দুর্গতিনাশিনী

“বড্ড বাড় বেড়েছিলো,আজ দিলাম সব শেষ করে”, জ্ঞান হারানোর আগে আবছা হয়ে এই কথাগুলোই শেষ কানে ভেসে এসেছিলো তানিশীর। যখন জ্ঞান ফিরলো সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা, আর চারদিক রক্তে ভেসে যাচ্ছে। দূরে কোথাও যেন ঢাক বাজছে মনে হলো।

ওই সন্ধি পুজো শুরু হলো মনে হয়, কাল যে মহানবমী। আর আজ মা দুর্গার মধ্যে প্রান সঞ্চার হবে, কিন্তু কিছুক্ষন আগেই যে মানুষ রুপী অসুরগুলো তানিশীর উপর চরম অত্যাচার চালিয়েছে তাদের নিধন কি সত্যি হয়? কি দোষ ছিলো ওর? ছোট থেকেই ডানপিটে স্বভাবের তানিশী যে কোনো ধরনের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে পিছপা হয়নি। তাইতো সেদিন পাড়ার দুর্গাপুজোয় কান ফাটানো মাইক বাজানোর প্রতিবাদে ক্লাবের ছেলেদের বিরুদ্ধে এসেছিলো ও পুলিশ এর ভয় ও দেখিয়েছিলো।
বাড়িতে বয়স্ক ঠাকুমা হাইপার টেনশান এর পেশেন্ট, এতো শব্দ সহ্য করতে না পেরে সেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। কিন্তু ক্লাবের সেক্রেটারি রানা স্থানীয় নেতার দক্ষিনহস্ত তাই তার প্রতিবাদে কাজ তো হয়নি উলটে ফল ভালো হবে না, সেটাও শাসিয়ে গেছিলো।

পুজোর চাঁদা থেকে ক্লাবের নামে তোলাবাজি সবই এই পাড়ার লোকেদের গা সওয়া হয়ে গেছে আজ। রানা কে সবাই সমঝেই চলে একটু, কেউ ঘাটায় না তাই তাকে।
কিন্তু তানিশী যে রেহাই পায়নি। অষ্ঠমীর দিন। হইহই করে বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখে ফেরার সময় পাড়ার রাস্তাটুকু একাই পার করছিলো ও। তখনই প্রায় বাড়ির দরজা থেকে একদল লোক তুলে নিয়ে যায় ওকে। তারপর ক্লাব এর পেছনের অন্ধকার টায় উফফ…
ওর অসাড় শরীরটা ভাসিয়ে দিয়েছিলো কাছের এক মজে যাওয়া খালের জলে। ভেবেছিলো মরেই গেছে। অষ্ঠমীতেই দেবীর বিসর্জনের কোনো ত্রুটি রাখেনি রানা সেন ও তার দল। কিন্তু…

(দুই)

বছর সাত পর,
“ম্যাডাম একটা বদমাইশ পালাতে গিয়ে এনকাউন্টারে মারা গেছে, বাকিরা আমাদের জিম্মায়। যেটা মারা গেছে তার পার্স খতিয়ে দেখে আমরা শিওর হয়েছি যে এই শয়তানটাই রানা সেন”। এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলেন এস.পি. রাও।
“পুরো যায়গাটা ভালো করে সার্চ করুন একটা এভিডিয়েন্সও যেন বাদ না যায়।”
গম্ভীর গলায় নির্দেশটা এলো এ.সি.পি ম্যাডাম তানিশী রায়চৌধুরীর কাছ থেকে।
“সব শিল করা হয়েছে ম্যাডাম। দুটো ল্যাপটপ, অনেকটা মাদক দ্রব্য, আর বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা গিয়েছে। যা প্রমান আছে তাতে প্রত্যেকের কম করে ১০ বছরের জন্য হাজতবাস নিশ্চিত। তাছাড়া ল্যাপটপ গুলো ইনভেস্টিগেট করলে আরো বড়ো কোনো মাথা সামনে আসবে মনে হয়।”
“কেঁচো খুড়তে কেউটে পাবো মনে হচ্ছে রাও।”

রাত কেটে ভোর হচ্ছে আস্তে আস্তে। আবার একটা দশেরার সকাল। সাত বছর আগে অসুর নিধন না করেই দেবী বিসর্জন হতে চলেছিলো, কিন্তু সেদিন মৃত্যু নিয়ে যেতে পারেনি তাকে, অদম্য জীবনীশক্তি নিয়ে তিলে তিলে পুনর্জীবন লাভ করেছে সে। আজ তার ক্ষতে মলমের চিহ্ন পরলো। সমস্ত অসামাজিক কাজে যুক্ত রানা সেন ও তার সঙ্গীরা দুর্গাপুজোর ব্যস্ততার মাঝে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে মাদক দ্রব্য ও অস্ত্র পাচার এর প্ল্যান করেছিল।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরেই তানিশী আর তার নেত্রীত্বে তৈরি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এর টার্গেটে থাকা রানা আজ আর জাল কেটে বেরোতে পারেনি। আজ দশেরাতে যা কিছু খারাপ সেই সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে অসুর নিধন সম্পন্ন করেছে দেবী।।

(সমাপ্ত)

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *