ছোটবেলায় স্কুলছুটির দিনে অনেক ভূতের গল্প পড়েছে সন্দীপ, বাংলা ভূতের সিনেমা দেখে হেসে গড়াগড়ি খেয়েছে, ইংরেজী হরর্ সিনেমাগুলো দেখে একটু ভয়ও পেয়েছে। কিন্তু কোনও গল্পে এরকম বিবরণ পায়নি যে মানুষের আগে আগে ভূত পালাচ্ছে রুদ্ধশ্বাসে। সিঁড়ির কাছে গিয়ে মেয়েটার হাতটা খপ করে ধরে ফেলল সে। কী আশ্চর্য, হাতটা গরম! মেয়েটা রীতিমতো হাঁপাচ্ছে, মানুষ যেভাবে হাঁপায়।
– এই, কে আপনি?
– তা জেনে আপনার কি? ছাড়ুন আমাকে!
– কানের গোড়ায় এক থাপ্পড়!
– ছিঃ ছিঃ! মেয়েদের রেসপেক্ট দিতে জানেন না?
– মেয়ে মানে? আপনি তো ভূত!
– হ্যাঁ মানে, ভূত তো তাতে কি হয়েছে? রেসপেক্ট দেবেন না তাই বলে? ছাড়ুন আমাকে…
– ভূতকে রেসপেক্ট? কেন দেব?
– আশ্চর্য তো! ছাড়বেন নাতো?
– সত্যি করে বল্ আগে, কে তুই?
– তুই-তোকারি করছেন? আমি অভিশাপ দেবো কিন্তু…
– কোন জন্মে শুনেছেন ভূতে অভিশাপ দেয়?
ঠাস করে একটা চড় পড়ল সন্দীপের গালে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্দীপও পাল্টা লাগিয়ে দিল এক থাপ্পড়।
– আপনি আমাকে মারলেন? আজ অবধি আমার গায়ে কেউ হাত তোলেনি! হাউ ডেয়ার ইউ?
– আপনি মারতে পারেন, আমি পারবো না কেন? বেশ করেছি মেরেছি!
– মেয়েদের মতো ঝগড়া করছেন কেন? ছাড়ুন বলছি!
“এই, তোরা এখানে? কি করছিস?” —প্রকাশ যেন এবার ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
– তোরা মানে? প্রকাশ তুই দেখতে পাচ্ছিস মেয়েটাকে?
– না, মানে কই? কোন মেয়ে? তোরা মানে ইয়ে তুই, তুই কি করছিস এখানে?
– তুই মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছিস? —চিৎকার করে উঠলো সন্দীপ।
“দেখতে পাচ্ছি না তো, তাই বলে এভাবে হাত ধরে রাখার কি আছে? গুরু, তুমি ভূতে ভয় পাওনা?” —কথাটা বলেই জয় বিশ্বজয়ের একটা হাসি হাসলো।
“দাঁড়া এক সেকেন্ড, দেখতে পাচ্ছিস না তো হাত ধরে আছি কিভাবে দেখলি?”
সন্দীপের কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই জয়ের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় লাগালো সাগর। প্রকাশ ততক্ষণ জীভ কেটে ফেলেছে।
মেয়েটা এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে হেসে উঠলো খিলখিলিয়ে… সেই হাসিটা!
” তার মানে? আমার সাথে মজা করা হচ্ছিল?” সন্দীপের চিৎকারে কয়েকজন লোক জড়ো হয়ে গেল চারপাশে…
“আমি একটু ঘুড়ে আসছি হ্যাঁ” —বলেই প্রকাশ দিল ছুট…
– শাল্লা, পালাবি কোথায়? তুই থিয়েটার করিস জেনেও… আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল, থাম শালা, একবার হাতে পাই বাঁ…
মেয়েটা তখনও খিলখিলিয়ে হেসে চলেছে, ছোট্ট ভিড়টার মধ্যে কেউ কেউ অবাক হয়ে সন্দীপদের ছুটে যাওয়া দেখছে, কেউ কেউ আবার এর মধ্যেই মেয়েটার সাথে তাল মিলিয়ে জুড়ে দিয়েছে হাসি।
জয় আর সাগর হতভম্ব হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে…
– বলেছিলাম, কোনো শালা একমাস আগে থেকে প্ল্যান করে সাকসেসফুল হয়নি।
– এবার ওই গালটাতেও খাবি জয়?
***
– ফের একবার নমস্কার।
– থাক থাক, ফরমালিটির দরকার নেই।
– আরে, এখনও রেগে আছেন দেখছি। আসলে একটু টুইস্ট না থাকলে পুজোটা ঠিক জমতো না জানেন।
– আপনার এই ঠাট্টার জন্যে আমি আজ এখানে থাকাই হতো না, বিকেলেই ট্রেন ধরবো ভেবেছিলাম।
– তার মানে যতটা সাহসী আপনাকে ভেবেছিলাম, ততটা আপনি নন।
– কে বলেছে? আমি ভয় টয় পাইনি!
– তাই নাকি…
– দেখুন আপনি এরকম ভাবে হাসবেন না, কেমন যেন ইরিটেটিং লাগে।
– আমার হাসি নিয়েও আপনার সমস্যা? আপনার ভাগ্য ভালো গায়ে হাত তোলার পরও আমি আপনার সাথে হেসে কথা বলছি…
– মানে? আগে কে গায়ে হাত তুলেছিল?
– বেশ করেছি তুলেছি… যারা মেয়েদের মতো ঝগড়া করে…
– দাঁড়ান দাঁড়ান, আমি মেয়েদের মতো ঝগড়া করি?!
“এই, থাম তোরা…” প্রকাশ হাসতে হাসতে ওদের দিকে এল, “সন্দীপ, ওসবের জন্যে তোকে আরেকবার সরি বলছি। এবার আলাপ করিয়ে দিই…”
প্রকাশকে থামিয়ে মেয়েটা এবার সন্দীপের দিকে চেয়ে বলল, আমি প্রিয়াঙ্কা, কলকাতায় থাকি। দিব্য আমার জ্যাঠতুতো দাদা।
– আমার আর পরিচয় আর দেওয়ার দরকার নেই আশা করি।
– তবে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারটা পাওয়া যাবে?
– কেন?
– শুভবিজয়ায় প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাবো তাই।
– আবার হাসছেন ওভাবে?
– আচ্ছা সরি। সরি…
***
বিকেলের ট্রেন ছেড়ে গেছে অনেকক্ষণ। সন্দীপের যাওয়া হয়নি। সে এখন গল্পে মেতেছে বাড়ির সবার সাথে, অপর্ণা আর তাকে ভাবাচ্ছে না, প্রকাশ যেন আরও কাছের হয়ে উঠেছে এই দু-তিনদিনে…
গল্পের ফাঁকেই অন্যমনস্ক হয়ে মাঝে মাঝে মোবাইলটা বের করে কি যেন খুঁজছে সন্দীপ। মা দুর্গা মিটিমিটি হাসছে তার দিকে তাকিয়ে… একটা বন্ধুত্ব জন্ম নিতে চলেছে শীঘ্রই, ঠুনকো না পোক্ত তা ঠিক করবে সময়।
আপাতত সন্দীপের ফোনে কম্পন তুলে ছুটে আসা দুটো শব্দ তার ঘুম কেড়ে নিতে চলেছে আজকের মতো— ‘শয়তান একটা’।।
***সমাপ্ত***