রোগা হওয়ার বড় জ্বালা!

রোগা হওয়ার বড় জ্বালা!

হাই! চিনতে পারলেন না তো? তা অবশ্য না পারারই কথা। আমি রীতি। রীতি সরকার। আমি একজন কলেজ পড়ুয়া, বেসিকালি চাপে-চাপে চেপে যাওয়া পাবলিক। কিন্তু হেব্বি সাহসী! আমি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী! তাহলেই বুঝুন!

আজ আমি আপনাদের সাথে আমার দুঃখ শেয়ার করতে এসেছি। হ্যাঁ, আমি জানি, আপনি ভাবছেন যে চেনাজানা নেই হঠাৎ মরতে দুঃখ প্রকাশ করা কেন?! কিন্তু কি বলুন তো, বিশাল বোর হচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম আপনাদের সঙ্গে গপ্পো করি! তা শুরু করি, কেমন?

আমি অত্যন্ত রোগা একজন ব্যক্তি। ইয়ে, মানে, অত্যন্ত ঠিক না, কিন্তু রোগা। আর সেটাই হচ্ছে আমার দুঃখ। এইই না, না, না! মারতে তাড়া করবেন না! আমি জানি আপনি কি ভাবছেন। ভাবছেন, মানুষ রোগা হতে চায় আর এই মেয়ে রোগা বলে দুঃখ করতে এসেছে! আসলে, আমি রোগা, সেটা নিয়ে আমার কোনো প্রব্লেম নেই; প্রব্লেমটা আমি রোগা বলে আমার ওপর হওয়া জুলুমগুলো নিয়ে। হাসছেন? তা তো হাসবেনই। আমার জ্বালা আপনি তো আর সইছেন না, হাসুন, আর কি!
কী? কী বলছেন? ঝেড়ে কাশব? তা কেশেই ফেলি। আমি এক খাদ্যপীড়িত মানুষ। নতুন শব্দ, তাই না? হ্যাঁ, এটা আমি আবিষ্কার করেছি। কেন, তা একটু শুনলেই টের পাবেন।

আমার চেহারা নিয়ে আমার মা জন্মাবধি চিন্তিত। মেয়ে এত রোগা কেন, খায় না কেন, কী করলে মোটা হবে― এই সমস্ত প্রশ্ন মায়ের মাথায় ঘুরঘুর করতো, ইনফ্যাক্ট এখনো করে। এবং এই সমস্ত প্রশ্ন আমার আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে শুনে-শুনে, একরকম জেরায় জেরায় জেরবার হয়ে গিয়ে মা আমার উপর “গ্রিন রেভলুশন” শুরু করে দিল। সবুজ যা কিছু পাচ্ছে, আমার পেটে চালান করে দিতে পারলে যেন হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যাচ্ছে! আমার অনেক ভাগ্য যে আমায় ঘাস খাওয়ায়নি! অবশ্য বলা যায় না, খাইয়ে দিতে পারে কোনদিন!

তা, আমি তো সুবোধ বালিকা নই যে আমায় ঘাস-পাতা দেবে আর আমি গপাগপ খেয়ে নেব। আমি আমার দিকে থেকে তীব্র বিরোধ চালিয়ে যাচ্ছিলাম― চিৎকার, কান্না, ঘুষি, হাত-পা ছোঁড়া, মাকে থালা হাতে সারা বাড়ি দৌড় করানো― কিচ্ছু বাদ দিইনি। ফল কী হল জানেন? ঘাস-পাতার সঙ্গে উত্তম-মধ্যমও চলতে থাকল!

তাও আমি হার মানিনি। বিরোধ চালিয়ে গেছি। আর এইরকমভাবে জুলুমের জীবন চলে এসেছিল আমি ক্লাস সিক্সে ওঠা অবধি।

তারপর, আমার জেদের কাছে মা নিজেই হাল ছেড়ে দিল! আর আমি বিরিয়ানি, চিকেন, চকোলেট, চিপস― এই সমস্ত উপাদেয় খাদ্য নিয়ে সুখে থাকতে শুরু করলাম। বিশ্বাস করুন, মা হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় নিজের উপর যা গর্ব হচ্ছিল না, কি আর বলব! আহা! বেশ “মোগ্যাম্বো খুশ হুয়া”-মার্কা ফিলিং হচ্ছিল! কিন্তু বেশিদিন আর “খুশ” হওয়া হল না। কেন? বলছি।

স্কুল লাইফ শেষ করার পর, আমি বেশ মজায় ছিলাম। কোনো ঝুট-ঝামেলা নেই, পড়ার চাপ নেই, বারণ নেই, জাঙ্ক ফুড খেয়ে মোটা হয়ে যাওয়ার চাপ নেই, যদিও সেটা কোনোদিনই ছিল না। কিন্তু কলেজে উঠে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে গেল সিলেবাস দেখে! এবং মা আবার “খা-খা-খা…”― এই ফাটা রেকর্ড বাজাতে শুরু করলো। মাঝে মাঝে ভাবি, মা কি কাক ছিল?

যাই হোক, আসল কথা বলি। কলেজে উঠে আমি একজন মাসিমণি পেলাম। কোত্থেকে পেলাম, কী বৃত্তান্ত, অত বলতে পারছি না। কী বলছেন? জানতেই হবে? উফ! আচ্ছা বলছি। ভগবান আকাশ থেকে ফেলে দিয়েছিলেন একটা বাস্কেট করে, আমি নিয়ে নিয়েছি। শান্তি? এবার আমায় বলতে দিন তো মশাই!

তা আমার মাসিমণি হচ্ছেন রান্নায় পটিয়সী। কী ভাবছেন? আমার হেব্বি মজা? আজ্ঞে না, সে গুড়ে এক বস্তা বালি আর সাথে এক ট্যাংক জল! আমার মাসিমণি মূলত আমার মায়ের কাছে ভগবানপ্রদত্ত দূত হয়ে এলেন। আমায় জবরদস্তি খাওয়াতে তার জুড়ি মেলা ভার! তেতো থেকে শুরু করে প্রায় এক হাঁড়ি ভাত― সব আমার পেটে অবলীলায় চালান হয়ে যায়। আমার লুচির সংখ্যা দু’টো থেকে ছ’টা হয়ে গেল একদিনে! ভেলকি নয়, এ হচ্ছে রাগি চোখ আর কানমলার ভয়! নিমেষে থালা সাফ হয়ে যায়। এমন কি রোজ এখন দুধ গিলতে হয় আমায়! জাস্ট কষ্ট ভাবুন! এরা বোঝে না, রোগা থাকাটা একটা আর্ট! কদরই নেই কোনো! কি আর বলব! আমার দুঃখ ঘুচবার কোনো আশাই নেই, বরং বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। এইই, ইয়ে মানে, দুধের গ্লাস হাতে মাসিমণি এদিকেই আসছে! ওরে বাবা রে। ইয়ে, মানে বলছি যে, আমি পালাই বুঝলেন! আবার দেখা হবে, হ্যাঁ? আসি আমি, হ্যাঁ? আসি…

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *