অনেকদিন বিদেশের মাটিতে কাটানোর পর, দুর্গাপুজো উপলক্ষে দেশে ফিরে এসেছে অভি, ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কাজের সূত্রে বিদেশের মাটিতে পাড়ি দেয় সে। বিমানবন্দরে বন্ধুদের নিতে আসার ইচ্ছা থাকা শর্তেও,অভির কথাতে তারা কলেজ জীবনের প্রিয় চা-এর দোকানে অপেক্ষায় থাকে। ছোটোবেলার বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক আজও অটুট রয়েছে তাদের মধ্যে।অভির কাছের বন্ধু বলতে চারজন, অমিত ও রহিত দুজনে ব্যাঙ্কে, রাহুল ব্যবসায় আর সৈকত অনলাইন মার্কেটিং কাজে নিযুক্ত।
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অভি চায়ের দোকানে এসে পৌঁছালো, তার ফিরে আসাতে আনন্দে ভরে উঠেছে বন্ধুদের মন।
-” কী ভাই লোক পুজোর মেজাজ কেমন রয়েছে?”
-” তোর ফিরে আসাতে পুরনো মেজাজগুলো আবার ফিরে পেলাম।”
-” চল এবার সব চায়ের চুমুকে দিনটা শুরু করি।”
আনন্দের সুরে রোহিত বলে উঠল
-“দেবুদা পাঁচটা স্পেশাল চা চটপট বানাও। ”
চায়ের দোকানের মালিক দেবু অবাক হয়ে বলল
-” আরে বাহ্, সব বাবুরা আমার দোকানে। তারপর কেমন আছো তোমরা সকলে?”
খবরের কাগজটা হাতে তুলে ধরে রাহুল বলল
-” পুরনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে বড় খুশিতে আছি, তুমি কেমন আছো বলো?”
-” সারাদিন দোকানের সাথে থাকতে থাকতে দিন কেটে যাচ্ছে।”
কাঁচের গ্লাসে গরম চা ঢালতে দেখে অভি বলল
-” আরে দেবুদা কি করছো?কাঁচের গ্লাসে কেন? মাটির ভাঁড় কোথায়?”
-“তোমরা কত বড়লোক মানুষ, কাঁচের গ্লাস ছাড়া চলে কী?”
-” ধুর,তুমি কি বলো না, মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়ার স্বাদটাই আলাদা, তুমি মাটির ভাঁড়ে দাও।”
-” নাও তৈরী তোমাদের স্পেশাল চা।”
-” অনেক তো অনলাইনে কাজ করলি, এবার অফলাইনে চায়ের ভাঁড়গুলো আমাদের হাতে তুলে দে সৈকত আর রহিত..”
-” জানি ভাই, তোর তো আবার গুড ডে বিস্কুট গরম চায়ে ডুবিয়ে না খেলে দিন ভালো যায় না।”
মাটির ভাঁড়ে পরিপূর্ণ চায়ে চুমুক দিয়ে অভিকে অমিত বলল
-” ভাই ,তোর এখন কি দেশের চা ভালো লাগবে? কত নামীদামী চা-এর স্বাদ পেয়েছিস বিদেশে?”
-” আরে ভাই, দেশের চা পাতার যে কী সুন্দর গন্ধ, তা কী করে বোঝাবো তোকে? এই চা- এর চুমুকের মাধ্যমে আমার পুরোনো স্মৃতিগুলো ফিরে পাই।”
নানা কথার ছলে ভাঁড়ের এককোণে পড়ে থাকা চায়ে চুমুক দিয়ে অভি বলল
-“দেবুদা, আরও এককাপে করে চা দাও সবার জন্য।”
দোকানের রেডিওর মাধ্যমে ভেসে আসছে গান
“বন্ধু চল.. রোদ্দুরে..
মন কেমন.. মাঠজুড়ে..
খেলবো আজ ওই ঘাসে
তোর টিমে তোর পাশে”
গানের সুরে ফিরে আসে পুরনো খুনসুটি আর জমিয়ে ওঠে তাদের চায়ের আসরটি।।
সমাপ্ত