নাহ্ !এভাবে বাড়ী থেকে বেরিয়ে আসা টা ঠিক হলোনা।চেনা জায়গাটাও কি অন্যরকম লাগছে!অথচ আজ নাকি থার্টি ফার্স্ট! ফোন টা বন্ধই থাক, কাল যদি সকালে দরকার হয় অন করবো।এমনিও চার্জ শেষ হয়ে আসছে। তাছাড়া বাবা ফোন করবে না জানি।
এসব ভাবতে ভাবতে তিতাস এগিয়ে যায়। পার্টি করতে টাকা না দেওয়ায়, সে বাড়ী ছেড়ে ঝগড়া করে বেড়িয়ে গেছে। তিতাসের বাবা এলাকার নামকরা ব্যবসায়ী তবুও মেয়েকে এসব বাজে খরচে টাকা দিতে তিনি একেবারেই নারাজ।
তিতাস ভেবে পায় না কি করবে। সাথে গীটার ছাড়া আর কিছু নিয়ে আসেনি। ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।
ভাবে আজ মা থাকলে এরকম কখনও হতো না।
“কি ব্যাপার মেডাম! আপনি এখানে?” একটা ভাঙা গলার আওয়াজ।
তিতাস একটু হকচকিয়ে যায়।
“আপনি চেনেন আমাকে?”ভয়ে ভয়েই বলে।
” আপনাকে কে না চেনে এখানে! আপনি তো শশী সাহেবের মেয়ে?”
“ওহ্”! লোকটি কে দেখে খুব একটা খারাপ মনে হচ্ছে না। তিতাসের বাবার বয়সীই হবে।মনে হয় কাছের বসতির বাসিন্দা।
তিতাস কে কিছুক্ষন দেখে লোকটি বলল,
‘বাড়ী থেকে রেগে বেড়িয়ে এলে এভাবে? ভাবলেও না তোমার বাবার মনে কি অবস্থা হতে পারে! সত্যি তোমারা আজকালকার বাচ্ছারা!!
‘মানে? আপনি এসব কি করে জানলেন? আমাকে ফলো করছিলেন ?? ‘ তিতাসের গলায় ভয়।
” জানি জানি! কোনও ভদ্র বাড়ীর মেয়েই এতরাতে এভাবে ঘুরে বেড়াবে না কোনও সমস্যা না হলে। চলো তুমি আমার সাথে।”লোকটি যেন আদেশের সুরেই বললো।
‘দেখুন আমি বাড়ী যাবোনা। আপনি যেতে পারেন। আমার ব্যবস্থা আমি করে নেবো।’
এরপর তিতাসকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলে ” শোন মেয়ে বেশি জেদ ভালো নয়। জায়গা টা কেমন দেখতেই তো পাচ্ছো। আমি এভাবে আমার মেয়ের মতো কাউকে বিপদে ফেলে একা চলে যেতে পারবো না।’
তিতাস আর না করেনি।
লোকটি ওকে নিয়ে গেল পাশের চুনা বস্তি তে ।এমনিতে অন্ধকারে মোড়া থাকে এই বস্তির অলি গলি। কিন্তু আজ!!!!
তিতাস বস্তির সামনে এসে হা করে দেখছে, কি সুন্দর রঙ বেরঙের কাগজ, আলো দিয়ে পুরো বস্তি সাজিয়েছে। চারিদিকে আলোয় ঝলমল করছে। ওদিকে এক কোনে আবার জলসাও বসেছে , পাড়ার মেয়ে বউ রা নাচছে , গান করছে। বাচ্ছারা বাজি পোড়াচ্ছে। কত বেলুন ,ফানুস উড়ছে। এ যেন এক রুপকথা!
” কি দেখছো!??? বলেছিলাম না ভালো লাগবে তোমার । “লোকটি বলে ওঠে।
তিতাস মনে মনে লোকটিকে ধন্যবাদ জানায়। সত্যি এখানে না আসলে ওর জানায় হতো না যে রাতভর পার্টি না করেও,
মদ না গিলেও বছরের শেষ রাত টাকে স্বরনীয় করা যায় ।
এরপর লোকটি কিছু খাবার নিয়ে আসে তিতাসের জন্য কিন্তু একি কোথায় সে? চলে গেল তাহলে!
নাহ্!!
হঠাৎ চোখে পড়ে জলসার আসর টা। গীটার হাতে তিতাস, সবাই ঘিরে ধরে তার গান শুনছে।
তার গলায় তখন,
” কেনো মেঘ আসে হৃদয় আকাশে,আমারে দেখিতে দেয় না।”….