টাইপরাইটারের নির্বাসন
সময় এলে কিছু জিনিসের কদর যেমন বোঝা যায়,
সময়ের সাথে সাথে কিছু জিনিসের কদর কমেও যায়।
টাইপরাইটারের সাথে কিন্তু দুটোই যায়।
আগে মাধ্যমিকের পর ‘তিনমাস’ নামক যে ‘অলীক’ সময় পাওয়া যেত,
তাতে ছাত্রছাত্রীরা ‘ওয়ার্ড পার মিনিট’-এর পারস্পরিক সংঘাতে লিপ্ত হত;
মানে কে কত তাড়াতাড়ি টাইপ করতে পারে আর কি!
কিন্তু ওই, কালক্রমে এর কদর কমেও যায়।
তাই আজকাল ‘তিনমাস’ শুধুই অলীক কল্পনা,
আর টাইপরাইটার জরাজীর্ণ হয়ে ধুঁকছে, তারচেয়েও জরাজীর্ণ কিছু দফতরে।
নতুন আসলে আমরা জলজ্যান্ত মানুষ ভুলে যাই,
আর টাইপরাইটার তো সামান্য যন্ত্র।
যান্ত্রিকতার বশে কত যন্ত্রই এভাবে নিজেদের চাকরি খুইয়ে জগদ্দল হয়েছে,
তার হিসেব তো যন্ত্রও দিতে পারবে না বোধহয়।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খাজাঞ্চিবাবু’ কিন্তু সাক্ষী আছেন,
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে অনিচ্ছায় অবসরযাপনের সুযোগ পাওয়ার।
তা সে যাই হোক না কেন, টাইপরাইটার যদিওবা বিনা দোষে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছে,
তবু একটা খারাপ গুণ সত্যিই ছিল;
এতে কোনও ব্যাকস্পেস ছিলনা।
আসলে তখন আমাদের ‘ভুল’-এর পরিমাণও ছিল কম,
আর অতীতকে জোর করে ভুলে যাওয়ার চেষ্টাও ছিলনা বললেই চলে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাদের অতীত মোছার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে,
আর তাই-ই অপ্রয়োজনীয় হয়েছে ‘টাইপরাইটার’।
তবু নিজের হাতের লেখা ‘প্রথম প্রেমপত্র’ যেমন হার মানায় হাজারটা গোলাপ আঁকা কৃত্রিম কার্ডকে,
ঠিক তেমনই সেই ‘মার্কামারা’ টাইপরাইটার ফন্টও কিন্তু আধুনিক হাজারটা ফন্ট প্যাকেজকে পরাস্ত করে অনায়াসে।
তাই-ই তো আজ নিজের অতীত নিয়ে লিখতে গেলে অতীতের প্রেমিকাকে মনে মনে বলি,
“দুঃখ পেয়ে দু’চোখ ভাসাস?
অনুভূতিরা আবার যখন মন কাড়ে?
তুই জানালায় বসে সাদা পাতা কেন,
আমি নতুনের স্মৃতি লিখবো টাইপরাইটারে।”