মিনি-র ভেদ দংশন

মিনি তাড়াতাড়ি ফোনটা ধর….সারাদিন কি করিস কি?খালি খাওয়া আর ঘুমানো..কোনো কাজ করতে বললেই ওমনি মায়ের হয়ে গেল মুখ ভার।বলি ও মুখপুড়ি যা লো যা,দৌড়ে গিয়ে ফোন টা ধর।দেখ তোর বাবা হাসপাতাল থেকে করলো নাকি?মিনি-র ঠাকুমা খুব খিটখিটে,আগেকার দিনের স্বভাব এখনো গেলনা।কথায় কথায় মিনি কে যাচ্ছাতাই বলে অপমান করে, শুধু সে মেয়ে বলে।সে নাকি মেয়ে,পরের ঘর চলে যাবে।তখন তো তাদের দেখার কেউ থাকবেনা।আর তাছাড়া সে তো আর এবাড়ির বংশ বৃদ্ধি করবেনা।পরের ঘর গিয়ে ঘর-সংসার করবে।শুধু এই কারনে তাকে উঠতে বসতে এত কথা শুনতে হয়। শুধু তাই নয়,বাড়ির সকল কাজ সেই কাক-ভোর থাকতে উঠে ওই টুকু মেয়েটাকেই করতে হয়।

যাই হোক, মিনি তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে নেমে এসে ফোনটা ধরলো।ঠাকুমা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল এবং খালি মনে মনে বলছিল,”হে ভগবান,এবার যেন একটা ফুটফুটে ছেলে হয়,আমার বংশের বাতি জ্বেলে বিস্তার করো।” মিনি তখন ফোনে কথা বলছিলো-“হে বাবা বলো।”ফোনের ওপার থেকে বাবা বলে উঠলেন -“মিনি তোর ভাই হয়েছে।তোর ঠাকুমাকে বল ওরা এখন ভালো আছে,আর আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি কেমন।”
মিনি বললো-“আচ্ছা,ঠিক আছে।”

এটাও পড়তে পারেন – প্রতিবেশী

“আমি পাই না ছুঁতে তোমায়…”

ঠাকুমা সেটি শুনে আনন্দে আটখানা।সবাইকে খুশির খবরটা দিতে যাবে,এমন সময় ফোন রেখে দেবার পর মিনি বললো,”ঠাকুমা,বংশ প্রদীপ ভাই কেনো গো?আমি কেনো নয়!আমি ও তো এবাড়ির সন্তান।”ঠাকুমা উঠোন থেকে ঝাঁটা টা কুড়িয়ে মিনির গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো-“হতচ্ছারি,আর কোনোদিন ও ওমন কথা মুখে ও আনবিনা।”

(ছবি- সংগৃহিত)

মিনি-র এভাবেই কষ্টে জীবন কাটে।ওই টুকু মেয়ে ছোটো থেকে কি সহ্য করেনি বলতে পারো?আধপেটা হয়ে থাকতো।তাও কিছু বলার সাহস ছিল না।মা ভালোবাসলেও শ্বাশুড়ির মুখের ওপর কথা বলার সাহস ছিলনা।তাই সব সহ্য করতে হতো।ঘরের সব কাজ করেও মার-ধোর,লাথি-ঝাঁটা কি খায়নি!

যাই হোক,তবু তো চারটি খেতে পেত।আর এখন ভাই ঘরে আসার পর তার দিকে কারোর ঘুরে তাকানোর ও সময় নেই।মাছের কাঁটা টাও পর্যন্ত এখন তার জন্য পড়ে থাকে না।ছেলে ঘরে আসার পর তার ওপর অত্যাচার আরও বেড়ে যায়।মিনি-র খুব কষ্ট হয়, কিন্তু কি করবে?উপায় নেই।ওইভাবেই বড়ো হতে হয়।যত আদর ওই ভায়ের ওপর ই।
তবে মিনি কিন্তু তার ভাইকে খুব ভালোবাসতো।

 

(ছবি – সংগৃহীত)

দুজনেই পড়াশোনাই খুব ভালো ছিলো। কিন্তু মিনি-র কপাল খারাপ,মাধ্যমিক অব্দি ও পড়ালোনা।ঠাকুমা বললো-“ও কি করবে অত পড়ে?সেই তো পরের ঘরে খুন্তি নাড়বে।ওর পেছনে আর টাকা নষ্ট করতে হবে না।ছেলের পেছনে ঢাললে লাভ হবে।”ব্যাশ,ওমনি মিনির পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেল।

(ছবি- সংগৃহীত)

কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখো,ভাবলেও হাসি পায়,আজ বারো বছর হলো মিনি-র বিয়ে হয়েছে।আর তার ভাই সেই বিদেশ গেছিল পড়তে,আর আসেনি।ওখানেই নাকি সংসার পেতেছে।অত যত্ন করে মানুষ করলো যাকে,সেই কিনা ওদের ছেড়ে একা থাকছে।আর মিনি যে কিনা দিনরাত অত্যাচারিত হত,আজ সে দুটো ঘর-ই সামলাই একা হাতে।দুটো সংসার সে একা দেখভাল করে।যে ঠাকুমা তাকে দুর দুর করতো,সেই বিছানাগত বুড়ির সেবার সব ভার ওই মেয়েই নিয়েছে।

কে বলে মেয়েরা পারেনা?তাহলে এই জগতে বংশবিস্তার কারি কোটি কোটি পুরুষের জন্ম হয় কিভাবে? আসল বংশবিস্তার তো মেয়েরাই করে।নয়লে এত এত মানুষের সূত্রপাত কি এমনি ই হল?
একটা ছেলের আর একটা মেয়ের সমান অধিকার হওয়া উচিত কারন তারা একে-অপরের পরিপূরক হয়।মিনি ভেদ দংশন করে, তা বুঝিয়ে দিল।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *