আমার ছোটবেলা কেটেছে কুচবিহারের ছোট্ট জনপদ মাথাভাঙ্গায় (হ্যা জায়গাটার নাম মাথাভাঙ্গা। যত খুশি হেসে নিতে পারেন)। তো সেইসময় রাখির দিনটার জন্য মুখিয়ে থাকতাম সব বন্ধুরা। রাখী কেনার পর চলতো বাছাইয়ের পালা। কাছের বন্ধুগুলোর জন্য শৌখিন সব রাখী, কত বাহারি নাম, ময়ূর রাখী, কাঠের রাখী, পালক রাখী, গণেশ রাখী আরও কত কি। আর কিছুটা দূরের বন্ধুদের জন্য থাকতো পাতি তুলো রাখী। স্কুলের সব স্যার- ম্যাডাম, পাড়াতুতো দিদি, দাদা, ভাই, বোন, কাকু, কাকিমা এমনকি মায় বাপ-মা সবাইকে রাখী পড়াতাম। হাতের কব্জি থেকে কনুই হয়ে গোটা হাত, শেষে আঙ্গুল পর্যন্ত বাঁধা থাকতো হরেক কিসিমের রাখী। দল বেঁধে স্যারদের রাখী পড়ানোর পর চলতো হুল্লাট খাওয়াদাওয়া। কে কত ভালো খাওয়াবে, স্যারদের মধ্যে এটা নিয়ে একটা কম্পিটিশন চলতো। আর আমরা মজা লুটতাম সবটার।
কিন্তু এত সবের মাঝেও ছেলে-ছোকরার দল রাখীটাকে মেতে থাকতো অন্য একটা কারণে। তখন একটা অলিখিত নিয়ম ছিল, ক্রাশকে রাখী পড়াতে পারলেই কেল্লাফতে। মানে কোনো বন্ধু যদি তার ক্রাশকে রাখী পড়িয়ে আসতে পারে, তবেই সে প্রায় তার মনের কথাটা বলতে পেরেছে বলে ধরে নেওয়া হবে। অর্থ্যাৎ রাখী পড়ানোটা তখন প্রায় প্রপোজ করার সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। তো এই গল্পটি হলো আমার এক কাছের বন্ধু মৈনাকের রাখী অভিযান নিয়ে।
সেবারে রাখীর দিন সকাল সকাল সব বন্ধুকে রাখী পড়ানো হলো, স্কুলে গিয়ে সবাই মিলে স্যার ম্যাডামকে রাখী পড়িয়ে, পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া করে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া হলো রাখী অভিযানে। একে একে সব টিউশন টিচারকে, অন্য স্কুলের বন্ধুবান্ধবকে রাখী পড়ানোর পর দুপুর একটা নাগাদ বন্ধুদের ভিড়টা আস্তে আস্তে পাতলা হতে শুরু করলো। পড়ে রইলাম আমি, মৈনাক আর তমাল। স্কুলের পাশের দোকানে মাউন্টেন ডিউতে চুমুক দিতে দিতে মৈনাক বললো, ” ভাই, আজ রিকাকে রাখী পড়াবো।” তমাল আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বললো, ” ধুস শালা, যতসব বাতেলা। রিকার সামনে দাঁড়ানোর দম নেই, বাবু আবার রাখী পড়াবে।” বলে রাখা ভালো, আমি আর তমাল অন্যদের পোঁদে আগুন দিয়ে মজা লুটতে এক্সপার্ট ছিলাম। মৈনাক মাউন্টেন ডিউটা এক ঢোকে শেষ করে বলল, ” চল…”। আমি আর তমাল মুচকি হাসতে হাসতে মৈনাকের পেছন পেছন সাইকেলের প্যাডেলে পা চালালাম। আমাদের অভিযানের প্রথম বেসক্যাম্প ছিল গার্লস স্কুল। গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে চেনা এক বান্ধবীকে দেখে মৈনাক বললো, ” ওই, রিকা কোথায় রে? ” ওর ওই প্রশ্নে কিছুটা হতচকিত হয়ে মেয়েটি বলল যে রিকা স্কুল থেকে নাকি অনেকক্ষন আগেই বেরিয়ে গেছে। আমরা বিষন্ন মনে সাইকেল ঘোরালাম। আমি আর তমাল খিল্লি শুরু করলাম কিন্তু মৈনাক স্পিকটি নট। ওকে ফলো করতে করতে কখন যে রিকার বাড়ির সামনে চলে এসেছি খেয়াল নেই। এবার একটু ভয় করতে লাগলো, মৈনাকের বোধহয় বাই উঠেছে। মৈনাক এই বাই খুব খারাপ জিনিস। একবার বাই ওঠায় ও স্যারের বিচি টিপে দিয়েছিল অন্ধকারে। একটু দূরে নিয়ে গিয়ে মৈনাককে বাড়ি চলে যাওয়ার কথা বললাম। ও আমাদের পাশের গলিতে দাঁড় করিয়ে রেখে সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে এগিয়ে গেলো। হঠাৎ দেখি রিকার বাড়ির বেলটা বাজিয়ে দৌড়ে এলো আমাদের কাছে আড়ালে। দেখি রিকার মা বেরোলো। একই প্রক্রিয়া আরও দুবার ট্রাই করার পরও রিকা বেরোলনা। আমরা তিনজন মিলে গোল টেবিল বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে রিকা বাড়িতে নেই। কিন্তু রিকা কোথায়! কোথায় যেতে পারে মেয়েটা!
আবার সাইকেল নিয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চক্কর দিতে শুরু করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখা তমালের চাপ শিনার সাথে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে গ্রিলের ভেতর থেকে হাত নাড়ছে। আমি আর মৈনাক আগে গিয়ে রাখী পড়ালাম। ও পড়ালো আমাদের। তমাল যখন হাতটা বাড়িয়েছে রাখী পড়ানোর জন্য, তখন হঠাৎ ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন শিনার বাবা ( নিন্দুকেরা বলে, ওনার শরীরে হিটলারের রক্ত বইছে)। আমরা যথারীতি কাটিং খেলাম ঘটনাস্থল থেকে। ফেঁসে গেল তমাল। প্রায় পাঁচ মিনিট পর নবরত্ন কুল পাউডার না মাখা শাহরুখ খানের মতো চেহারা নিয়ে তমাল এলো। ওর এই গলদঘর্ম অবস্থা দেখে, ওকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস করলাম না আমরা।
দুপুর প্রায় তিনটে বাজে। আমরা রিকা অভিযান মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। তিনজনে মানসাই নদীর হাওয়া খেতে খেতে ফেরার পথে সাইকেল চালাচ্ছি। ঢিমে তালে, হাওয়ার মতোই। এমন সময় ব্রিজের ওপর দেখলাম উল্টোদিক থেকে রিকা আমাদের ক্রস করে গেল। আমরা কিছু বোঝার আগেই দেখি মৈনাক অক্ষয়কুমারের থেকেও নিখুঁত ভাবে সাইকেল ঘুরিয়ে নিয়েছে। আমরাও ওর পেছন পেছন সাইকেল ঘোরালাম। হঠাৎ দেখি মৈনাকের মধ্যে বলিউডি আত্মা ভর করেছে। ও রিকাকে ক্রস করে রিকার ঠিক সামনে গিয়ে রাস্তা আটকে সাইকেল থামালো। রিকা মুহূর্তের মধ্যে কোনো ভাবে ব্রেক কষে সাইকেল থামালো। আমরা কিছুটা দূরে দাঁড়ালাম। ভর দুপুরের নির্জন রাস্তায় দু একটা পথচলতি মানুষ দেখি আমাদের দিকে চেয়ে। ততক্ষনে ক্লাইম্যাক্স এসে গেছে। মৈনাক রিকার সামনে গিয়ে ক্যালানে মার্কা হাসিতে দাঁত বের করে বললো, ” তোকে… মানে তোকে রাখী পড়াবো ভাবলাম। ” রিকাও ততোধিক স্মার্টলি বললো, ” হ্যা, পড়া তবে…”। তারপর মৈনাক পকেট থেকে রাখী বের করতে গিয়ে দেখে পকেটে একটাও রাখী নেই। প্রায় দু’মিনিট ধরে পকেট হাতরানোর পর ও রিকাকে বললো, ” এক মিনিট “। বলেই এক ছুটে আমার কাছে এসে আমার হাত থেকে একটা রাখী নিয়ে আবার এক ছুটে রিকার সামনে। মৈনাকের চোখে মুখে উত্তেজনা, রিকা হাত বাড়াতেই তড়িৎ গতিতে রাখীটা বেঁধে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে রিকার চোখ থেকে এক বিন্দু জল গড়িয়ে পড়লো ফর্সা গাল বেয়ে। না ঘাবড়াবার কিছু নেই, উত্তেজনায় মৈনাক এত জোরে রাখীটা বেঁধেছিল যে, রিকার হাতটা কেটে গেছিলো। তাই চোখের জল। যায় হোক, ” প্যার মে কুচ দর্দ জরুরি হোতা হ্যায়! ”
রিকা চলে যাওয়ার পর মৈনাক উত্তেজনায় ফুটছে। আমরাও ওর সাহসের তারিফ করতে করতে বাড়ি ফিরলাম। সেই দিন থেকে বন্ধুমহলে সাহসী প্রেমিক হিসেবে মৈনাকের বেশ সুনাম হলো।
আর এখনকার অবাঙালি কালচারে দীক্ষিত বাঙালিদের বলি, রাখীটা ভাতৃত্বের বন্ধন, বন্ধুত্বের বন্ধন। সুতরাং কোনো মেয়ে রাখী পড়িয়ে দিলেই ছেলেটি তার ভাই হয়ে যায়না। রাখী পড়িয়েও প্রেম করা যায়। অন্তত রিকা আর মৈনাকের পরের মাসে বিয়ে।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.