দুধ

শ্রাবণ মাসে বাবার মাথায় জল ঢালতে দূর দূর থেকে নেড়া বটতলার শিবমন্দির আসে অনেক মানুষ। সবাই বলে এখানকার ভোলানাথ অতি জাগ্রত।জল ঢেলে কিছু চাইলে বাবা তা পূরণ করেন। আজ বাবার জন্মতিথি।সকাল থেকে থিকথিক করছে বটতলা মন্দির চত্বর। ছোটখাটো মেলা বসে গেছে একটা যেন। ফুচকা ঘুগনীর গন্ধ একপাশে অন্যদিকে খেলনার দোকান,ফেরিওয়ালা তার সাথে নারী পুরুষদের ঢল। প্রায় এক কিমি লম্বা লাইন। হঠাৎ মন্দিরের মুখের সামনে একটা গোলমালের আওয়াজ।

“ম্যালা ফ্যাচ ফ্যাচ কোরো না তো বুড়ি! টানা তিনদিন হেঁটে বাবার মাথায় জল ঢালতে এলাম আর তুমি দুধ চাইছ!”

একটা অল্পবয়সী ছেলে ঠিক মন্দিরে ঢোকার মুখে সিঁড়িতে বসে থাকা সত্তর বছরের বুড়ি মানুষটাকে বলে ওঠে।

এত কথা শুনে বুড়িটা বলে ওঠে ,”বাবা সব দুধ চাইছি না তো! এই তো এই ছোট্ট গ্লাসে যেটুকু ধরে।তোমরা সবাই একটু একটু করে দিলে অনেকটা হয়ে যাবে।

ছেলেটা এবার খানিকটা ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে,” বুড়ো বয়সে এত দুধ খাওয়ার লোভ কেন! তাও আবার ঠাকুরের জন্য আনা দুধ!”

বুড়ি এবার ঠান্ডা গলায় বলে ,”খেন্তির লোভ নেই বাবা! তবে আমায় একটু দুধ দিলে যে চাকরির জন্য বাবার কাছে দরবার করতে এয়েচো সে চাকরি হয়ে যাবে।” ছেলেটা এবার চমকে ওঠে, কি করে জানল বুড়িটা যে ও চাকরির জন্য বলতে এসেছে! এবার মন্দিরের পুরোহিত এত গোলমাল শুনে বাইরে এসে সবটা দেখেন তারপর ঠান্ডা মাথায় বলেন বাবা তুমি নতুন তাই জানো না এই মন্দিরে বাবার জন্মদিনে যারাই দুধ ঢালতে আসে মানত পূরণ করতে তারা সবাই ওকে একটু করে নিজেদের আনা দুধ দেয়। বাবা ওকে খুব ভালোবাসেন। ওকে দিলে তোমার সব মনস্কামনা পূর্ণ হবে। ছেলেটা কি মনে করে একটু দুধ পাত্রে ঢেলে দেয়। তার দেখা দেখি বাকি লোকরাও।

কিচ্ছুক্ষণ পরে দেখা যায় মন্দির চত্ত্বরে খেলতে থাকা সর্বাঙ্গে  ধুলো মাখা কিছু শিশু দের দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে বুড়ি বলছে,” বাবাকে বলেছি রে তোরা খেয়েছিস।বাবা ওদের সব ইচ্ছে এবার পূরণ করবেন।”

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *