-দেখো তো প্রিয়া,এবার কেমন লাগছে!
-একি তুমি আজ হঠাৎ আমার মাথায় গোলাপ গুঁজে দিলে যে,
লোকে তো হাসবে,বয়স তো কম হলনা।
– জানো প্রিয়া, নাতি-নাতনিরা সবাই আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছিল,বলছিল আমাদের নাকি আদ্যিকালের প্রেম।
ছবি- (সংগৃহীত)
হ্যাঁ,আমরা এখনকার মতো ফোনে মেসেজ করিনি,
হুটহাট করে যখন-তখন ফোনে খবর ও নিতে পারিনি,
কিন্তু সেই পত্র পাঠানো,তোমার মনে আছে?
অনেকদিন পর যখন দেখা হত,সে মজাটা এখনকার ছেলেমেয়েরা কি বুঝবে?
আর কদিন ই বা বাঁচবো বলো?আজ আছি,কাল নেই।বয়স বিরাশি তে ঠেকেছে।
তোমার ও কম হলোনা।
সংসারে তো সারাদিন খেটে এসেছো,
নিজের কথা একটুও ভাবোনি।
এখন তো শরীরে অসুস্থতার জন্য কতদিন বাড়ির বাইরে পা রাখোনি।
তাই আজ তোমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো।
ছবি- (সংগৃহীত)
আমার দেওয়া লাল শাড়িটা পড়বে কিন্তু,
বয়স হলেই বা,কতদিন যেন তোমায় বেনারসিতে দেখিনি।
প্রিয়া আজ আমরাও একসাথে ফুচকা খাবো,কেমন?
একসাথে হাত ধরে হাঁটবো,
কাজ,কাজ করে তো গানটা ছেড়েই দিয়েছো,
আজ আমরা আবার বাড়ি ফেরার পথে রবীন্দ্রসঙ্গীতে ডুবে যাবো ।
ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার জন্য নিজের ভালো-মন্দ ও বিসর্জন দিয়েছো,সেকি আমি বুঝিনা?
তখন তো ঘুরতে যাবার জন্য কত্ত বাইনা করতে।
– আচ্ছা,তোমার আজ হঠাৎ হলো কি বলতো?
আজ কি এমন,যে এত সেজে-গুজে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলছো?
– আমি জানতাম,তুমি ভুলে যাবে,
অবশ্য তোমার আর দোষ কি,সারাদিন যা ব্যস্ত থাকো,
একটু তো নিজের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়।
আজ আমাদের বিবাহ-বার্ষিকী।
প্রিয়া,আমার হয়তো বড়ো হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ নেই,
কিন্তু আজকের দিনটা এভাবেই কাটাতে চাই।
জানিনা আর কোনোদিনো আসবে কিনা এই দিন,
তাই রোজকার ব্যস্ততা থেকে একটু আলাদা রাখতে চাই আজ তোমাকে।
ছবি- (সংগৃহীত)
– তুমি আমার কাছে আছো,এটাই তো আমার কাছে আনন্দের।আর কিছু চাইনা।
– না প্রিয়া,আজ আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়াবো।
আকাশ,বাতাস,পাখি,গাছ,নদী সবাই সাক্ষী থাকবে আমাদের মধুর সম্পর্কের।
যাও প্রিয়া,আর না বলোনা,তৈরী হয়ে এসো,
আমি অপেক্ষা করছি কিন্তু।
এটাও পড়তে পারেন – তুমি আসবে বলে
কি করে বলি তোমায় প্রিয়া!
এটাই হয়তো শেষ বিবাহ-বার্ষিকী আমাদের।
ক্যান্সার যে সূর্যগ্ৰহনের মতো তোমার শরীরকে গ্ৰাস করেছে,সে গ্ৰহন আর কাটবেনা।
তুমি কষ্ট পাবে বলে এতদিন কিছু বলিনি,
কিন্তু,এবার তো তুমি সব জানবে।
তাই শেষবারের মতো তোমায় আজ সাজিয়ে-গুছিয়ে বাইরে নিয়ে যেতে চাই,
তোমাকে তো শেষ অব্দি ধরে রাখতে পারলাম না,
তাই শেষটুকুতে এই আনন্দটা তোমাকে দিতে চাই,
হ্যাঁ,শেষটুকুতে তোমার মুখে ওষুধের গন্ধ দূর করে মিষ্টি হাসিটা এনে দিতে চাই।