রাধা বিবাহ করলেন আয়ান ঘোষকে কিন্তু প্রেম করলেন শ্রীকৃষ্ণে।চরম অসামাজিক ব্যাপার। তর্কের ভিত্তিতে কাঠগড়ায় স্বয়ং ভগবান। শ্রীকৃষ্ণ লম্পট ও দুশ্চরিত্রা ছিলেন।
সুন্দর বিরহ, মনে হবে যেন/ কেন কাঁদে বধূবালা।
পরজনমে আমারই মতোন, রাধা হয়ো গো তুমি প্রিয়।
পদে পদে বাধা,কলঙ্কিত হলেও কৃষ্ণপ্রেম ত্যাগ করতে পারেনি রাধা। পরকীয়া প্রেম ধার্মিক,কৃষ্ণ ভক্ত মানুষ অবলীলায় গ্রহণ করবে। বিশেষ করে যাদের বিশ্বাস কীর্তন শোনা,সাধুসঙ্গ করবে তারা বৈতরণী পার হবে। তাই আসরে বাদাম খেতে যাওয়া বা ঘরের গল্প করতে অভ্যস্ত মানুষ কৃষ্ণের পরকীয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবেননা। গর্হিত অপরাধ।
তাহলে কি ধরণের প্রেম করেছিলেন রাধা ও কৃষ্ণ? যারা নাস্তিক বা কৃষ্ণভক্ত নয় তারা এই প্রেম নিয়ে, কৃষ্ণ চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আয়ান ঘোষের অক্ষমতার জেরেই নাকি রাধা কৃষ্ণের সান্নিধ্য চেয়েছিলেন। তাত্ত্বিক ভাবে তার কোনো প্রমাণ কিন্তু মেলেনা। শারীরিক সম্পর্ক কখনোই প্রেমের আসল মিলন সে কথা বলেনা।
দুটো প্রশ্ন করতেই পারেন । এক, কৃষ্ণ যদি ভগবানই হবেন তাহলে রাধা তার স্ত্রী কেন হলোনা? এবং দুই,আয়ান ঘোষ কে ছিলেন কেনই বা তিনি স্ত্রী হিসেবে রাধাকে পেয়েও প্রেম অধরা থাকলো কেন?
তত্ত্ব কি বলে?
মধুর রস প্রেমের প্রধানত দুটি ভাগ। স্বকীয়া এবং পরকীয়া। স্বকীয়া হল স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার প্রেম।
পরকীয়ার আবার দুটি ভাগ- পরের কন্যার সাথে। যা সচরাচর দেখা যায়। এবং পরস্ত্রীর সাথে প্রেম।
ভগবান বিষ্ণু তার শ্রীকৃষ্ণ অবতারে এই পরকীয়ার পথ বাছলেন। কারণ, এই প্রেমে বাধা বেশি।বাধা যেখানে বেশি সেখানে মিলনের আনন্দ বেশি এবং বিরহে ব্যাথা বেশি। সংস্কৃত কবি বলেছেন,
সংগমবিরহবিকল্পে বরমপি বিরহো ন সংগমস্তস্যাঃ/ সঙ্গে সৈব তথৈকা ত্রিভুবনমপি তন্ময়ং বিরহে।
অর্থাৎ সংগম এবং বিরহের মধ্যে বরং বিরহ ভালো, তবু সংগম কিছুনা। কারণ, মিলনের অবস্থায় সে একা আমার কাছে থাকে মাত্র, আর বিরহাবস্থায় ত্রিভুবন তাতেই পুরে যায়।
পরকীয়াকে শ্রেষ্ঠ জেনে দ্বাপর যুগে নিজের শক্তিকে লক্ষীকে রাধা সাজালেন।
এটাও পড়তে পারেন – কপোত-কপোতীর প্রেমআয়ান ঘোষ বঞ্চিত কেন?
তাত্ত্বিকভাবে তার সাধনা সফল হয়েছিল। পূর্বজন্মে তিনি ছিলেন অভিমন্যু মুনি। নারায়ণের স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী রূপে পাওয়ার বাসনায় কঠোর তপস্যা করলেন। ভগবান আশস্ত করলেন।মুনির সাধনার ফল হিসেবে নপুংসক আয়ান ঘোষ রূপে জন্ম নিলেন। রাধা তার স্ত্রী হলো। এবং একই সাথে শ্রেষ্ঠ পরকীয়া প্রেমলীলা করলেন।