– মা, ভালোবাসা কি কোনো নিয়ম মেনে হয়? আজ এই যুগে দাঁড়িয়েও তুমি এরকম ব্যাকডেটেড কথাবার্তা বলবে? শোনো, আমি ওকেই ভালোবাসি আর ওর সাথেই…
ঠাস করে একটা চড় নেমে এলো মনীষার গালে। রাগে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে সুমনার। বাবাহারা এই মেয়েকে ছোট থেকে কত কষ্ট করে মানুষ করেছে সে। আর আজ তার এই প্রতিদান! শেষে একটা মেয়ের সাথে… ছি! সমাজে মুখ দেখাবে কি করে এবার!
– আমি আজই রিতমকে ফোন করছি। সামনে যে শুভ দিন আছে তাতেই তোর বিয়ে দিয়ে দেব। আর ততদিন ঐ অসভ্য মেয়েটার সাথে তোর দেখাসাক্ষাৎ সব বন্ধ। চল, আমার সাথে এক্ষুনি। টানতে টানতে মনীষাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল সুমনা।
খাটে শুয়ে শুয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে মনীষা। কি দোষ তার! সে যদি একটা মেয়েকে ভালোবাসে, তার সাথে সারাজীবন থাকতে চায় এতে ভুলটা কোথায়? সমাজ যদি এগোতে না পারে তার দায় মনীষা কেন নেবে? নিজেকে খুব অসহায় লাগে মনীষার। ফোনটা নিয়ে অপর্ণাকে ফোন করে সে।
– হ্যাঁ বল, বাড়িতে সব ঠিক আছে?
– না, কোনো কিছু ঠিক নেই! মা কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না। মায়ের কোন দূরসম্পর্কের আত্মীয় আছে, তার চেনা কোন রিতমের সাথে পরের বিয়ের তারিখেই বিয়ে দিয়ে দেবে বলছে! কি করবো বুঝতে পারছিনা কিছুই। ঘরে বন্দি করে রেখেছে আমাকে! আমি..আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবনা অপু!
– কান্না করিস না। কাকিমা যে মানবেনা তোকে তো আগেই বলেছিলাম। আমার তো এসবের কোনো সমস্যাই নেই। আমার বাবা মা তো কবেই…। যাক বাদ দে, শোন চিন্তা করিস না। আমাকে একটু সময় দে। একটা না একটা উপায় ঠিক বের হবে।
– উপায় পাওয়া যাবে তো রে? আমি জাস্ট কিছু ভাবতে পারছিনা আর।
– একটু বিশ্বাস কর আমাকে, মনীষা আর অপর্ণাকে আলাদা করা সহজ নয় রে!
– সত্যি বলছিস?
– সত্যি!
সকালে উঠে ব্যালকনিতে দাঁড়ায় সুমনা। কালকে রাতে খাবার নিয়ে মনীষার কাছে গিয়েছিলো। বিছানায় মুখ গুঁজে একভাবে পড়েছিল মনীষা। মায়ের ডাকে সাড়া পর্যন্ত দেয়নি। অনেকক্ষন অপেক্ষা করে শেষে থালাটা টেবিলে রেখে চলে আসে সে। মনটা হুহু করে উঠছে। ছোট থেকে কোনোদিন গায় হাত তুলতে হয়নি তাকে। বরাবর বাধ্য মেয়ে ছিল মনীষা। উচ্চমাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করে নামী কলেজে ভর্তি হলো ফিজিক্স নিয়ে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে এরকম… অপর্ণা মনীষার স্কুলের বান্ধবী। একটু টমবয় গোছের। প্রায়ই এখানে আসতো। কিন্তু ওদের মধ্যে যে অন্যরকম কিছু ছিল ঘুণাক্ষরেও কিচ্ছু টের পায়নি সুমনা। রিতমের কথাটা মনীষার কাছে বলতেই যখন মনীষা সব খুলে বললো সুমনাকে, সব শুনে তার মনে হচ্ছিলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
চোখ বন্ধ করলো সুমনা। নাহ্, আর ভাবার কিছু নেই। রিতমের মায়ের সাথে কাল কথা হয়েছে। মনীষার সাথে রিতম আজ দেখা করতে আসবে। তার আগে মনীষাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঠিক করতে হবে।
পায়ে পায়ে মনীষার ঘরে গিয়ে দেখে মনীষা কোথাও নেই! খাবারের থালাটা ওরকমই পড়ে আছে। বাথরুম, কিচেন সব জায়গায় দেখা হলো। কোথাও নেই। হঠাৎ সুমনার মনে পড়লো গতকাল রাতে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করা হয়েনি। মাথায় হাত পড়লো মনীষার। তখনই মোবাইলটা বেজে ওঠে। স্ক্রীনে ভাসে অভিরুপের নাম। অভিরুপ মনীষার বাবার বন্ধু। ওদের ফ্যামিলি ডক্টর। “হ্যালো” বলতেই ওপারে অভিরূপের গলা শোনা গেলো, “হ্যালো সুমনা, তাড়াতাড়ি আমার হসপিটালে চলে আসো, মনীষার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে!” চোখে অন্ধকার দেখে সুমনা। ধপ করে বসে পড়ে খাটে।
(চলবে)