( আমি আকাশ । আমি গত দুবছর ধরে ondine’s curse disorder এর শিকার । আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । আর এটা আমার জীবনের শেষ সাতদিন )
হ্যালো, আমি আকাশ । এখন থেকে আমি যা বলবো সব স্বপ্ন । stay away from me কারণ আমার স্বপ্ন আপনাদের ঘুমেও চলে আসতে পারে|
( দ্বিতীয় দিন )
—আমি ধড়ফড় করে উঠে পড়লাম । সবে ভোর হয়েছে । বিছানা থেকে পা নামিয়ে ধীরে ধীরে বাথরুমে ঢুকলাম । চোখে মুখে জল দিয়ে একবার নিজেকে আয়নায় দেখার চেষ্টা করলাম,সব যেন কেমন আবছা আবছা,তবে কি আমার চোখের পাওয়ার বাড়লো ? কিন্তু একি আমার মুখের চামড়াটা ধীরে ধীরে খসে পড়ছে কেন ? তাহলে কি সবার মতো আমিও মুখোশধারী ? আসলে মুখোশ জিনিসটা না,খুব খারাপ একটা জিনিস নয় । মুখোশটাকে তো আমরা বলে বলে খারাপ করেছি । আচ্ছা যদি একজন প্রেমিকের হঠাৎ হৃদয় ভাঙে,সে তার কান্না লুকানোর জন্য কি ব্যবহার করবে?মুখোশ পড়াটাই তো তার একমাত্র রাস্তা । হয়তো বাইরে বাইরে হাসবে,আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডাও মারবে কিন্তু মুখোশটা যে তাকে পড়ে থাকতেই হবে নাহলে ধরা পড়ে—
এক সেকেন্ড,এক সেকেন্ড এটা আমি কোথায় এলাম? এইতো বাথরুমে ছিলাম । না সত্যিই আর কোনো ফেরার রাস্তা নেই,এটাই বোধহয় ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়া । যাই হোক একটু বোঝার চেষ্টা করি ঠিক কোথায় আমি,যা বুঝছি আমি একটা পার্কের বেঞ্চের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছি । কিন্তু কেন বসে আছি?আমার কোনো কাজ নেই বলে? এই যে মানুষগুলো ভোর বেলা এত ছোটাছুটি করছে,শরীর সুস্থ রাখবে বলে ।সেই তো একটু পড়ে অফিস যাবার ব্যস্ততা দেখিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা বাবা মা এর খোঁজ নেবে না,সেই পড়ার চাপে পাগল হোতে বসা বাচ্চাটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে না যে ‘আমি আছি তো’,সেই ট্রাফিকে কোনো ভিখারিকে গালাগাল দেবে । আসলে আমাদের মনটা ভালো নেই তাই আমরা সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকি কেউ আমায় ফেলে এগিয়ে যাবে না তো?আরে বাবা আসলে আমরা সবাই পিছনে,কেউ এগিয়ে নেই ,আমরা সবাই সময়ের পিছনে লুকিয়ে থাকতে চাই । কি হবে এতকিছু করে?তবে হ্যাঁ, গাছটা থেকে শিশিরের ফোঁটা টুপটাপ করে পড়ছে বা খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটা,চোখ বুজে কিছুক্ষণ নিজের মনে বোকা বোকা কথা বলে হাসা এগুলোই তো রয়ে যাবে । বাকি এইসব ন্যাকামোমার্কা প্রেম, break up then patch up এসব তো,ছাড়ুন । আরে হঠাৎ বৃষ্টি নামলো যে,আমার ঘুমটা যেন না ভেঙে যায় । একি আমার হাত পা সব মোমের মতো গলে পড়ছে কেন ? বৃষ্টির ফোটা গুলো এত গরম—
অনেকক্ষণ পরে আমার ঘুমটা বোধহয় ভাঙলো । রাতের শহর । রাত বোধহয় ১১ কি ১২,ফুটপাতের উপর দাঁড়িয়ে আছি ।অবাক দৃষ্টিতে রাতের আকাশ দেখছি ,হঠাৎ আঙুলের মাঝখানটায় উষ্ণতা অনুভব করলাম । ও হাতের সিগারেট টা প্রায় জীবনের মাঝপথে তবুও কি সুন্দর ধোঁয়া হয়ে উড়ে যাচ্ছে । কিন্তু আমি এটা নিয়ে কি করছি?এটা খেলে কি আমি ঠিক হয়ে যাব?সব কিছু সত্যি মিথ্যে হয়ে যাবে?কিছু মিলিগ্রাম ধোঁয়া কেন আমার জীবনের controller হবে?আরে ধোঁয়া গুলোর ঘনত্ব ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে কেন? এরা বোধহয় আমার উপর বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে । ঠিক যেমন চায়ের দোকানে কয়লাগুলো কালো ধোঁয়া বার করে আগুনের বিরুদ্ধে ঘোষণা করে । ধীরে ধীরে চারিদিক টা সিগারেটের ধোঁয়াতে ভর্তি হয়ে গেল । কিরকম একটা দম বন্ধ করা পরিবেশ তৈরি হলো,শহরের আলোগুলো যেন কেউ ঝুপঝুপ করে বন্ধ করে দিল । কানে শুধু ঘড়ির কাঁটার আওয়াজ আসছে—টিক্ টক,টিক টক …..।ধোঁয়া গুলো আমার মুখ দিয়ে ঢুকে,গলার মধ্যে দিয়ে হয়ে আমার শরীরের সব সূক্ষ অনুভূতিকে শুষে নিচ্ছে । কে যেন আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে চাচ্ছে । কেউ যেন আমায় ভাসিয়ে নিয়ে দুম করে কোথাও ফেলে দিল ।
চোখ খুলে দেখলাম,এক বিশাল জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়িয়ে আছি । হঠাৎ পেছন থেকে কেউ আমায় ধাক্কা দিলো—
(ক্রমশ)