- ছোটোবেলা থেকেই খুব বায়না করতাম। বড়ো বেলাতে এসে বায়না ধরেছিলাম একটা পোষ্য নিয়ে আসার জন্য। প্রথমে সবার আপত্তি থাকলেও পরে রাজি হয়ে যায়। ৩রা জানুয়ারী বাড়িতে একটা ছোট্ট বাচ্চা কুকুর নিয়ে আসে। প্রথমবার দেখেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। মায়াবী চোখের সেই দৃস্টি, নিস্পাপ শান্ত মুখ … এ কথায় অসাধারণ, পাগল করে দেওয়ার মতো।
প্রথমে ওর নাম রেখেছিলাম ‘লাকি’। কিন্তু এই নামে ডাকলে ও কিছুতেই কাছে আসত না। হয়তো নাম টা ওর পছন্দ হয়নি। তাই দ্বিতীয় বার নাম দেওয়া হয় ‘বোজো’। সব কথা মন দিয়ে শুনতো। ওকে নিয়ে সারাক্ষণ কেটে যেত। দিন কখন যে রাত হয়ে নেমে আসতো বুঝতেই পারতাম না। আমি কলেজে গেলে আমার ফেরার অপেক্ষায় না খেয়ে বসে থাকত। ভালোবাসার কাঙাল ছিল। সবসময় কোলে থাকতে চাইতো। সবাই কে ও যেমন ভালোবাসা দিতে জানতো, তেমনি সবার কাছ থেকেই ভালোবাসা আদায় করে নিত। যখন অন্যায় করত, বকলে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তো। ওর কস্ট দেখলে আমাদের কস্ট হতো। তাই ওকে আর কোনদিন কিছু বলতাম না, যতই অন্যায় করুক।পোষ্য টা খুব রাগি আর বড্ড অভিমানী ছিল। ভালোবাসার ভাগ কাউকে দিতে পারতো না। ওই পোষ্য টা ছিল আমাদের সবার নয়নের মণি। কেউ কখনও ওকে চোখের আড়াল হতে দিতাম না।
ঠিক এক বছর পর,সেদিন ছিল ১৬ই জানুয়ারি। রোজকার মতোই দুপুরে ভাত খেয়ে ওপরে ঘুরে এসে, বিছানায় শুয়ে ঘুমাতো আমাদের সাথেই। সেদিন ওপর থেকে নামছিল না দেখে বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করেছিলাম। তাতেও নামেনি। বাড়ির লোকজন ওপরে উঠে দেখে ও মারা গেছে। পোষ্য টার মৃত দেহ যখন নামিয়ে নিয়ে আসে, আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। মিনিট দশেক এর মধ্যে একটি জলজ্যান্ত প্রান শেষ। সবাই খুব ভেঙে পড়েছিলাম। বোজো এইভাবে চলে যাবে আমরা ভাবতেই পারি নি। ও চলে যাওয়ার পর সারা বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়।
পোষ্য টার মৃত্যুর পর ছাদে ওর ছোট ছোট পায়ের চিহ্ন, ওর সকল দুস্টুমি স্মৃতি হয়ে থেকে যায়। ও মারা গেছে আজ ৭ মাস হয়ে গেল .. আজও ওকে ভুলতে পারিনি। ওর ডাক, ওর চোখের চাহনি সবকিছু আজও জ্বলজ্বল করে আমার মনে। আচমকা মনে হয় ঘরের ভেতর ও ঘোরাঘুরি করছে। আজও ওর কথা ভাবলে চোখ দিয়ে অশ্রূ গড়িয়ে পড়ে। তবে সবসময় প্রার্থনা করি প্রিয় বোজো যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। ওর আত্মার শান্তি কামনা করি।