জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সুখে-শান্তিতে বেঁচে থাকাটাই প্রতিটি জীবের প্রকৃত ধর্ম। আসলে সবাই একটা স্থায়ীত্ব চায়। যেখানে সে সুখে থাকতে পারে, শান্তিতে থাকতে পারে। বুদ্ধিমান মানুষ আবিস্কার করলো যে সুখে শান্তিতে থাকার জন্য লজ্জা নিবারণটা খুবই প্রয়োজন। তাই গাছের পাতা, গাছের ছাল কেটে জড়ানো হল যৌনাঙ্গে।
মানুষ বুঝলো অন্য প্রাণীদের থেকে সে এগিয়ে গেছে।
তারপর কাঁচা ফলমূল, সবজি-পাতি, মাছ-মাংস প্রথম প্রথম পুড়িয়ে খাওয়া থেকে শুরু করে তাতে যোগ করলো বিভিন্ন রকমের তেল, মশলা। জঙ্গল কেটে কখনও পাথর দিয়ে কখনও বা গাছের ছালবাকল দিয়েই শুরু হল ঘর বানানোর কাজ। আবিস্কার হল চাকা। পোষ মানানো হল গরু, ঘোড়া, হাতিকে।
বন্য জন্তুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ছুঁচালো পাথর, গাছের ডাল দিয়েই শুরু হল অস্ত্র বানানো। দেখতে দেখতে মানুষ হয়ে উঠলো উন্নত থেকে উন্নততর।
লড়াইটা এতদিন ছিল আত্মরক্ষার স্বার্থে, বেঁচে থাকার স্বার্থে।
হঠাৎ এল ব্যবসা। মানুষ হয়ে উঠলো চালাক, আমায় তেল মশলা পেতে হলে দিতে হবে নিজের ভাগের খাবার।
আমায় অস্ত্র পেতে হলে দিতে হবে চাকা। এই বিনিময়প্রথা যেন একটা জাতিকেই ভাগ করে দিল কয়েক লক্ষ ভাগে।
কেনা-বেচার মাধ্যম হল টাকা। মানুষ বুঝলো পৃথিবীর উন্নতি মানেই মানুষের উন্নতি, তাই উন্নতিসাধনে মানুষ তার ইচ্ছেমত জীবিকা বেছে নিল, মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইটা হয়ে উঠলো জটিল। মানুষ হয়ে উঠলো অশান্ত।
শান্তি ফেরাতে এল ধর্ম। ধর্ম বলল- উপরে একজন আছেন, যিনি আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, তাকে অনুসরণ করলেই শান্তি ফিরবে।
হাতে ধরিয়ে দেওয়া হল নিয়মকানুন। জায়গায় জায়গায় পৌঁছালো ভিন্ন ভিন্ন নিয়মকানুন, যাদের প্রত্যেকটিরই প্রধান উদ্দ্যেশ্য হল- শান্তি।
কিন্ত মানুষ বুঝলো না- আমি এই নিয়ম মেনে চলি, তার জন্য তোমায়ও ওই নিয়ম মানতে হবে। আমি শনিবার উপোস করি তাই তোমায়ও করতে হবে।
আমার ধর্ম পবিত্র তাই যেহেতু তুমি নালা পরিস্কার করো, যেহেতু তুমি ধর্মের ব্যাপারে কিচ্ছু জানো না, তাই তুমি আমার ধর্ম বইতে পারবে না!
এ হেন পরিস্থিতে শুরু হল ধর্মযুদ্ধ। এবার মানুষের সাথে ভাগ হয়ে গেল বসুন্ধরাও। ভাগগুলির নাম হল দেশ।
প্রতিটি দেশেই শান্তি ফেরানোর লড়াই শুরু হল। গদিতে উঠে বসল একজন, তার নাম দেওয়া হল রাজা। মানুষ হয়ে উঠলো দেশের প্রজা। উন্নতিসাধনে লেগে পড়ল প্রতিটি দেশ।
এবার শুরু হল দ্বেষের খেলা। মানুষ বুঝলো যার কাছে যত অর্থ সে ততই খুশি, অর্থ থাকা মানেই শান্তি থাকা। ব্যস, শুরু হল দেশ-দেশ আক্রমন, সাম্রাজ্য দখল করে অর্থ সংগ্রহের লোভ।
মারা পড়ল মানুষ, মারা পড়ল পোষ মানানো জন্তুরা, শান্তি তবু এল না।
শান্তি ফেরানোর জন্য শুধুমাত্র একটা পরিবারই কেন সিদ্ধান্ত নেবে? সেই থেকে গণতন্ত্রের শুরু। ঠিক হল দেশে কোনো রাজা থাকবে না; যারা শান্তি ফেরাতে পারবে বলে মনে করে তারা একটা দলে ভাগ হয়ে যাবে, আর দেশের মানুষ যে দলকে উপযুক্ত বলে মনে করবে সেই দল চালাবে দেশ।
আজও প্রতিটি দেশে শান্তি আনার জন্য মাইকের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ভাষন দিয়ে যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দল।
যতবারই নির্বাচনের সময় হয়, মানুষ ভাবে এই বুঝি শান্তি এল, এই দল কথা রাখবে। দল গদিতে চড়ে বসে, শান্তি তবু ফেরেনা।
কি যায় আসতো যদি মানুষ মূর্খই থাকতো? কি যায় আসতো যদি মনের ভাব প্রকাশের একটাই ভাষা থাকতো?
কি যায় আসতো যদি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, এসব না হয়ে মানুষ নিজেকে ‘মানুষ’ বলে পরিচয় দিত?
জামাকাপড় কি ধর্ষণ রুখতে পেরেছে? নাকি আজকাল কেউ পেটের রোগে মারা যায় না? শান্তি কি আসলে টাকায়?
যদি তা নাই হয়, তাহলে মানুষ এতদিন ধরে এমন একটা পথে হাঁটছে; শান্তি যেখানে মরীচিকা।
আর মজার ব্যাপার হল জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীরা এই পথটাকে নিয়ে ভেবেও দেখেনি।
শান্তি বলতে তাদের কাছে আজও জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাওয়া, ঘুম এবং আত্মরক্ষার জন্য দৈহিক শক্তি।
তাহলে আসল বুদ্ধিমান কারা হল?