পার্থ ঘরে ঢুকে একটা হলুদ খাম ছুড়ে দিল বিছানার ওপর। তারপর অফিসের ব্যাগটা সেলফে রেখে জামাকাপড় ছাড়তে শুরু করলো।
বিছানায় মুখ গুজে শুয়ে থাকা তাপসী খামটা বিছানার ওপর হঠাৎ পাড়ায় খানিকটা আঁতকে উঠে বালিশ থেকে মুখ তুলে দিয়ে তাড়াতাড়ি চোখের কোনটা মুছে পার্থকে জিজ্ঞেস করল, এটা কি
উত্তর এলো, খুলে দেখো
সে কি? তুমি এসব কি ভাবছে পার্থ। আমি কিন্তু এমনটা চাইনা।
জানি।
তবে তোমার মা তোমাকে খুব ভালোবাসেন।
সব মা কি তার সন্তানকে ভালোবাসে। কিন্তু এটা দরকার।
না এ হয় না।
কেন লোকে তোমাকে খারাপ বলবে তাই?
হ্যাঁ তা নয় তো কী বলবে আমি বুড়ো বাবা-মার থেকে ছেলেকে আলাদা করলাম। আলোকে কি তোমার মাকে বলবে না?
তারা তুমি তোমার বাবা মাকে দেখো না তাদের প্রতি কর্তব্য করো না? কর্তব্য করতে কি একসাথে থাকতে হয়?
কিন্তু, ওরা সব বুঝবে না পার্থ।
ওদের কথা ছাড়ো তুমি আগে বোঝো। আর এখন কোন কথা বলব না এসব নিয়ে রাতে খাবার টেবিলে কথা হবে।
আজি বলবে।
সাবটা না তবে কিছুটাতো বটেই।
রাতে খাবার টেবিলে ভাতের থালা সামনে বসে পার্থ প্রত্যেক দিনের মতোই ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখা খাবারগুলোর ঢাকনা সরিয়ে সরিয়ে দেখতে শুরু করলো। এবং প্রতিদিনের মতোই পার্থর মা শীলাদেবী পার্থকে থামিয়ে বলল দাঁড়া আমি দিচ্ছি।
পার্থ বলল পটল পোস্ত, তবে ওটাই আগে খাই।
শীলা দেবী বলল, “ওটাতো তাপসী রান্না করেছে। ওটা ছার। সুক্তটা আমি করেছি। দেখ খেয়ে কেমন!
এতক্ষণ তাপসী ডাইনিং টেবিলে আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল। এটা ওটা একে দিচ্ছিল। হয়তো মনে মনে অপেক্ষায় করছিল। মায়ের কথাগুলো শুনে সামান্যতম মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন না করে, তাপসী কোন একটা কাজের আছিলায় বাইরের ঘরে চলে গেল।
এই ঘটনা প্রতিদিনের। তাই পার্থর ব্যাপারটা বুঝতে বেশি দেরী হলো না। তবে প্রতিদিনের মতো চুপচাপ খাওয়া-দাওয়া শেষ না করে, পার্থ শীলাদেবীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘মা তুমি এমন কেন করো?’
সিরাদেবী বলল, কি করি আমার ছেলে আমার হাতের রান্না ভালো খায় সেটা জেনেও অন্যের হাতে রান্না তাকে খেতে দেবো কেন তুই ভালো করে একটু পেট ভরে খাট খা সেটা চাও কি দোষের।
না না একেবারেই দোষের না কিন্তু কিছু চাওয়া-পাওয়া তপশীল তো আছে সেদিকে তো তোমার খেয়াল রাখতে হবে তুমি তো বড় বল।
ওর দ্বারা কিছু হবে না সারাদিন রান্নাঘরে পড়ে থাকলেই পাকা রাঁধুনি হওয়া যায় না।
তাহলে তুমি এমনি থাকবে নিজেকে একটুও পরিবর্তন করবে না করবে না আমার জন্য না। আমার মত শাশুড়ি ও ভাগ্য করে পেয়েছি ঠিক আছে তাহলে তোমাকে একটা সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি আমরা মানে আমি আর তাপসী বাড়ির পাশে যে নতুন ফ্ল্যাটটা হচ্ছে সেখানে একটা ফ্ল্যাটের বুকিং করেছি। তৈরি হলে ওখানেই চলে যাব তার মানে এটা ভেবোনা যে তোমার দেখাশোনাটা দেখফালের কোন খামতি আমি রাখবো। কিন্তু রোজ রোজের এই কলহ থেকে মুক্তি তোমার আমার সবার দরকার।
কলমে:মৌমিতা ভাওয়াল দাস