স্বপনবাবুর গিন্নি আজ সকাল থেকেই মন মেজাজ খারাপ করে বসে আছেন। আজ রবিবার, গিন্নির মাছ খাওয়ার খুব ইচ্ছে হয়েছিল। আর রবিবার টাই হল সর্বনাশা।
কিন্তু, ছুটির দিনে ঘুমের চক্করে সকাল সকাল আর বাজারে যাওয়া হয়নি। তাই গিন্নির মুখভার।
রবিবার মানেই মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবি স্বপনবাবুর কাছে একটা বিশেষ দিন। এইদিন গিন্নির সঙ্গে সময় কাটান কর্তা।
শেষ বয়সে এসেও দুজনের মধ্যে ভালোবাসা দেখলে মনে হয় কৈশোরের প্রেমিক প্রেমিকা।
খুনসুটি, হাসিঠাট্টা, গল্পগুজবে বেশ সংসার দুজনের। ভালোবেসে, হেসেখেলে, সমস্তকে মানিয়ে ভালোবাসার বাড়ি দুজনের।
ভালোবাসার বাড়ি হলেও সাংসারিক জীবনের ভুলত্রুটি, ঝগড়াঝাটি কোনো কোটা থেকেই বাদ যায়নি কর্তা গিন্নির কেমিস্ট্রি।
এই যেমন রবিবারের ঘটনা। ভাত আর আলু সেদ্ধ করে মুখভার করে গিন্নি মুখ গুঁজেছেন রবীন্দরনাথে।
কর্তাকে কোনও পাত্তাই দিচ্ছেন না। কর্তা তো ভেবেই পাচ্ছেন না কি করবেন! এ তো মহা মুশকিল। এই ভরদুপুরে গিন্নির পছন্দের মাছ তিনি কোথায় পাবেন!
কিছু না ভেবে টিভি খুলে বসলেন স্বপনবাবু। টিভিতে ঠিক তখনই অ্যড এলো ‘অর্ডার অনলাইন অন সুইগি এন্ড গেট ফিফটি পার্সেন্ট অফ’।
পুরোনো জামানার মানুষ হওয়ায় ইন্টারনেট সম্বন্ধে ওতটাও ওয়াকিবহাল নন স্বপনবাবু।
তাই কোনদিন ব্যবহার করেননি এসব অ্যপ। প্রয়োজনও মনে হয়নি তাঁর। কিন্তু, আজ যে গিন্নির মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাঁকে মাছ নিয়ে আসতেই হবে।
সুইগির ব্যাপার খোলাসা করতে তিনি ফোন করলেন তাঁর এক ইয়ং কলিগকে।
ইয়ং কলিগকে ফোনের ওপারে টানা পৌনে একঘন্টা আটকে তিনি ফিফটি পার্সেন্ট অফে অর্ডার করলেন দু প্লেট পাবদা মাছ এবং গিন্নির পছন্দের গুলাব জামুন।
ফোন কাটার পর যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন ওপারের মানুষটা। কর্তার গিন্নি এখনো রবীন্দ্রনাথের পাতার মধ্যে ডুবে রয়েছেন।
কর্তা গিন্নির পাশে গিয়ে বসে গিন্নিকে বললেন, “তোমায় আমি আজ মাছ খাওয়াবোই, চিন্তা করোনা তোমায় রাঁধতেও হবে না।”
স্বপনবাবুর কথায় গিন্নি হতবাক হয়ে বললেন, ” তবে কি তুমি রাঁধবে! থাক, আর তাহলে মাছ খেতে হবে না আমায়! তার চেয়ে না খেয়ে থাকা ঢের ভালো”
কর্তা তখন হেসে হেসে বললেন, ” আরে গিন্নি আজ একদম রেডিমেড রান্নাবান্না। বাড়িতে এসে দিয়ে যাবে গো। সে রান্নায় তোমার হাতের ছোঁয়া থাকবেনা জানি, তবে আমার রান্নার মতো অখাদ্য তো হবে না।”
“মানে, বাড়িতে এসে দিয়ে যাবে! কি বলো!” কৌতূহলের সঙ্গে প্রশ্ন করলেন গিন্নি।
“হ্যাঁগো গিন্নি, এখন অনলাইনে মানে মোবাইলে ইন্টারনেটে সব হয়। এই যেমন আজ তোমার জন্য সুইগি থেকে মাছ , মিষ্টি এন্ড মোর।” হাসতে হাসতে গিন্নিকে জড়িয়ে ধরে নিখাদ ভালোবাসায় মিশে গেলেন স্বপনবাবু।