প্রেমে পড়ার বা ভালোবাসার আবার আলাদা দিন হয় নাকি? ওসব যত ভুলভাল ন্যাকামো। এর থেকে ঘরে বসে বিরিয়ানির সাথে প্রেম অনেক বেটার। ধোকা খাওয়ারও ভয় নেই!
তিন বছর আগেও তৃষা এই কথা গুলোই ভাবতো। তৃষা মল্লিক। ফিসিক্স অনার্স, তৃতীয় বর্ষ।
মেয়েটা কিছুটা খামখেয়ালী প্রকৃতির ছিলো। প্রেমে কখনোই বিশ্বাস নেই । ওর কাছে ভালোবাসা জাস্ট টাইম ওয়েস্ট। তাই বন্ধুরা যখন ওকে নিজেদের লাভ স্টোরি শোনাতো ও তখন নিউজ ফিডে মনোনিবেশ করতো।
কিন্তু এই মেয়ের মধ্যেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগে একজন কে দেখে। তার কারনটা হলো রিষভ। সদ্য চাকরী জয়েন করা রিষভ তৃষার দাদার বন্ধু।
প্রথম দেখাতে তৃষার তেমন কোন অনুভুতি না জাগলেও রিষভ কিন্তু দুর্বল হয়ে গেছিলো তৃষার মায়াবী চোখের চাহনিতে।
তারপরে বেশ কিছুদিন যাতায়াত চলে । কথা শুরু হয়। তৃষাও যেন কোথাও হারিয়ে যায় রিষভের মাঝে।
শুধু বন্ধু নয় এখন ওরা। এ জন্য অবশ্য তৃষা অনেকের ঠাট্টা ইয়ার্কির স্বীকার হচ্ছে। যার প্রেমে আ্যলার্জী ছিলো একসময়, আর সে কিনা পড়েছে তারই দাদার বন্ধুর প্রেমে ! ভাবা যায়!
এভাবে ভালোই সব চলছিলো। সামনে ভ্যালেনটাইন্স ডে। তৃষার জীবনে এসব প্রথম। তাই ও খুব এক্সাইটেড্ও। ইতিমধ্যেই রিষভের পছন্দের লেখকের একটা বই কিনে ফেলেছে । ওই দিন উপহার দেবে বলে।
অবশেষে এলো ১৪ই ফেব্রুয়ারী। রিষভের সাথে ফোনে কথা হয়েছে শুধু । তৃষা জানায়নি ওর সারপ্রাইজের কথা। রিষভ ওকে বলেছিলো আমার জন্য একদিন নয় ৩৬৫ টা দিনই ভালোবাসার। তাই এসব নাটক তার পোষায় না। তা ছাড়া ওই দিন বাড়ীতে কেউ থাকবেনা, সব তাকেই সামলাতে হবে।
তৃষা তো ছেড়ে দেবার পাত্রী নয় । দেখা তো করবেই। বিকেল পাঁচটার সময় একটা নীল চুড়িদার পড়ে বেরোলো । ওকে যেন বেশী সুন্দর লাগছিলো। দাদার কাছ রিষভ কোথায় থাকে ও জেনেছিলো একবার। সেই রাস্তা ধরেই এগোল । খুঁজে পেতে সমস্যা হলেও রিষভ কে জানায়নি ও । তাহলে তো সব মজা নষ্ট হয়ে যাবে।
অবশেষে রিষভের বাড়ী খুঁজে পায় ও।বাড়ীতে কেউ ছিলো না সে সময় । গুটি গুটি পায়ে ওপরের ঘরে যায় তৃষা ।না দরজা লক নেই । দুটো ঘরে দেখে কেউ নেই। এবার যায় আরেক টা ঘরে ।রিষভ ওকে ফোনে আর ভিডিও কলে এই ঘর টা দেখিয়েছে বহুবার । চিনতে অসুবিধে হয় না।
দরজা ঠেলতেই যা দেখে তাতে তৃষা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। কমপক্ষে দু মিনিট ওর দৃষ্টিশক্তি আটকে ছিলো অগোছালো খাটের ওপর।
রিষভের জন্য আনা বইটা মেঝেতে ফেলে পা বাড়ায় সে। তখন কারও কথা ওর কানে পৌঁছাচ্ছে না। রিষভ তখন খাটের ওপর জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা তার নগ্ন প্রেমিকা কে ছেড়ে ফোন করে তৃষা কে। ফোন তোলে না কেউ শুধু কলার টিউন টা বেজে ওঠে বারং বার ” তবু মনে রেখো”।