-শবরী এই অন্ধকারে বসে আছিস কেনো? চল তৈরী হো, দেখবি মেলায় কত মানুষের হই হুল্লোড় যেন আনন্দের প্রতিধ্বনি চারপাশে। তোর মনটা ভালো লাগবে।
-উহু আলো জ্বালিয়ো না আসিফ। এই অন্ধকারে, শেষ ট্রেন ধরার মতো পরিস্থিতি থেকে ছুটে চলার তাড়া নেই, পালানোর কোনো স্পৃহা নেই। শান্তি আছে।
– দ্যাখ তোর জন্য জন্য একটা পুতির মালা এনেছি আয় পরিয়ে দিই আজ তোকে নিজে হাতে সাজিয়ে দেবো।
– এড়িয়ে যাচ্ছো!! আসিফ তুমি জানোনা ভীড়ে আমার দমবন্ধ লাগে? মনেহয় সবার করুণার চাহনি টুটি চিপে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছে .. আনন্দ না আমার চারপাশে করুণা প্রতিধ্বনি দেয় আসিফ।
-নিজের মনের অন্ধকার ঢাকার এটা অজুহাত শবরী। জীবনটা এতোটা ছোটো নয় যে একটা রূপের মুখোশ সবটা কেড়ে নিতে পারে।
– হাসপাতাল থেকে ফিরে 4 বছরের ছেলেটাকে একফোটা বুকে জড়াতে পারিনি ভয়ে আঁতকে উঠেছিলো, শ্বশুরবাড়ি ছাড়া হলাম। কোনটা কেড়ে নেয়নি আসিফ?
– তোর নিজস্ব সত্ত্বাকে কাড়তে পারেনি, পারেনি তোর শিরদাড়া গুড়িয়ে দিতে, পৃথিবীতে যার কেউ থাকেনা তার একটা “আমি” নিজস্ব সত্ত্বা থাকে। ভালোবাসার প্রতিধ্বনি তে তা মুখরিত হয়।
-জানো আসিফ সেদিন যখন এসিডে মুখটা জ্বলে যাচ্ছিল তখনো আপ্রান বাঁচতে চেয়েছিলাম অথচ সুস্থ হওয়ার পর সবার চোখে তখন ঘৃণা!! বুকটা যেন শ্মশান লাগছিল যেখানে কেউ নেই। দূর থেকে দাউদাউ করা আগুনের শিখা জ্বলছে কেবল। সেদিন বাঁচালে কেন বলোতো আসিফ!! ট্রেনের লাইনে গা পেতে দিলে বুকের ওই মরুভূমির ঝড় শান্ত হয়ে যেত।
-সেদিন না বাঁচালে তোর মতো মেয়েরা হেরে যেত, ভয়ে গুটিয়ে যেত।
– একটা সত্যি কথা বলবে আসিফ তুমি আমায় ভালোবাসো নাকি করুণা?
– শবরী ভালোবাসা শব্দটা বড়ো আপেক্ষিক আমি তোর জীবনের সাথে চলতে চাই, প্রত্যেকটা ছন্দে অন্ত্যমিল খুঁজে দিতে চাই, তোকে বাঁচতে শেখাতে চাই দূর আকাশে ডানা মেলতে শেখাতে চাই। তুই হবি লড়াই-এর কারিগর যেখানে আরো শবরীরা বাঁচতে শিখবে।
– কখনো মনেহয় হেরে যাচ্ছি তারপর তোমার বুকে কান পাতলে যুদ্ধধ্বনি শুনতে পায় যেখানে মহারথী আমি। আদর চাদরে জড়ানোর সময় তোমার চোখে একটা বিপ্লব দেখতে পাই জানো, যেখানে মশাল হাতে আমি দাড়িয়ে থাকবো।
– রূপ একটা খোলস শবরী যার ভালোবাসার পরিধি ওইটুকুতে সীমাবদ্ধ তারা গাঢ় মেঘের আড়ালে সূর্যের তেজ চেনেনি। সামনে অনেক লড়াই বাকি, শাস্তি দিতে হবে ওই পশুগুলোকে। আর প্রথমে নিজেকে ভালো বাসতে হবে।
– পাছে মায়া না জড়িয়ে পড়ে তাই ভালোলাগলেও ভালোবাসার স্বীকারোক্তি টুকু করিনা আমরা। কিন্তু জানো এক শতাব্দী কম পড়ে তোমার মতো মানুষদের ভালোবাসার জন্য।
-প্রেম ভালোবাসা আমরা জানিনা কিন্তু শবরী আমি তোর প্রতিবাদের ভাষা হবো, প্রতিধ্বনি হবো, তুই আমার কলম হোস দুজন মিলে বিপ্লব আনবো।
কথায় কথায় বলা হয়নি তোর জন্য পরের মাসে একটা হারমোনিয়াম কিনছি।
– এই কটা টাকায় তুমি কতো কি করবে আসিফ??
– দু চারটে বাচ্চাকে শেখাতে শেখাতে ঠিক নিজের জায়গা গড়ে নিবি আমি কেবল তোকে স্বপ্নপূরনের ঠিকানা দিতে পারি।
– পারবো আমি, পারতে তো হবে , গান যে আমার ভালবাসার প্রতিধ্বনি।
নন
– একটা গান শোনাবি আজ?
-….“আমি রূপে তোমায় ভোলাব না ভালোবাসায় ভোলাবো, আমি হাত দিয়ে দ্বার খুলবো না গো গান দিয়ে দ্বার খুলবো।”