।” হ্যাঁ, একা আমি সবই পারি কিন্তু সবকিছুই ভীষণ অগোছালো ভাবে। প্রতিটা মুহূর্তেই আমি টের পাই তোমার অনুপস্থিতি।
মায়ের কাছে শুনেছি, আমি হওয়ার পর তুমি আমাকে প্রথম কোলে নিয়েছিলে। নার্স তোমাকে বলেছিল, “সতীন এসেছে ঘরে…” তুমি তোমার সতীনকে তোমার মেয়ে বানালে, দিদুন। তাই মায়ের মমতা তোমার গলার স্বরে বেশি ভেসে ওঠে।
আজও আমি পরীক্ষা দিতে গেলে তুমি মোমবাতির শিখা নিভতে দাও না, আমার সামান্য শরীর খারাপে সব ফেলে চলে আসো আমার কাছে। মাঝে মাঝেই মনে হয় শরীর খারাপই ভালো, কাছে তো থাকবে।
আমি তোমার জন্য বড্ড হিংসুটে। এবছর তুমি কেক বানাওনি বলে আমি ক্রিসমাসে কেক খাইনি। তুমি আমার আগে বোনকে পিঠে বানিয়ে দিলে কিংবা তালের বড়ায় ভাইয়ের চেয়ে আমার ভাগ কম হলে আমার খুব রাগ হয়। তুমি ওদেরও ঠাম্মি কিন্তু আমার দিদুন আগে। ওরা কেন বেশি পাবে?
আমি তোমাকে খুব মিস করি। তোমার সাথে ঝগড়া… রাগ… খুনসুটি… ভালোবাসা… সব অনেকটা মিস করি। আজকাল এই বাড়িতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর তখন আরও বেশি করে তোমার কাছে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে…
মাসি তো অনেক বড়ো, একা থাকতে পারে। তুমি আমার কাছে চলে এসো না। হ্যাঁ, অল্প অল্প বায়না করবো… কিন্তু বেশি জ্বালাতন করবো না তোমাকে। যার হাত ধরে হাঁটতে শিখেছি, যার শেখানো বুলি বলতে শিখেছি, যাকে আমার শরীর খারাপে জাগতে দেখেছি, তাঁকে ছেড়ে প্রতিটা দিন ভীষণ অসম্পূর্ণ লাগে। দিনের শত ব্যস্ততার মাঝেও কোনো না কোনো সময় তোমার মুখটা ভেসে ওঠেই। তুমি আমার অভ্যাস, আর ছোটবেলার অভ্যাস কি এত সহজে বদলানো যায়? তোমার প্রত্যেকটা কথা আমাকে আবার স্বপ্ন দেখায়… তোমার প্রত্যেকটা স্বপ্ন আমাকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
দেখেছো, আবার চোখ ঝাপসা হয়ে গেল… তোমার ‘দিনু’ তোমাকে ছাড়া ছিচকাঁদুনে হয়ে গেছে। I miss you দিদুন আর আজ বলছি, অনেকটা ভালবাসি তোমাকে…
ইতি,
তোমার দিনু