মাছেরা যখন পরিযায়ী, ‘জল-জ্যান্ত’ দের অল্পস্বল্প গল্প

পরিযায়ী শব্দটা মাথায় এলেই কি ‘মাছেরা’কথাটা আসে? যেমন ধরুন পাখি, ভ্রমণ প্রিয় মানুষ আর অবশ্যই মাছ। হ্যাঁ মাছেরা। শুধু একে বাঙালি খাদ্যতালিকার প্রধান করেই রেখে দেবেন নাকি ‘জল-জ্যান্ত’ উদাহরণ হিসেবেই রেখে দেবেন? কিন্তু কেন? চলুন তাদের সংসারের আনাচেকানাচে একবার ঢুঁ মেরে আসি আর কেন’র আগেই দাঁড়ি টানতে পারি কিনা দেখি!
প্রতিবছর ২৪ তারিখ বিশ্ব পরিযায়ী মৎস দিবস পালিত হয়। মাইগ্রেশন বা পরিযায়ের জন্য এক প্রকার মাছেরা প্রায় ৩৫০০ মাইল পথ অতিক্রম করে, লক্ষ্য বংশের বাতি দেওয়া। তা কি ভাবলেন একা একা যায়? নৈব নৈব চ, একেবারে সপরিবারে অথবা পাড়া-পড়শি, আত্মীয়স্বজন নিয়ে মিলিয়ে হই হই করতে করতে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দলে থাকলে সবাই যেমন ভালো খাবার খেতে পারে, তেমনি শত্তুরের মুখেও ছাই দেওয়া যায় বইকি!

এবার ক’জনের সাথে একটু আলাপচারিতা সারি চলুন।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্যামন বা বাংলার গাঙ্গেয় ইল্ মাছেরা কেবলমাত্র জীবনসঙ্গী নিয়েই প্রজননের জন্য পরিযায়ী হয়।
ম্যাকারেল বা সার্ডিন মাছের ঝাঁক কেবল সমবয়সীদের সাথেই মজা করে এগোতে থাকে। আমাদের প্রিয় পরিযায়ী ইলিশ মাছও সমগোত্রীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
গরমে ঠান্ডার দেশে পাড়ি দিতে কে চায় না বলুন তো? তেমনিই ইউরোপীয় হরিং, কড মাছেরা শীতের সময় দঃ পাড়ি দিয়ে উঃ সাগরের ইংল্যান্ড- স্কটল্যান্ডের পাড়ে কাটিয়ে বসন্তের শুরুতে নরওয়ে সাগরে ফেরে।
পরিযায়ী ব্রাউনট্রাউট এবং রেনবোট্রাউটের জন্ম হয় ঝর্ণারজলে। লেকের জলেই জন্ম হয়, জন্মস্থানের স্মৃতি কিন্তু টান টান থাকে।


আমাদের এদেশীয় রুই,কাতলা, মৃগেল ইত্যাদি মাছেরা নদীবক্ষের সুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিবাসীবৃন্দ। এরা বর্ষাকালে নদীপাড় বরাবর অপেক্ষাকৃত কম জলে আসে এবং আগামী প্রজন্মকে পৃথিবীর আলো দেখায়।
বেশ কিছু পরিযায়ী মাছ রুটিন মেনে চলে, একদম অফিসের মতো, অন্যথা নয়। এই ধরুন সকালের খাবার সংগ্রহে বেরোয় আবার একদম সন্ধ্যের মধ্যেই বাড়িমুখো। রক্ ইল বা প্রবালের মধ্যে থাকা ক্লাউন মাছ এই ধরনের। শিঙ্গি, মাগুর, চ্যাং আবার রাতের অতিথি, এরা দিনের বেলা নিশ্চুপ। পরিযায়ী মাছেদের এই স্বভাব কিন্তু স্বভাবদোষ নয়, বরং এতে এদের শারীরিক বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।


আচ্ছা আপনারা কি মাইলের পর মাইল কোথাও রওনা দিলে রাস্তা ভোলেন? আমি তো ভীষণ ভুলোমনের। কিন্তু এই পরিযায়ীদের মাছেরা একদম ভুলে যায় না। স্যামন মাছেরা প্রায় পাঁচ- সাত বছর ধরে পরিণত হয়ে প্রজাতির ঋণ শোধ করবার সময় এলে , কয়েক হাজার মাইল নির্ভুল পথে পাড়ি দিয়ে জন্মস্থানকে চিনে নেয়। শুধু স্যামন কেন শত শত পরিযায়ী মাছের জন্মস্থানের স্মৃতি একেবারেই অমলিন থাকে। এই ভাবেই পৃথিবীর সুপ্ত অতলে ডুবে ডুবে জলে থেকে কত কি কান্ড ঘটায় এরা, সেটা বয়ে নিয়ে চলা আরেক রহস্যরোমাঞ্চ সিরিজই বটে।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *