বিনোদ চৌবে, অশোক কামতে কে ছিল মনে পড়ে? হেমন্ত কারকারে, কমলেশ কুমারি, বিজয় সালাসকার? নামগুলো একদম অচেনা অচেনা ঠেকছে তাই না?
আচ্ছা একটা সহজ নাম বলি, তুকারাম ওমব্লে। নামটা শুনেই কি চোখের সামনে আবছা একটা মুখ ভেসে উঠছে? বেশ তাহলে এবার আবছা ভাবটা কাটিয়েই দিই। ২০০৮-এ মুম্বই হামলায় আজমল কাসাবের রাইফেল থেকে ছুটে আসা প্রত্যেকটা গুলি যে নিজের বুকে গেঁথে নিয়েছিল। এবার স্পষ্ট হল তো মুখটা? হ্যা, তিনিই সেই; ফটোতে মালা পড়ানো যার মুখটা বিশেষ বিশেষ দেশভক্তির দিনে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। আমরা স্যাড রিয়াকশান দিই, দুঃখ মাখা কমেন্ট করি, শেয়ার করি। আর তারপর ভুলে যাই! ছবিটাও ডিলিট করে দিই, পরবর্তী স্বাধীনতাদিবস কিংবা প্রজাতন্ত্রদিবসে আবার গুগল থেকে ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে বলে…
শুক্রবার সকালের পর এই তালিকায় আরেকটা নাম যুক্ত হয়েছে, অমিতাভ মালিক। হ্যা, সারাদিন ধরে যার খবর নিউজচ্যানেলগুলি কভার করছে। ফেসবুক, টুইটারে যাকে নিয়েই সারাদিন ধরে আলোচনায় মগ্ন সবাই। আপনার বাড়ির বয়স্করা “আহারে, এইটুকু ছেলে!” বলে যার জন্যে থেকে থেকেই হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন… আমি তার কথাই বলছি, এস.আই. অমিতাভ মালিক। এবার ভুলেও ভাববেন না যে আমি ওনার জীবনবৃত্তান্ত বা শুক্রবার সকালে ঘটে যাওয়া অঘটনের বর্ননা দিতে যাচ্ছি। আমি শুধু আপনাদের অভিনন্দন জানাতে চাই। হ্যাঁ, অভিনন্দন!
খুব বেশি হলেও একসপ্তাহ। কাগজে লেখালেখি হবে, বড় বড় খবরের চ্যানেল শহীদের বাড়ি ঘুরে আসবে, মোমবাতি মিছিল বেরোবে রাস্তায় রাস্তায়, “অমিতাভ অমর রহে” বলে স্লোগান তুলবে মিছিলে হাঁটতে আসা মানুষজন। অমিতাভ নামটা ফেসবুক হোয়াটস্যাপ মারফত প্রায় সবার কানেই পৌছে যাবে। চারিদিক জুড়ে হাহাকারের বন্যায় ভেসে যেতে থাকবো আমরা…
ঠিক তারপরই ‘দেওয়ালি’ পালন হবে দেশজুড়ে। যারা স্লোগান তুলেছিল, তারা একটা করে তুবড়ি-চড়কি তুলে নেবে হাতে। সবার নিউজফিড জুড়ে তখন আলো আর আলো। তারপর কোচবিহারের রাসমেলা, শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা, ক্রিসমাস, আমির খানের নতুন সিনেমার ফার্স্ট ডে কালেকশন ইত্যাদি ইত্যাদি অভিতাভ মালিককে আমাদের থেকে নিয়ে যাবে অনেক অনেক দুরে…
একটু একটু করে অমিতাভ মালিক নাম লেখাবে অজিত সিং, অজয় কুমার, রণবীর প্রসাদ, বিনোদ কুমারদের দলে! যে নামগুলো হঠাৎ করে শুনলে আমাদের ভীষণ ভীষণ অচেনা ঠেকবে।
এবার প্রশ্নটা হচ্ছে অভিনন্দন কেন?
ওই যে একটা নতুন নাম পেলেন। দেশের জন্যে, দশের জন্যে যখন কিছু বলবেন তখন ওই যে শোকপ্রকাশের আরেকটা নতুন মাধ্যম পেলেন। তাই অভিনন্দন!
জানি, সব ঘটনা মনে থাকার কথা নয়, সব নামও মাথায় থাকার কথা নয়। তবুও ব্যক্তিগত জীবনের সাথে জড়িত যে কটা নাম, যে কটা ঘটনা আমাদের মাথায় প্রতিদিন ঘুরপাক খাচ্ছে, আমরা চাইলেও ভুলতে পারছি না, তা আমরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারি বলেই। আর আজ আমরা স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারছি কারন এনারা নিজের জীবনের পরোয়া না করে আমাদের স্বার্থেই লড়াই করে গেছে একদিন, আমাদের স্বার্থেই লড়াই করে যাচ্ছে… আমাদের স্বার্থেই আগামিতেও…
তবুও জোর করে মনে রাখবেনই বা কেন? মনে না রাখা তো আর কোনও অপরাধ নয়! তাই দেশভক্তির বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে মালা পরানো ছবি দেখিয়ে দুলাইন শোকপ্রকাশ করার চাইতে এনাদের “নাই বা মনে রাখলে…”!!