-মা, ও মা কাজে যাবিনে?
-চাষের কাম তো লাই। যামু কই? নে মুড়ি কটা চিবিয়ে নে।
-মা মুকুন্দ বাবুর কাম আর করবিনে?
-না বাবু, ও কাম আর করবুনা। মেলা কথা কয়েছিস। এখন ইস্কুল যা কেনে। তুয়ার পরীক্ষা তো আসি গেল। বাবু তুয়ার ফল ভালো হলি তুরে ইস্কুল থেকে টাকা দিবে।আমায় মাস্টার বাবু কয়েছে।
বাবুটা সত্যি ফল ভালো কইরলে আজ লতার সুখের দিন আইসবে। একা থাকিলে বড় পুরানো কথা মনে পড়ে। মুকুন্দ বাবুর সাথে ওই দিনের পর আর দিখা হয়লাই। বড় দিখতে ইচ্ছা করে কিন্তু দিখা হইলে আমার মন বড় চঞ্চল হয়ে উইঠবে। উনার প্রতিটা পরষ সেদিন আমি আমার শরীরে মেখে নিয়েছিলাম। আজ আবার আকাশের মুখ ভার। কালো কালো মেঘ গুলো যেন আমার মন টাও ভারী করে দেয়।
-লতা ও লতা! তু এখনো যাস লাই?
-কই যাব? কি আছে?
-তু জানিসলাই? মুকুন্দ বাবু চলি যাচ্ছে কইলকাতা! গেরামের সবাই উরে সম্মান দিচ্ছে।তু যাবিনে?
-আমি গেলে তার যাওয়া আটকাইবে না। আমি গিয়া কি কইরব?
-পাষাণী তুই! যারে দুদিন আগে ভালোবাইসলি আজ তারে দেখার লগে যাবি ও না!
লক্ষী দি চলি যাবার পর থথাকি চোখের ধারা বাঁধ মাইনছে না। আকাশ টা আরো কালো হয়ে আইসছে। মেঘ গুলান যেন বড় বড় দত্যি।অঝোর ধারায় বর্ষা আসছে।সেদিন ও এমন ছিল মুকুন্দ বাবুর সব পরশ মেখে নিয়েছিল লতা।
লোকটা চলে গিয়ে লতাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। ভালোবাসার মানুষ কে কাছে দেইখলে দুর্বল করি দেয়।
লক্ষী দি বলছিল যাওয়ার সুময় মুকুন্দ বাবু বারবার লতার কথা শুধিয়েছে। লক্ষীদি কে বলেছে লতার খেয়াল রাখতে।বাবুর পড়ালিখায় যেন কোনো অযত্ন না অয়। লতা কখনো যোগাযোগ করেনি তাকে। বাবুর বাবার স্বপন সে একাই পুরন করবে।
আজ বাবুর রেজাল্ট। দেখতে দেখতে বাবু মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল। সকাল থেকে বুক ঢিপঢিপ কইরছে। কে জানে কি হবে!
-মা ও মা! দেখ আমি ৬০৯ পেয়েছি রে। স্টার রে স্টার।
-এস্টার! বাবু!
-গেরামের মধ্যি প্রথম হইছি।উয়ো পঞ্চায়েত প্রধানের ব্যাটাও পায় লাই এতো।
চোখ দুটো জলে ভরি আইসছে আমার।তবে সুখে না দুখে।
-কিরে মা তু খুশি লস?
-তুয়ার বাবা থাইকলে আজ কত্তো খুশি হত।
দেখ বাবুর বাবা দেখ আমাদের বাবু পাইরছে।উয়ো দিখাই দিয়েছে। আমার এতো কস্ট আজ সার্থক হল।
বাবুর বাবার সাথে আজ মুকুন্দ বাবুর কথাও বড় মনে হইছে। একেই কি ভালোবাসা বলে?
সুবর্ণলতা (শেষ পর্ব)
Facebook Comments Box