ভেবেছিলাম গল্পটির নাম দেব দুটো পাখির প্রেম বা দুটো পাখির সংসার; কিন্তু না নাম দিলাম দুটো পাখি। ভাবলাম যে দুটো পাখির মধ্যে দিয়েই অনেক কথাই বলে যাওয়া যায়। বাড়িতে বা রাস্তাঘাটে হামেশাই দেখা যায় দুটো শালিক, দুটো ময়না অথবা দুটো সাধারন কাক। কোনোদিন কি ভেবে দেখেছি, তাদের একটি প্রেমের কাহিনী বা সংসার থাকতে পারে। না দেখিনি। কারণ- দেখার হয়তো সময় ছিল না অথবা খুব তুচ্ছ বলে দেখিনি। কিন্তু হঠাৎ কোনোদিন মন কেমনের দিনে দেখবে বাড়ির ছাদে কিংবা কোনো গাছের ডালে দুটো শালিক কিংবা দুটো ময়না বা খুব জোর হলে দুটো পায়রা- এরাও বেশ কিচির-মিচির করে কিছু বলছে। কি বলছে বোঝার উপায় নেই! কিন্তু যদি মনটা অন্যরকম থাকে দেখবেন সেটা আমার বা আপনারই কোনো কাহিনী। হ্যাঁ, দেখবেন বাড়ির রেলিং-এ একটি পায়রা আরেকটি পায়রাকে বেশ বাকুম বাকুম করে কিছু বলছে। সাধারণত আমাদের সেটা বিরক্ত লাগবে। কিন্তু খেয়াল করে দেখবেন সেই মেয়ে পায়রাটি সেই ছেলে পায়রাটিকে রাগ দেখাচ্ছে যেন কোন অভিমানী প্রেমিকা। আবার কখনো দেখবেন দুটো শালিক দূর থেকে একে অপরকে দেখে যাচ্ছে যেন কোনো প্রথম প্রেমের আবেশ।
এমনই একদিন শান্ত ভরদুপুরে বাড়ির ছাদে গিয়েছিলাম- দেখলাম বাড়ির পাশের সুপারি গাছটিতে দুটো বুলবুলি বাসা বেঁধেছে। ছাদে যাওয়ায় ওরা বেশ অসন্তুষ্ট। যেন ওদের প্রেমের বিঘ্নতা দিলাম। বেশ ক্যাচ ক্যাচ করছে। আমারো রাগ হল। এমনই ভাবে কিছু দিন পর পর গেলাম ছাদে এবং লক্ষ্য করলাম যে, সেই সুপারি গাছটিতে বুলবুলি দুটো তাদের সংসার পেতেছে। হয়তো সেই গাছটায় তাদের দুই তিনটে বাচ্চা আছে। তাই এত হূলস্থুল কান্ড। তারপর বেশ কিছুদিন গেল আর তেমন যাওয়া হয়নি বুঝলাম তাদের সংসারের ব্যাঘাত দিচ্ছি। এরই মধ্যে একদিন হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া। বিশাল ঝড়, তারপর মেঘ কেটে গেলে, সেই বুলবুলিগুলোর আবার কিচিরমিচির আওয়াজ। ব্যালকনিতে বেরিয়ে দেখলাম তাদের না হওয়া সাধের সংসারটি মাটিতে পড়ে আছে, লুটোপুটি খাচ্ছে। আর তাই তাদের এত কষ্ট হচ্ছে। খুব সাধারন একটা ঘটনা। কিন্তু ওই দুটো অবুঝ পাখির ওই যে না হওয়া সংসারটা যেন আমাদেরই কথা বহন করে। এমন অনেক দাম্পত্যই তো হয়, যাদের সংসার জীবন আর হয় না।
বুলবুলি দুটো তাদের না হওয়া সাধের সংসারটি দেখে সহ্য করতে পারে নি। তাই তারা পরের দিন আর ওই গাছটিতে ছিল না। খুব সাধারন দুটি জীব মানুষের জীবনের একটা বড় অঙ্গকে দেখিয়ে দিল যেটা কিনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত। আমি জানিনা এর আগে কেউ কোনোদিন কোনো পাখি নিয়ে লিখেছে কিনা! আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতার একটি ছোট্ট সূত্র দেখালাম ওই পাখিগুলোরও একটা ভালোবাসা, একটা সুখ, না পাওয়ার দুঃখ থাকে। আকাশে ভাসমান চিলগুলোকে দেখবেন মনে হয় না, কি সুন্দর ভেসে বেড়াচ্ছে, তাদেরও দুঃখ হয়, অভিমান হয়। কিন্তু তারা একে অপরকে ছেড়ে যায়না। জানে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছেড়ে গেলে সে আর বাঁচবে না বা প্রকৃতি বাঁচতে দেবে না। তাই সময় পেলে পাখি দেখবেন অনেক না বলা কথা অনেক না বলা অনুভূতি পেয়ে যাবেন তাদের মধ্যে।