বর্তমান যুগের সম্পর্ক সত্যি নাকি মায়াজাল

মেয়েটি বিশ্বাস করতোনা মায়াজাল বলে কোনোকিছুর অস্তিত্ব আছে! পড়তে গিয়েই প্রাপ্তবয়স্ক দুজনের আলাপ। প্রয়োজনে অল্পসল্প কথাবার্তা হতো, এর বেশী কিছু নয়… কয়েকদিন পর নবাগতা মেয়েটিকে পড়ার ব্যাচের হোয়াটস্যাপ গ্রুপে অ্যাড করা হয়। তখন সে ভাবতেও পারেনি অদূর ভবিষ্যতে কি অপেক্ষা করছে তার জন্য। 

30.12.2017 (প্রথম সাক্ষাতের একমাস পর) 

ছেলেটি মেয়েটির হোয়াটস্যাপে নাম্বারে টেক্সট করলো,”হাই!” মেয়েটি লিখলো,”হ্যালো!” 

01.01.2018

ছেলেটি শুভেচ্ছা জানালো নতুন বছরের। মেয়েটিও জানালো। তারপর আবার মেয়েটির ফোনের ইনবক্সে শুভকামনা জানিয়ে মেসেজ করাতে মেয়েটি অবাক হলেও সৌজন্যতাবশত পুনরায় শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালো। 

এরপর মাঝেমাঝে বার্তা বিনিময় চলতো।

15.01.2018

ছেলেটির নাকি বেড়াতে যেতে ভীষণ ইচ্ছে করছে! মেয়েটি লিখলো, “যাও, ঘুরে এসো…” 

ফ্ল্যার্ট করার সুযোগ হাতছাড়া করেনা ছেলেটি, বলে, “আমি গেলে তোর সাথেই যাবো, যাবি?” মেয়েটিকে এভাবে বলার সাহস আগে কেউ দেখায়নি! ব্যাপারটা হাল্কাভাবে নিয়ে একটা ইমোজি পাঠালো সে…

পড়াশোনাসংক্রান্ত নোটস ছেলেটি নিজে থেকেই দিলো মেয়েটিকে… গুডমর্নিং মেসেজ করতো রোজ… তারা ক্রমশ বন্ধু হয়ে উঠলো… ছেলেটা মেয়েটিকে ফোন করতেও শুরু করলো… নানারকম গল্প চলতো… মেয়েটি বন্ধুদের সাথে সামনাসামনি অনেক কথা বললেও ফোনে আগে কখনো কোনো বন্ধুর সঙ্গে এত কথা বলেনি।

সরস্বতীপুজোর আগের রাতে হোয়াটস্যাপ কথোপকথন-

ছেলেটা – “কাল ঘুম থেকে ডেকে দিবি ভোরে?”

“যার নিজের ঘুম ভাঙবেনা সে অঞ্জলি দেবেনা, আমি কাউকে ডাকবোনা।” 

পুজো মেটার পরে আবার ওদের চ্যাট শুরু হতে ছেলেটি লিখলো, “সিনেমা দেখতে যাবি?” সেন্ড করেই মেসেজটা ডিলিট করে দিলেও মেয়েটি তার আগেই সেটা পড়ে ফেলেছিলো, লিখলো, “প্রস্তাবটা সিরিয়াসলি ছিল?”

“হ্যাঁ,বন্ধুরা মিলে যাবার প্ল্যান হচ্ছে…” 

যদিও বাস্তবায়িত হয়নি।

মেয়েটা মাঝেমাঝে পড়াশোনাতে ফাঁকি দিতো। ছেলেটা তখন একটুআধটু শাসন করতো। বলতো, নোটস পাঠাচ্ছি এক্ষুনি পড়বি, দুপুরে পড়া ধরবো।

07.02.2018

ছেলেটা রাত 12টা বাজতেই মেয়েটাকে হোয়াটস্যাপে জিজ্ঞেস করলো, “কটা গোলাপ পাবি?”মেয়েটা অবাক। “কেউ দেবেনা।”

“কেউ না দিলেও আমি দেবো। তোকে আর অয়ন্তিকাকে। তোরা দুজনেই আমার খুব কাছের বন্ধু।” ছেলেটা বললো। তারপর লজ্জা পাওয়ার একটা ইমোজি পাঠালো। মেয়েটা উত্তরে লিখলো, “আচ্ছা, দিও।” অয়ন্তিকা ওদের সাথেই পড়ে, ওদের কমনফ্রেন্ড। অনুমতি মিলতেই ছেলেটা পাঠিয়ে দিলো ওকে গোলাপের ইমোজি।

10.02.2018

ছেলেটা এইদিন হোয়াটস্যাপে মেসেজ না করে মেয়েটার সাথে এসএমএস এর মাধ্যমে কথা বলছিলো। মেয়েটা তার পড়াশোনার ব্যাপারে ছেলেটার এত সহযোগী মনোভাব দেখে মজা করে লিখলো, “খুব চিন্তা দেখছি আমার জন্য!?” 

ছেলেটা লেখে, “হুম, আমি ভাবি তোকে নিয়ে।” উত্তরের ধরণ দেখে মেয়েটার মনে হল ছেলেটা ঠাট্টা করছেনা, সিরিয়াসলি বলছে… এটা ভেবে মেয়েটার মনে এক অজানা অনুভূতি দানা বেঁধেই আবার মিলিয়ে যায়। হয়তো তার অজান্তেই তার মন মায়াজাল বুনতে শুরু করে দেয়! 

14.02.2018

সেদিন মেয়েটা তার হোয়াটস্যাপ স্ট্যাটাসে লাল গোলাপের ফটো পোস্ট করে লিখলো, “হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে!” এটা দেখে ছেলেটা তার নতুন বান্ধবীর পিছনে লাগতে ছাড়েনা। 

যদিও তারপর মেয়েটির কথাতেই ছেলেটা হোয়াটস্যাপ স্ট্যাটাসে লেখে, “হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে! আর কিছু?” 

এটাও পড়তে পারেন – দশটি আসন্ন টেকনোলজি

15.02.2018

ছেলেটি গেছে মাসিরবাড়ি।  রাতজেগে আড্ডা দেবে ভাইবোনের সাথে। 

3.25 am

মেয়েটি ঘুমোচ্ছে… ছেলেটি পিং করলো, “এইমাত্র শুলাম, আড্ডা শেষ হল।” 

পরেরদিন সকালে মেয়েটি দেখে মধ্যরাতের বার্তাটুকু… মেসেজের সময়টা দেখে মেয়েটি একটু আনমনা হয়, তার মনে হয় এটাই কি মায়াজাল? তারপর রিপ্লাই দিতে অপরজনও পাল্টা মেসেজ করে।

অনলাইন চ্যাটে তাদের নানারকম গল্প আড্ডা হতো। ফোনেও নানা কথা হতো। কখনো দুজনের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে, কখনো সিনেমা-গান নিয়ে, কখনো আবার নিজেদের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে। আবার কখনো পড়াশোনা নিয়ে।

(সংগৃহীত)

দুজনের পড়তে গিয়ে দেখা হতো, অল্পসল্প কথা হতো। ফেরার সময় বন্ধুদের সাথে ওরাও ভিড় জমাতো ফুচকার স্টলে।

22.02.2018

মেয়েটি স্ট্যাটাসে লিখলো,”হারিয়ে যাওয়া মানুষদের সাথে আমাদের পার্থক্য হল আমাদের ফিরে আসার কারণেরা এখনো যোগাযোগ রাখে।” এটা দেখে ছেলেটি তাকে লিখলো, “তুই যেখানে খুশি হারিয়ে যা, আমি তোকে খুঁজে আনবো…”  এরপর মেয়েটির মনের অতলে দুর্বলতা বাসা বাঁধতে শুরু করে… এরকম আরো কিছু কথা, আরো কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল পরবর্তীতে… তবে সেসব স্থায়ী হয়নি… 

কিন্তু তার পরেও ছেলেটার জন্য মেয়েটার মনের ভিতর এক অদ্ভূত মায়াজাল বোনা চলতেই থাকে। 

30.12.2018

একজন অপেক্ষায় থাকে, মেসেজ আসবে… ফোন আসবে… সেগুলো আর সেভাবে আসেনা… সে করলেও অপরজনের থেকে আগের সেই টান আর পাওয়া যায়না… তখন তার মনে হয় এই মায়াজাল বোধহয় শুধু তাকেই বেঁধে ফেলেছে আর অপরজনকে কোনো মায়াতেই জড়াতে পারেনি…  সত্যিই কি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সম্পর্কে এগুনো যায় নাকি সবই মিছে মায়া?? এইভাবে তৈরি হওয়া বন্ধুত্বগুলো কি সত্যি নাকি নিছকই দুদিনের মায়াজাল!

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *