|| সায়ানাইড মল্লিকা ||
— তোর কী হয়েছে মা, কাঁদছিস কেন?
— হ্যাঁ… আপনি কে?
— আমি শিবের সেবা করি, ঠাকুরের পায়ের কাছেই আমার বাস।
— আমার বড় দুঃখ দিদি… আমি এই পোড়া জীবন চাইনা আর…
— কী হয়েছে? দিল খুলে বল আমায়… বল কী কষ্ট তোর?
— বিয়ের সাত বছর হয়ে গেলো, এখনও একটা পুত্রসন্তান জন্ম দিতে পারলাম না। তিনবারই পেটে মেয়ে এলো… সারাদিন স্বামী-সংসারের ঝাঁটা শুনতে হয়। আর পারছিনা… আমি আর পারছিনা…
— ছেলে চাই? একটাই পথ… মা মান্দালার পূজো দিতে হবে। মা মান্দালা সন্তুষ্ট হলে, পুত্রসন্তান দেবে অবশ্যই…
— অনেক পূজো করেছি, হাজার মন্দিরের সিঁড়ি ভেঙ্গেছি। কোনো ফল হল না… আর হবে না গো!
— মা মান্দালা কাউকে ফেরায় না। তুই পুত্র পাবিই পাবি…
— ঠিক বলছ? কী করতে হবে?
— শনিবার ঠিক সন্ধ্যে ৮-টায় চলে আয় আমার ঘরে। আমি যজ্ঞের আয়োজন করবো…
— অত রাতে? সকাল সকাল করা যায়না?
— মা মান্দালা অমাবস্যার রাতেই পূজো নেন। আর একটা শর্ত আছে…
— শর্ত? কী?
— কাউকে জানাবি না এই পূজোর কথা। মাকে গোপনে পূজো দিতে হয়…
— আচ্ছা… আমি চলে আসবো…
কে. ডি. কেম্পাম্মা ওরফে মল্লিকা, “ সায়ানাইড মল্লিকা ”। ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার। নয় বছরে ছ’টি খুন। কোল্ড ব্লাডেড। অস্ত্র সায়ানাইড।
জন্ম ১৯৬৫ সালে। সায়ানাইড মল্লিকার ছোটোবেলা সম্বন্ধে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়না। তবে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং খুব কম বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়। মল্লিকার স্বামী ছিল একাধারে মদ্যপায়ী এবং মারকুটে। কিন্তু এই আপাত দুঃখী মল্লিকার জীবনে নতুন মোড় আসে ১৯৯৮ সালে, যখন তাকে স্বামী ছেড়ে চলে যায়। স্বামী চলে যাওয়ার পর স্বভাবতই আর্থিক অনটনের স্বীকার হয় মল্লিকা। ছোটখাটো চুরি-চামারির চেষ্টা করলেও কখনই সড়গড় হতে পারেননি। কিন্তু চেপে না গিয়ে মল্লিকা বেছে নেয় মারাত্মক এবং রক্তাক্ত পথ।
সালটা ১৯৯৯। ব্যাঙ্গালোর শহর থেকে খানিক দূরে হস্কতে একটা প্রাচীন মন্দিরের সামনে আরাধনায় মত্ত ছিল বছর তিরিশের মমতা রাজন। মল্লিকার প্রথম ভিক্টিম। ভুলিয়ে-ভালিয়ে মন্দিরের পেছনে এনে মমতাকে খুন করে তার সর্বস্ব লুঠ করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি তুলনায় স্বাস্থ্যবতী মল্লিকাকে। সেই শুরু যার শেষ ২০০৭ সালের ১৮ই ডিসেম্বর। আর পাঁচটা সিরিয়াল কিলারের মতই প্রথম খুনটি প্ল্যানড্ ছিলনা মল্লিকার। তবে প্রথম খুনের পরই যেন একটা নেশা লেগে গেছিল। খুনের নেশা, লুঠের নেশা, কম সময়ে বেশি অর্থ উপার্জনের নেশা।
সায়ানাইড মল্লিকার মোডাস অপারেন্ডিতেও ছিল একটা চূড়ান্ত ভারতীয়ত্বের ছাপ। ব্যাঙ্গালোর শহরের অদূরে নির্জন মন্দিরগুলোকে টার্গেট করত মল্লিকা। তারপর সকাল থেকেই ভক্তের ছদ্মবেশে তিলক পড়ে, অনর্গল মন্ত্র জপ করার ফাঁকেই চলত নজরদারি। মন্দিরে কোন এমন মহিলা আসছেন, যার মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। অতঃপর শরীরে বেশ ভাল রকমের গয়নাগাটি পড়া ধোপদুরস্ত এমন মহিলার খোঁজ চলত যার কোনো শারীরিক বা মানসিক কষ্ট রয়েছে। টার্গেট ফিক্সড হলে, যারপরনাই তার সাথে সখ্যতা তৈরি এবং সব সমস্যা সমাধানের জন্য মা মান্দালার পূজো করার আহ্বান (ওপরের কথোপকথনে যার একটা আভাস পাওয়া যায়)। ভিক্টিম নির্ধারিত সময়ে পূজো করতে এলে, তাকে ঈশ্বরের পবিত্র প্রসাদ হিসেবে দুধে গুলে সায়ানাইড খেতে দেওয়া। তারপর সর্বস্ব লুঠ।
হারানো নাতিকে ফিরিয়ে দেওয়া বা হাঁপানির সম্পূর্ণ নিরাময় অথবা পুত্রসন্তান জন্ম হওয়ার প্রতিশ্রুতি। এই ধরনের বিভিন্ন জালে পড়েই ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সায়ানাইড মল্লিকার সাথে প্রাণ খুইয়েছেন জনা ছয়েক উচ্চবিত্ত বাড়ির গৃহবধূ। অবশেষে ২০০৭ সালে এক মহিলাকে মারার পর তার শরীর থেকে গয়না খুলে নেওয়ার সময় পুলিশের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে কুখ্যাত সায়ানাইড মল্লিকা। যদিও ২০০১ সালে একবার একটি চুরির ঘটনায় ছয়মাসের জেল খেটেছিল এই মল্লিকা। কিন্তু তখন ঘুণাক্ষরেও তার খুনের কীর্তির কথা পুলিশ টের পায়নি।
২০১২ সালে দায়রা আদালত সায়ানাইড মল্লিকাকে ফাঁসির সাজা দিলেও পরে হাইকোর্ট তা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেয়।
একটি মজার কথা হল, কদিন আগেই ব্যাঙ্গালোরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শশিকলার কারাবাস হয় এবং জেলে তার জন্য নির্ধারিত হয় সিরিয়াল কিলার সায়ানাইড মল্লিকার ঠিক পাশের সেলটা। দেশের প্রথম এবং অন্যতম মহিলা সিরিয়াল কিলার আজও জেলের ঘুপচি কুঠুরিতেই। কিন্তু আজও অজানা অনেক কিছুই। এরকম একজন ‘ সাধারণ ‘ মহিলা সায়ানাইড পেল কোত্থেকে আর কেনই বা সায়ানাইড হতে গেল মার্ডার ওয়েপন। জানা যাইনি কিছুই। সিরিয়াল কিলারদের মস্তিষ্ক ঠিক কতটা বিকৃত আর এই নিষ্ঠুরতার কারণই বা কি! কিছুই জানি না। জানার প্রয়োজন খুব, কারণ আর একটা মল্লিকা তৈরি হওয়ার আগেই রুখে দিতে হবে। মল্লিকা যেন একটা ইতিহাস হয়েই থাকে। কালো ইতিহাস। যার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
The vibrant city of Kolkata is set to host an extraordinary musical event as renowned Indian music…
In a heartwarming ode to friendship and the unifying spirit of Pujo, SVF Brands has…
The year 2024 has not been what I had planned so far. Everything went downhill.…
Following the resounding success of the inaugural edition, SVF Musicproudly announces the arrival of the…
Amidst ongoing speculations regarding the leading lady opposite Shakib Khan in the upcoming film 'Toofan',…
This article originally appeared in DC Journal: https://dcjournal.com/why-does-a-rich-chicago-law-firm-keep-suing-indian-tribes/ Why does a deep-pockets Chicago law firm keep…
This website uses cookies.