সে এক দেশ

ধরা যাক, একটা খুব ছোট্ট দেশ হয়, এই ধরো একটা রেলগাড়ির কামরার ধরণের। সেই দেশের স্থগিত বাসিন্দা হয়না, প্রত্যেকেই পর্যটক এবং তারা সংকীর্ণ মেয়াদের জন্য— যতটা দরকার বা যতক্ষণ থাকা যায় (দিন বা মাস নয় কিন্তু); আচ্ছা সহজ করে দিলাম আরো, প্রত্যেকজনের সর্বোচ্চ সময়সীমা এক ঘন্টা বা তার একটু কম।
এই দেশের বৈশিষ্ট্য কী?
এখানে কাম উন্মুক্ত। কামবাসনার প্রাথমিক প্রয়োগগুলো ভীষণ সহজলভ্য, বা এখানে আসার কারণটাই হল প্রেমহীন, দ্বিধাহীন, মনজাতীয় অনুভূতিহীন কামক্রীড়া নির্ভয়ে আদান-প্রদান হয়। শর্ত মাত্র দুটো— কারোর অনিচ্ছায় তার সাথে কিছু করা যাবেনা এবং ভালবেসে ফেলা যাবেনা।

একটা ভীষণ প্রেমিকহীন শীতে কাহিল হয়ে, শরীরের প্রচুর অটলনীয় চাহিদা নিয়ে আমি খুব স্বল্পমেয়াদের জন্য সে দেশে পৌঁছালাম। দেখি, চারিদিকে সব কেমন রঙিন, সবাই প্রচণ্ডভাবে যৌনসংগমে মত্ত, কেউ কেউ আবার তিন-চারজনের গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছে। কামের প্রতি সামাজিক একটা বঞ্চনার তকমা থেকে বেরিয়ে এসে সবাই যেন এখানে একটা বিপ্লব হেনেছে— চুমু, হাতড়ানো, আচড়ের স্লোগান উঠছে… চারিদিকে প্রোজেস্টেরন, টেস্টোস্টেরনের সুগন্ধে মোহিত হয়ে উঠেছে।
দুটো চোখ। দুটো চোখ, যেটা কথা বলতে জানে, আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাকে এতক্ষণ হাতড়ে বেড়ানো বেশ অভিজ্ঞ হাতগুলি হঠাৎ কেমন সাড়া পাওয়া বন্ধ করে দিল। সেই হাতগুলো হঠাৎ সম্মতির অভাবে ভুগতে শুরু করল আর তারপর আসতে আসতে অন্য শরীর খুঁজে নিল।
চোখ দুটো কেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। না! কাছে আসতে বলেনি, আমার বুক বা শরীরের কোনো কামজ অংশেও ইশারা তোলেনি। শুধু দেখলাম সবার থেকে দূরে সরে গিয়ে কোণঠাসা হয়ে দাঁড়ালো, তখনও এক নাগাড়ে তাকিয়েছিল, আমার দিকেই।
এ দেশে ভালবাসা বারণ, এ দেশে প্রেম করতে কেউ আসে না, কারণ এ দেশে শুধু শরীর আদানপ্রদান হতে হয় মনজাতীয় অনুভূতিহীন।

আমার পর্যটক হিসেবে মেয়াদ ফুরিয়ে এল, সীমান্তে এসে আরেকবার ঘুরে তাকিয়ে দেখি ওই দেশে এক বহিরাগত ধরা পড়েছে। মুক্তি স্লোগান উঠেছে এক জোড়া চোখের পলকহীন চাহনিতে।।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *