জল-নুপুর

সকাল থেকেই কৌশিকের মনটা তেতো হয়ে আছে। একেই দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে কলকাতা ভাসছে। সেই অবস্থায় বহু কষ্টে জল পেরিয়ে যাওবা অফিস পৌঁছালো, বস প্রজেক্ট দিল ফটোস্টোরি বানানোর। সেটা আবার কালকেই সাবমিট করতে হবে। অগত্যা এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে প্যান্ট গুটিয়ে ক্যামেরাটা হাতে করে কৌশিক বেরিয়ে পড়লো রাস্তায়। এদিক সেদিক কিছুটা ঘুরে মনে মনে একটা প্লট ভেবে নিল, তারপর একটা মনের মতো জায়গা বেছে নিয়ে ক্যামেরাটা সেট করলো। সবে দু’একটা ছবি উঠেছে, হঠাৎ “ওরে বাবারে” বলে কোথা থেকে একটি মেয়ে এসে কৌশিকের সামনে হুড়মুড়িয়ে পড়ে গেল! “আরে আরে কি করছেন!

দেখে চলতে পারেন না?” বিরক্তির সুরে বলে কৌশিক। “আশ্চর্য! একটা মেয়ে চোখের সামনে পড়ে গেছে, কোথায় তাকে একটু হেল্প করবেন তা নয় রুডলি ব্যবহার করছেন! পাশে তাকিয়ে দেখুন কিভাবে আপনার ব্যাগটা রেখেছেন নীচে, সেটাতেই তো পা লেগে…”। “আচ্ছা আমার ভুল, সরি তার জন্য। এবার সরুন ক্যামেরার সামনে থেকে” বলে মেয়েটাকে সরাতে গিয়ে প্রথমবার তাকে ভালো করে দেখতে পেলো কৌশিক। বাসন্তী রঙের চুড়িদার, লম্বা চুল পরিপাটি করে বিনুনি বাঁধা, চশমার পেছনে একজোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, অপূর্ব সুন্দরী না হলেও আলগা মিষ্টত্ব আছে মুখে।

কয়েক সেকেন্ড সেই দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় কৌশিক। “আচ্ছা অভদ্র লোক বটে আপনি, সৌজন্যবোধটুকুও জানেন না?” বলে গটগট করে সামনের দিকে হেঁটে চলে গেলো মেয়েটি। আর তখনই… চুড়িদারের ওড়না কৌশিকের হাতটা ছুঁয়ে গেলো। যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষণ তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কৌশিক। আলতো ভাবে হাতের সেই জায়গাটা ছুঁয়ে দেখে সে। সব যেন কিরকম ঘেঁটে গেলো কৌশিকের। “ধুত্তোর! আজ দিনটাই মাটি” মনে মনে বিড়বিড় করে। হঠাৎ পায়ে কিছু একটা ঠেকতে ঝুঁকে সেদিকে তাকায় সে। একটা নুপুর। “মনে হচ্ছে এই মেয়েটারই হবে”। হাতে তুলে কী ভেবে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল সেটা।

ঘরে ফিরে ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ এক জায়গায় বসলো কৌশিক। মনটা কিরকম অস্থির লাগছে। “কাজটা কমপ্লিট হলো না, কাল কপালে কি যে নাচবে! থাক হয়নি যখন এখন ভেবে কি হবে! তারচেয়ে একটু ঘুমিয়ে নি, মাথাটা ফ্রেশ করে বিকেলে কাজ নিয়ে বসা যাবে।” বিছানায় মাথাটা এলিয়ে দিল কৌশিক। কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে একজোড়া বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। মনটা খারাপ হয়ে গেলো হঠাৎ। “এই ভাবে বলাটা ঠিক হয়নি ওনাকে।” উঠে বসে কৌশিক। ব্যাগ থেকে ক্যামেরাটা বের করে ফটো দেখতে গিয়ে অবাক! অটোশাটারে পরপর বেশ কয়েকটি ছবি উঠে গেছে সেই বাসন্তী চুুড়িদারের।

ছবিগুলো ল্যাপটপের পর্দায় দেখতে থাকল কৌশিক। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে সাথে মনটাও আবেশে ভিজে উঠছে কি? অল্পক্ষণের দেখাতে মনটা এমন আনচান করছে কেনো? ব্যাগ থেকে নুপুরটা বের করে সামনে রাখলো কৌশিক। হাল্কা হাসি ছুঁয়ে গেলো মুখে। “পরের বার দেখা হলে সরিটা ভালোভাবে চেয়ে নিতে হবে। নুপুরটাও তো মালকিনকে ফেরত দেওয়া দরকার।” কিন্তু এতবড়ো শহরে কৌশিক কি তাকে খুঁজে পাবে? দেখা যাক, কালকে আবার সেই জায়গাটাতে দাঁড়াবে কৌশিক। এইবার কিন্তু ব্যাগটা ঠিক জায়গায় রাখতে হবে।

আর হ্যাঁ, প্রজেক্ট এর গল্প কৌশিক পেয়ে গেছে। গল্পের ছবিও। শুধু নিজের মনের কল্পনায় একটা নাম দিল তাকে… ‘জল-নুপুর।’

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *