পরিযায়ী শ্রমিক, নামটা শুনলেই মনে হয়, এই সময় তারা, কতটা কষ্ট করছে। কি তাই তো ? একদম ঠিক, আজ এই রকম একটি, ছেলের কথা বলবো। ছেলেটির নাম সুমন। তার বাবার একটা, ছোট্ট চায়ের দোকান আছে। সেখান থেকে যা উপার্জন হয়, তাই দিয়েই তাদের সংসার কোনো রকমে চলে যায়। সুমন পড়াশুনার সাথে সাথে, সে তার বাবাকেও দোকানে সাহায্য করে। ছোট বেলা থেকেই সুমন পড়াশুনায় খুব ভালো। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং কলেজে গিয়েও সে খুব ভালো রেজাল্ট করে।
লেখাপড়া শেষ করে ভেবেছিল, মা ও বাবার কাছে থেকে, তাদের সেবা যত্ন করবে। অনেক চেষ্টা করেও, একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলো না সে। সুমনের এক বন্ধু ও তার বাবা, দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিক। সুমনের আর্থিক পরিস্থিতির কথা শুনে, তাকে সেই বন্ধু দিল্লিতে যেতে বল
এটাও পড়তে পারেনশ্রমিক যখন পরিযায়ী, প্রশ্ন মানবিকতার!
কিন্তু সুমনের মা কিছুতেই, পরিযায়ী শ্রমিক হতে দিতে রাজি হয় না। আসলে মায়ের মন তো, তাই ছেলে বাইরে যাবে, সেটা মেনে নিতে পারে না। তবুও উপায় যে নেই, চাকরি যে হলো না। বাবার আর্থিক অবস্থাও ভালো না যে, ব্যবসা করবে।
মায়ের অনিচ্ছা থাকা সত্বেও, সে চলে গেল দিল্লিতে।সেখানে গিয়ে, একটা কোম্পানিতে চাকরি পেল।
বেশ ভালোই বেতন পেতে শুরু করলো। এদিকে বাবা ও মা দুজনেই, ছেলেকে বাড়ি চলে আসতে বলে। সুমনের মা বলে ” আমাদের টাকা পয়সার দরকার নেই, তুই চলে আয়, এখানে সবাই এক সাথে থাকবো। তোকে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে, ওখানে থাকতে হবে না।”
সুমন দিল্লি থেকে টাকা পাঠাতে থাকে। বাবাকে বলে, বাবা,” তোমাকে আর দোকান করতে হবে না। এখন আমি যা উপার্জন করি, আমাদের খুব ভালো ভাবেই চলবে।” যদিও বাবা চায়ের দোকান বন্ধ করে না। ছেলে এখন টাকা পাঠায়, তাই আর অভাব নেই ঠিকই, তবুও সময় কাটানোর জন্য, বাবা দোকান ছেড়ে দেয় না।
হঠাৎ সারাবিশ্ব জুড়ে শুরু হলো, ভয়ঙ্কর মহামারি, “করোনা ভাইরাস”। সুমন বাড়ি আসার আগেই, lockdown শুরু হয়।
এদিকে সুমনের মা অসুস্থ হয়ে পরে। ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তার বলেন “উনি বেশিদিন বাঁচবেন না। ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে”। মা তো ছেলেকে দেখার জন্য, ব্যাকুল হয়ে পড়েছে। একটু দেখার জন্য ছটফট করছে। ওদিকে ছেলেও মায়ের কাছে আসার জন্য, প্রাণপণ চেষ্টা করছে। কিন্তু উপায় তো নেই। ছেলে আসবে কি করে? কিছুদিন পর সুমনের মা মারা যায়। শেষবারের মতো মা ও ছেলে কেউ কাউকেই, দেখতে পারলো না।
সুমনের বার বার শুধু, একটা কথাই মনে হতো, যদি মায়ের কথা শুনে দিল্লিতে না আসতাম! আজ পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার কারণে, শেষ বারের মতো মাকে দেখতে পারলাম না। মা মানা করার পরও চলে এসেছি। নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো না।