এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। শান্তনুর ডায়েরি-তে আর লেখা হয় নি বেশ কিছুদিন। শুভ্রা এখনো শান্তনুকে কিছুই বলে নি। শান্তনুও চিন্তিত বেশ। কারণ থাকার মধ্যে মধ্যবিত্ত বাঙালির মানসিকতা ছাড়া খুব একটা বেশি কিছু নেই। তবে ভালোবাসাটুকু ছিল। নাকি ছেলেবেলার বাল্যখিল্যতা কে জানে?
পরেরদিন টিউশনে বেশ ফিসফিস চলছে। কত কথা থাকে বন্ধুদের মধ্যে , তাই না। তবে শান্তনু একেবারেই চুপ। ব্যাপারটা ঠিক মনে হয়নি অভীকের। অভীক তার বান্ধবীকে শেষ অব্দি জিজ্ঞাসা করেই ফেললো “আচ্ছা শুভ্রা কি কিছু বলেছে ?” শান্তনুর টেনশনের পারদ এরমধ্যে 100 ছুঁয়েছে ।
পরীক্ষার ফলাফল খুব একটা খারাপ ছিল না সেদিন। ওদিক থেকে উত্তর আসলো “হ্যাঁ, শুভ্রারও শান্তনু কে পছন্দ।” পুরো টিউশনে এই নিয়ে মাতামাতি। কিন্তু শুভ্রার চোখে চোখ রাখার সাহস হচ্ছিলো না, বাড়ি ফেরার সময় খানিকটা ক্যাবলার মতোই তাকিয়ে ছিল শান্তনু। এই আনন্দে রাত্রিবেলায় ডায়েরি নিয়ে দুটো লাইন –
“এবার তোমার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কেউ
এই শীতে বৃষ্টি হবে, জোয়ারে বাড়বে ঢেউ ।”
প্রতিসপ্তাহে দেখা তো হতো, কিন্তু সবদিন কথা হওয়ার সুযোগ হতো না। তাই,হাতে ফোন না থাকলেও বাবা বা মার ফোন থেকে এক দুদিন মেসেজ বিনিময়। তারপর আবার ডিলিট। জিও সিমের জন্ম হয় নি তখনও। ফলস্বরূপ ফোনের ব্যালেন্সে গরমিল পাওয়া যেতো হামেশায় । তবে, এর কোনো সুরাহা করা শান্তনুর পক্ষে সম্ভবও ছিল না। তখন এসব ওতো গায়ে লাগতো না।
সেই বছর দুর্গাপুজোয় প্রথম কোনো সমবয়সী মেয়ের সাথে বেরোনো; একটা বেশ থ্রিলিং ঘটনা বলা যেতেই পারে শান্তনুর জন্যে। তবে অনেকবন্ধুই ছিল সাথে। তার ভালো কেটেছিল সেদিনটা।
কিন্তু, সবদিনের মোট হিসেব তো একই হয়। সুখও বেশি দিন টেকে না। এখন শুভ্রার সাথে তার আর কোনো সম্পর্ক নেই। কথাও হয় না। তাদের প্রেমকে চাইল্ডহুড ইনফ্যাচুয়াসন বলা যেতে পারে। কিন্তু সেই বিগতদিনগুলোকে মুছে ফেলা, সম্ভব হয় নি। শান্তনুর ডায়েরি টাও কোনো এককোণে ধুলো মাখছে হয়তো।
এখনতো, স্মার্টফোন এসেছে হাতে। তাই মানুষও একটু স্মার্টলি প্রেমে পড়ে। কৃত্রিমতা প্রেমকে গ্রাস করলেও, ভালোবাসাটাকে পারে নি। কারণ, প্রেম করতে বাহ্যিক অনেককিছুরই প্রয়োজন, ভালোবাসতে লাগে না এতকিছু, একটা মন থাকলেই হয়।
( সমাপ্ত )