ফ্রেমে ও অন্তরালে
Shutterbugs— নামটা দেখে মানেটা অনেকটাই আন্দাজ করা যায় তবু লেখার খাতিরে একটু বুঝিয়েই বলছি নাহয়। এরা একধরণের অপেশাদার ফটোগ্রাফার যারা কেবল নিজেদের উৎসাহের বশে ছবি তোলে। তবে এদের ছবি তোলার বিষয়টা খুব মজাদার কারণ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন স্মৃতিকে একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমে বাঁধিয়ে নেওয়াই এদের নেশা। কিছুটা সাধারণ জীবনের ছোট্ট ছোট্ট মুহূর্তকে সময়ের অন্তরালে যাওয়ার আগেই চোখের পলক ফেলার মধ্যে লেন্সবন্দী করতে এরা দক্ষ।
একটু দেখে নেওয়া যাক এরা কেমন ধরণের সাবজেক্ট খোঁজে ছবি তোলার জন্য। সেরকমভাবে শ্রেণীবিভক্ত করা না গেলেও এদের সব ছবির বিষয়ের মধ্যে একটা মিল আছে। সাধারণত যে ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো খুব দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয় এবং যেগুলোকে অনুভব করার জন্য আমাদের ব্রেন পর্যাপ্ত সময় পায়না সেই মুহূর্তের ছবিই এদের বিষয় যেমন— বিদ্যুৎের চমকানি, চাষির ধান তোলার মুহূর্ত, সন্তানকে তার মায়ের আদর করার মুহূর্ত, একে অপরকে আলিঙ্গন করার মুহূর্ত কখনো কারোর হাসির মুহূর্ত আবার কখনো বা কারোর ‘candid’ ছবি।
এরকম বিভিন্ন ছবি তোলা বা shutter-এর খোঁজে থাকে এরা তাই এদের Shutterbugs বলা হয়। তবে এই bugging করতেও যে কত ঝামেলা তা একটু বলা যাক। আমি নিজেই একজন shutterbug তাই নিজের একটা ছোট অভিজ্ঞতা বলছি। কলেজের ছুটিতে ধর্মতলা চত্বরে ছবি তুলতে গেছিলাম আমাদের ফটোগ্রাফি ক্লাবের থেকে ক’জন মিলে। বিভিন্ন সবজিওয়ালাদের ছবি, দোকানদারের ছবি, একটা পার্কে বাচ্চারা খেলছে এসব ছবি তুলছি, হঠাৎ দেখি একটা পুলিশ আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলে, “এই তোমরা এখানে কী করছ? কোন সংস্থার হয়ে কাজ কর? ছবি তুলছ কেন!”
এসব শুনে তো আমরা চাপে, উনি বলেন আমাদের জরিমানা হবে, থানায় যেতে হবে! শেষে অনেক কষ্টে আমাদের ID proof দেখে, আমাদের তোলা সব ছবি দেখে উনি আমাদের ছাড়েন। এরকম ঘটনার সাক্ষী হয়তো অনেক ফটোগ্রাফারই হয়েছে।
যাই হোক এসব সমস্যা ফেস করেও একজন shutterbug-এর পেশা ও নেশা অব্যাহত থাকে। হয়তো এরা কোনো প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার নয়, এরা হয়তো এদের ছবি নিয়ে ব্যবসাও করেনা কিন্তু এদের বা আমার মতন চিত্রগ্রাহকের কাছে ছবি তোলাটা একটা নেশা। বাস্তবের অন্তরালে এমন কিছু মুহূর্তকে সারাজীবনের জন্য বাঁধিয়ে রাখাই আমাদের উদ্দেশ্য যেখানে লেন্সের কিছু shutter আমাদের কাছে অকপট স্মৃতি বহন করে।