ঠিক এরকমই এক বর্ষামুখর বিকেলে নিরালা কাফে-তে ঠিক পাশাপাশি দুটো চেয়ারে ছিলাম আমি আর তুই। শুরুটা সেখান থেকেই। বাইরে তখন মুশলধারায় বৃষ্টি। জানলা দিয়ে বৃষ্টির ঝাঁট আর একমুঠো দমকা হাওয়া আমার চুলটা বারবার এলোমেলো করে দিচ্ছিল। তাতে কী! তুই তো ছিলিস! বিদ্যুতের চোখ রাগানিতে বারবার কেঁপে উঠছিল আমার শরীর, মনে ছিল এক অজানা উত্তেজনা।
জানিনা কেন খুব ভয় করছিল আমার। তোর হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছিল আমার দুটো হাত। মনে হচ্ছিল, যদি এমন হতো! যে কোন ফটো-র মত সারাজীবন ওই মুহুর্তটাকে ক্যাপচার করে রাখা যায়! ওই মুহুর্তটুকুর জন্য বাইরের সব ক্লান্তি, চিন্তা ভুলে আমাদের দুটো মন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল যেমন মেঘ আর বৃষ্টি এক হয়ে বর্ষা ডেকে আনে। সময়টা যেন থমকে গিয়েছিল, অনেকটা সময় ওই একইভাবে বসেছিলাম। এক অদ্ভুত ভালোলাগায় ভরে যাচ্ছিল আমার শরীর-মন।
সেইদিনের পর থেকেই আস্তে আস্তে টুকটাক দেখা করা, চিঠি চালাচালি, এস-এম-এস আদান-প্রদান, অকারণেই ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথোপকথন-এসব শুরু। প্রথম দিকে সবটা মন্দ চলছিল না; বেশ একটা মোহোর মধ্যে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। কিন্তু ক্রমে আমাদের এই ভালোলাগাগুলো কেমন করে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল আর তার বদলে সম্পর্কটা অচিরেই ঝগড়া, সন্দেহ প্রভৃতি অপ্রিয় জিনিসে ভরে উঠেছিল। তারপর এক বছরের মধ্যেই ঝগড়া-ঝামেলার নিষ্পত্তি ঘটিয়ে শেষ হয়ে গেল সম্পর্কটা হঠাৎ করেই ঠিক যেমন শুরু হয়েছিল।
আজ আবার একবার আমি সেই কাফে-তে। মাঝখানে কেটে গেছে ৪ টে বছর।
নিখুঁতভাবে হিসেব করলে ৪ বছর ৬ মাস ৫ দিন। প্রত্যেকটা দিন এইভাবেই গুনেছি আমি, আর অপেক্ষা করেছি তোকে একটিবার দেখার জন্য। তাইতো আজ তুই আমার কাছে ফিরে এসেছিস পুরোপুরি আমার হয়ে। এখনও বাইরে সেই বিদ্যুৎের ঝলকানি। আবার আমরা আজ সেই সময়ের স্রোতে ভেসে গেছি, না! আর ঝামেলা নয়, কোনো তর্ক- বিতর্ক নয়। এবার শুধুই ভালোবাসা, কাফে-তে আজ অাবার দুটো চেয়ার উষ্ণতায় পরিপূর্ণ আর কাফের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে আবছা ভেসে আসছে —
” আজ জানে কি জিদ না করো “