॥ মাংস নৈব নৈব চ ॥
– সুমি,ওই সুমি কোথায় আছিস তুই? তোকে ডাকতে ডাকতে তো পেটের নাড়িভুঁঁড়ি এক হয়ে গেল রে!
বলাবাহুল্য এখানে সুমির মা বসুন্ধরা দেবী সুমির জন্য বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে অন্তত অাধঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছেন। এদিকে অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পাওয়ায় যারপরনাই উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। অগত্যা মেয়ের কোনো টিকি খুঁজে না পেয়ে পায়ের ব্যথা নিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিজেই চললেন মেয়ের ঘরের দিকে। ওদিকে সুমি তখন ব্যস্ত বন্ধুর সাথে ফোনে কথোপকথনে।
– হ্যাঁ, রাইমা, যাই বল আর তাই বল! আমাদের ডিপার্টমেন্টের নতুন স্যারের ওপর আমি পুরোপুরি ক্রাশ খেয়ে গেছি। উনি যদি বিরিয়ানি হন তো আমি বিরিয়ানির আলু হতেও রাজি।
– এই যে শোনো, তুমি অালু হও আর মাংস হও এখন এই বিরিয়ানিটুকু খেয়ে উদ্ধার করো আমায়!
মায়ের এরকম আচমকা প্রবেশে সুমি যারপরনাই ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেও বিরিয়ানি দেখে নিজেকে সামলে নিল।
– মা! বিরিয়ানি! তুমি আমার মনের কথা ধরে ফেলেছো মাগো, আসলে আজ সকাল থেকেই না মনটা আমার বিরিয়ানির জন্য চঞ্চল হয়ে উঠেছে।
তাই বিরিয়ানির প্লেটটা একপ্রকার মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গপাগপ মুখে পুরতেই কিছু একটা জিনিসের তীব্র অভাব অনুভব করল সুমি। আরে! বিরিয়ানির আসল দোসরই তো গরহাজির! বিরিয়ানিতে তো মাংসটাই নেই।
– মা… এ কেমন বিরিয়ানি! মাংস কই?
– মাংস খাবে? যাও তবে ভাগাড়ে। আমি বাপু খাওয়াতে পারবোনা।
একনিমেষে বিরিয়ানি খাওয়ার সমস্ত আনন্দটাই কর্পূরের মতো উবে গেল। ইশশ্! ভেজ বিরিয়ানি আবার মানুষে খায় নাকি!
***************************************
টিউশনে যাওয়ার পথে চারপাশের ফুড স্টোর আর রেস্তোরাঁগুলো যেন সুমিকে দু’হাত বাড়িয়ে ডাকছে কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দিতে গেলেই মায়ের সেই নির্মম কঠিন উপদেশ কানে বাজছে… “সুমি বাইরের সব ভাগাড়, মনে থাকে যেন!”
এমতাবস্থায় পেট আর মনের জটিল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব শেষে পেটেরই জয় হল যেটা অনিবার্য ছিল। সুমি মনকে বোঝাল যে সব মাংস খারাপ হতেই পারেনা! এসব ভাগাড়ের নামে ভয় পাওয়ানো মায়ের নিষ্ঠুর চক্রান্ত। অতএব পেটকে শান্তি দেওয়াই আবশ্যিক কর্তব্য ভেবে সুমি গরমাগরম এক প্লেট ‘চিকেন বিরিয়ানি’র প্লেটে হামলে পড়ল।
বাড়িতে ঢুকতে বেশ কিছুটা দেরী হয়ে গেল আজ। টিউশনে বেশিক্ষণ পড়িয়েছে বলে কোনোরকমে মাকে ম্যানেজ করল সুমি কারণ বিরিয়ানি খাওয়ার কথা কোনোভাবেই ফাঁস করা যাবেনা। হঠাৎ বাবা-মায়ের কথোপকথনের কিছু অংশ ভেসে এল…
– শুনছো, স্টেশনের কাছে ওই নাম করা বিরিয়ানির দোকানের মালিককে ধরেছে পুলিশ। এইমাত্র পাড়ার রোহিত দা বলছিল, এই ৫-১০ মিনিট আগেই নাকি ওই পচা ভাগাড়ের মাংস সমেত ব্যাটাকে হাতেনাতে পাকড়াও করেছে।
– সেকি গো! তাই তো সুমিকে আজ বারবার বলে দিয়েছিলাম যে রাস্তায় যেন কোথাও না খায়।
অপর প্রান্ত থেকে এসমস্ত শুনে সুমির মুখে কালো মেঘের ছায়া নেমে এল। ভয়ে, আতঙ্কে সে বলতে শুরু করল…
– মা, ও মা আমার পেটটা যেন কেমন…
– ওমা সেকিরে, কিছু তো বাইরের খাবার খাসনি ক’দিন ধরে… তাহলে?
– মা… আসলে…
উত্তেজনার বশে সমস্ত সত্যি কথা পুঙ্খানুপুঙ্খ মায়ের কাছে স্বীকার করে নিল সুমি।
– তবে! আর খাবি? না জানিয়ে বাইরের কিছু?
– না মা… কক্ষণো না।
– তবে শোন, আসলে কাউকে পুলিশে ধরেনি, ভাগাড়ের মাংসও পায়নি। তবে আজ তোর বাবা স্টেশনের পাশ দিয়ে ফেরার সময় দেখে নিয়েছিল তুই বারণ সত্ত্বেও ওই যেখানে সেখানে বিরিয়ানি খাচ্ছিস! তাই আমি আর তোর বাবা দুজনে মিলে তোকে জব্দ করার জন্য তোকে শুনিয়ে শুনিয়ে ওই দোকানের মালিকের পুলিশে ধরা পড়ার মিথ্যে গল্প ফাঁদলাম যাতে তুই নিজের থেকেই সবটা স্বীকার করিস।
– দেখ মা, আজ হয়তো ওই বিরিয়ানি খেয়ে তোর কিছু হয়নি, কিন্তু কাল যদি সত্যি সত্যিই ওই মাংসের আসল রহস্য উন্মোচন হয় তখন কোন ভাগাড়ে যাবি তুই?
– তাহলে কী ঠিক করলি কাল থেকে?
– মা… ও মা… ভেজ বিরিয়ানি জিন্দাবাদ! সামনের দোকান থেকে চটপট ওই এক প্যাকেট আলু বিরিয়ানি কিনে আনি যাই! জয় আলু বিরিয়ানির জয়! ভাগাড়ের মাংস তুমি ভাগাড়েই থাকো!