দেখনদারির ট্রেন্ড

আজকাল খুব দেখনদারির ট্রেন্ড চালু হয়েছে, ঘুম থেকে উঠে “গুড মর্নিং” থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর “গুড নাইট” অবধি আমাদের স্টেটাস না দিলে চলে না! না মানে, আমি যারা এই ট্রেন্ডকে বাঁচিয়ে রাখছেন (মানে বেগুনপোড়া খেয়ে রোস্টেড এগ্প্ল্যান্ট এর ঢেকুরটা ফেসবুকে তোলেন আরকি; কিংবা নতুন কেনা লিপস্টিক লাইনারের বিজ্ঞাপন দেন, ছবি তুলে) বা যারা মোটেই এসব এর তোয়াক্কা করেন না, কারোরই বিরোধিতা করছি না আমি। এসব নিয়ে খামোখা জল বা “চ্যাট” বা স্টেটাস ঘোলা করে লাভ নেই।

আসলে আমি কতগুলো গল্প (বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে) বলতে চাইছি আরকি।

যেমন ধরুন, সেদিন রিম্পা আর তাতাই এর তো খুব ঝামেলা শুরু হয়েছে! কি; না, রিম্পা অনেক রাতে তাতাইকে অনলাইন দেখেছে, অথচ তাতাই কোনো রিপ্লাই দেয়নি, ঝামেলার শেষ হল গিয়ে ব্রেক আপে; মানে একদিন ফেসবুকে ডিপি দেখে দ্বিতীয়দিন প্রেমনিবেদন করা প্রেমের ইতি, তিরিশতম দিনে!
রিম্পা জানলই না; ফোনটা সেদিন তাতাইয়ের ভাই নিয়েছিল; ও ঘুমিয়ে পড়ার পর। আসলে ভাবনাগুলোও ট্রেন্ড নিয়ন্ত্রিত আরকি।

এখানেই শেষ নয়, এই অন্তর্জাল ব্যবস্থা কিভাবে যে জীবনকে জালে জড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিদিন; মানুষের হুঁশকে প্রতিদিন যান্ত্রিক করছে, তার গল্প অনেক আছে।

সেদিন সকালে; মাদারস ডে ছিল বোধ হয়। তিতলিকে মা বলেছিল “বুকের ব্যথাটা বেড়েছে, রান্নাটা একটু করে দিবি মা” করেনি তিতলি, বরং বলেছিল, মাসে পঁচিশ দিন বিছানায় পড়ে থাকলে আমি কি রান্না করব নাকি? অথচ সেদিনই মায়ের ফোটো নিয়ে স্টেটাস দেয় তিতলি “হ্যাপি মাদারস ডে, মা”
ট্রেন্ড আরকি!

এইতো সেদিন, খুব খুঁজেপেতে মায়ের বইয়ের তাক থেকে বেছে বেছে একটা মোটা উপন্যাস বের করে ফোটো তোলে রাহুল, পোস্টে ক্যাপশন দেয় “খুব ভালো উপন্যাস”
আসলে বন্ধুদের দেখে ট্রেন্ড ফলো করছিল ও; নইলে “পাবজি” ছাড়া এসবে ওর বিশেষ আগ্রহ নেই।

সেদিন সকালে, ফেসবুকে সবার পোস্ট দেখতে দেখতে একটা লাইনে চোখ আটকে যায় বরুণের, লেখা “স্যরি, ফর লেট আপলোডস”
মানে জন্মদিনে আটাত্তরটা ছবি একদিন দেরি করে দেওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা! বড় অদ্ভুত লাগে ওর।

এটাও পড়তে পারেন: জানো? দেরি হয়ে গেছে

দিনের পর দিন এভাবেই বোধ হ্য় আমরা জীবনের ব্যক্তিগত গণ্ডি আর সামাজিক গণ্ডি মিশিয়ে দিচ্ছি ক্রমাগত, ট্রেন্ড ফলো করতে গিয়ে মেকি আর অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ছি, যন্ত্রকে চালিত করতে গিয়ে যন্ত্রচালিত হয়ে পড়ছি। একে অন্যের ব্যক্তিগত বৃত্তের মধ্যে অজান্তে বা জেনে অনধিকার প্রবেশ করতে গিয়ে অকারণে জটিলতা বাড়িয়ে ফেলছি না তো? ভেবে দেখবেন।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *